এক আদিবাসী মহিলাকে ডাইনি অপবাদ দিয়ে তাঁর পরিবারের সদস্যদের মারধরের অভিযোগ উঠল তাঁরই পরিজনদের বিরুদ্ধে।
বৃহস্পতিবার রাতে মহম্মদবাজার থানার হরিণসিঙা গ্রামের ওই ঘটনায় জখম হয়ে মহিলার দুই ছেলে বর্তমানে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। ঘটনার রাতেই খবর পেয়ে পুলিশ গ্রামে পৌঁছেছিল। কিন্তু, ততক্ষণে অভিযুক্তেরা পালিয়েছে। শুক্রবার ওই ঘটনায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছে পরিবার। এফআইআর-এ নির্যাতিতার মহিলার ভাসুর, ভাসুরের দুই ছেলে, নন্দাই এবং নন্দাইয়ের জামাইয়ের নাম রয়েছে। অভিযুক্তেরা যাবতীয় অভিযোগ অস্বাকীর করেছেন। পুলিশ জানিয়েছে, অভিযোগের তদন্ত শুরু হয়েছে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রের খবর, মহম্মদবাজারের পাথর শিল্পাঞ্চলের ওই গ্রামে নির্যিতাত ওই মহিলা তাঁর স্বামীর সঙ্গে বাস করেন। তাঁদের বাড়ির পাশেই বাড়ি মহিলার এক ভাসুরের। তাঁদের কয়েকটা বাড়ির পরেই বাস করেন তাঁর এক ননদও। বেশ কিছু দিন ধরে রোগে ভোগার পরে মাসখানেক আগে ওই ননদের মেজ মেয়ে মারা যান। নির্যাতিতা মহিলার অভিযোগ, ‘‘ননদের মেয়ে অসুখে পড়ার পর থেকেই আমাকে ননদ, নন্দাই, ভাসুরের পরিবার ডাইনি অপবাদ দিয়ে আসছে। এর আগে ডাইনি অপবাদ দিয়ে ওরা আমাকে মারতেও এসেছিল। ভাগ্নির মৃত্যুর পর থেকেই ওরা আমাকে আরও বেশি করে ডাইনি অপবাদ দিয়ে আসছে।’’ তাঁর দাবি, বৃহস্পতিবার রাত ৭টা নাগাদ অভিযুক্তেরা তাঁর বাড়িতে চড়াও হয়। মহিলার দুই ছেলে ঘরের ভিতরে দরজা বন্ধ করে তাঁকে রক্ষা করার চেষ্টা করেন। অভিযুক্তেরা বেলচা, লাঠি দিয়ে তাঁর দুই ছেলেকে মারধর শুরু করে। স্বামী ছুটে এলে তাঁকেও কিল, ঘুসি মারা হয়। ওই মহিলা বলেন, ‘‘আমি ভয় পেয়ে সঙ্গে সঙ্গে ফোনে পুলিশকে খবর দিই। পুলিশ আসার খবরে ওরা পালিয়ে যায়। ঘণ্টাখানেকের মধ্যে পুলিশ আসে। কাউকে না পেয়ে ফিরে যায়। রাত ৯টা নাগাদ দুই ছেলেকে সিউড়ি সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।’’
এ দিকে, অভিযুক্ত নন্দাইয়ের দাবি, তাঁরা বৌদিকে কখনই ডাইনি অপবাদ দেননি। এমনকী, মারধর করার অভিযোগও মিথ্যা। তাঁর স্ত্রীর দাবি করেন, ‘‘ছোট বৌদিই মাঝে মধ্যে মেয়ের মারা যাওয়া নিয়ে আমাদের নানা ভাবে খোটা দিত। ঘটনার দিন আমাকে গালিগালাজ করছিল। প্রতিবাদ করায় বৌদির সঙ্গে আমার বাক-বিতণ্ডা শুরু হয়।’’ তারই জেরে বৌদির দুই ছেলে তাঁর উপরে চড়াও হয় বলে অভিযুক্ত নন্দাইয়ের স্ত্রীর দাবি। অভিযুক্ত পরিবারের আরও দাবি, তাঁদের উপরে চড়াও হতে গিয়ে দুই ভাইপো নিজেরাই নাকি নিজেদের লাঠির ঘায়ে আঘাত পেয়েছে। অভিযুক্ত ভাসুরের আবার দাবি, ‘‘ঝাড়খণ্ডে আত্মীয়ের বাড়িতে গিয়েছিলাম। কিছুই জানি না।’’
ঘটনার কথা শুনে জেলা বিজ্ঞান মঞ্চের কার্যকরী সভাপতি জয় মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘সমাজের একাংশ এখনও কুসংস্কারে আচ্ছন্ন। শিক্ষিতদের অনেকেও সংস্কারমুক্ত হতে পারেননি। এর জন্য সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে সচেতনতামূলক প্রচার হওয়া প্রয়োজন।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy