Advertisement
০৩ মে ২০২৪

ত্রিপল চেয়ে বাড়ির টাকা পেলেন আদরি

বাড়ির চালের ফুটো ঢাকার জন্য বিডিও-র কাছে চেয়েছিলেন একটা ত্রিপল। বদলে পেলেন আস্ত বাড়ি তৈরির অনুদানের টাকা! যেন লটারি পেয়েছেন, এতটাই খুশি এখন আদরি বিবি।

ভাঙা: আদরি বিবি। নিজস্ব চিত্র

ভাঙা: আদরি বিবি। নিজস্ব চিত্র

অর্ঘ্য ঘোষ
লাভপুর শেষ আপডেট: ১৪ এপ্রিল ২০১৭ ০১:৩৬
Share: Save:

বাড়ির চালের ফুটো ঢাকার জন্য বিডিও-র কাছে চেয়েছিলেন একটা ত্রিপল। বদলে পেলেন আস্ত বাড়ি তৈরির অনুদানের টাকা! যেন লটারি পেয়েছেন, এতটাই খুশি এখন আদরি বিবি।

বেশ কিছুদিন ধরেই নিজের জীর্ণ বাড়ি নিয়ে চরম দুশ্চিন্তায় পড়েছিলেন পেশায় ভিক্ষাজীবী, লাভপুর ব্লকের বলরামপুর গ্রামের বাসিন্দা ৭৫ বছরের আদরি বিবি। কবেকার ঘর, খড়ের চাল পুরোপুরি পচে গিয়েছে। বৃষ্টির জলে গলে গলে ভেঙে পড়েছে দেওয়াল। যে কোনও সময় হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়তে পারে বাড়ি। নতুন বাড়ি তৈরি দূরের কথা, ভগ্নপ্রায় ওই চাল ছাওয়ানোর সামর্থ্য নেই তাঁর।

কয়েক দিন আগে তাই বিডিও (লাভপুর) জীবনকৃষ্ণ বিশ্বাসের কাছে গিয়েছিলেন একটি ত্রিপলের জন্য। বৃদ্ধাকে নিজের চেম্বারে ডেকে বিডিও সব শোনেন। জানাতে পারেন, ওই বাড়ি ভেঙে ফেলা না হলে চাপা পড়ে দুর্ঘটনার আশঙ্কা সত্যিই রয়েছে। তার পরেই বিডিও ওই ভিক্ষাজীবীর নামে সংখ্যালঘু আবাসন প্রকল্পে অর্থ বরাদ্দ করেন। যা ওই বৃদ্ধার টানাটানির সংসারে হাসি ফিরিয়েছে। বছর পনেরো আগে স্বামীকে হারিয়েছেন আদরি বিবি। দুই ছেলের আলাদা সংসার। পাঁচ মেয়ের বিয়ে দিতে গিয়ে ঘটি-বাটিটুকু পর্যন্ত বিকিয়ে গিয়েছে। জমিজমাও নেই। তার উপরে দুই ছেলেমেয়ে নিয়ে স্বামী বিচ্ছিন্না হয়ে ফিরে এসেছে এক মেয়ে। মানুষ করেছেন ছেলের ঘরের এক নাতনিকেও। ছেলেদের সংসারে মায়ের ঠাঁই না হলেও সেই নাতনিটিকে অবশ্য নিজের কাছেই রেখেছেন ওই বৃদ্ধা। বার্ধক্য ভাতা আর ভিক্ষা করেই কোনও রকমে জোড়াতালি দিয়ে চলে তাঁদের ৫ সদস্যের সংসার।

এমন অবস্থায় আবাসন প্রকল্পে ৭০ হাজার টাকা অনুদানের কথা জেনে খুবই খুশি আদরি ও তাঁর মেয়ে রূপালি বিবি। প্রথম দফায় ৩৫ হাজার টাকা পেয়েও গিয়েছেন বৃদ্ধা। সেই টাকায় মাটির বাড়ি ভেঙে শুরু হয়েছে নতুন বাড়ি তৈরির উদ্যোগ। রূপালি জানান, বৃষ্টি হলেই চালের ফুটো বেয়ে জল পড়ে। দেওয়াল কখন হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়ে, সেই আশঙ্কায় রাতে ঘুমাতে পর্যন্ত পারতেন না। ‘‘বিপদ মাথায় করেই থাকতে হত আমাদের। বিডিওসাহেব আমাদের বিপদের হাত থেকে বাঁচিয়ে দিলেন।’’—বললেন রূপালি বিবি। একই কথা বলছেন তাঁর মা। ‘‘ত্রিপল চাইতে গিয়ে যে বাড়ি তৈরির টাকা পাবো তা ভাবতেও পারিনি। বিডিও সাহেবের জন্য সেটা সম্ভব হল।’’

বিডিও-র কথায়, ‘‘এমনিতেই অপ্রয়োজনে অনেকের ত্রিপল নেওয়ার প্রবণতা রয়েছে। তাই ওই ভিক্ষাজীবীর আদৌ ত্রিপলের প্রয়োজন আছে কিনা, তা খোঁজ নিতে গিয়েই জানতে পারি, তাঁরা বিপজ্জনক বাড়িতে বাস করেন। তখনই বাড়ি তৈরির অনুদান বরাদ্দের সিদ্ধান্ত নিই।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Elderly lady House Money Building
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE