Advertisement
E-Paper

ফের হাতির হানায় মৃত্যু, ক্ষোভে মার

হাতির হানায় বাঁকুড়া জেলায় যেন মৃত্যু মিছিল চলছে! মঙ্গলবার সকালে বিষ্ণুপুরের বীরসা মুন্ডা হল্ট স্টেশনের কাছে এক দাঁতালের সামনে পড়ে মৃত্যু হল বৃদ্ধ চপল লোহারের (৭০)।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৯ মার্চ ২০১৭ ০০:৫৯
দেহ: বিষ্ণুপুরের পানশিউলি গ্রামের জঙ্গলে। ছবি: শুভ্র মিত্র

দেহ: বিষ্ণুপুরের পানশিউলি গ্রামের জঙ্গলে। ছবি: শুভ্র মিত্র

হাতির হানায় বাঁকুড়া জেলায় যেন মৃত্যু মিছিল চলছে! মঙ্গলবার সকালে বিষ্ণুপুরের বীরসা মুন্ডা হল্ট স্টেশনের কাছে এক দাঁতালের সামনে পড়ে মৃত্যু হল বৃদ্ধ চপল লোহারের (৭০)। এ নিয়ে গত এক সপ্তাহে এই জেলায় হাতির হামলায় তিন জনের মৃত্যু হল। গত কয়েক মাস ধরে এই জেলায় হাতির হানায় মৃত্যুর ঘটনা থেমে থাকলেও ফের তা শুরু হয়েছে। তাতে ক্ষোভ ছড়াচ্ছে এলাকায়। বিষ্ণুপুর রেঞ্জের চৌকান বিটে ঘটনাটি ঘটলেও আশেপাশের ক্ষুব্ধ জনতা বাসুদেবপুরে পিলখানা ও লাগোয়া হুলাপাটির ব্যারাকে হামলা চালায়।

স্থানীয় সূত্রে খবর, চপলবাবু থাকতেন বিষ্ণুপুরের পানশিউলি গ্রামে। সেখানেই রেশন দোকানে তিনি কাজ করতেন। এ দিন তিনি পানশিউলি থেকে সাইকেলে নিজের গ্রামের বাড়ি জয়পুর থানার রাজগঞ্জে যাচ্ছিলেন জঙ্গলের পথ ধরে। হঠাৎই তিনটি হাতির সামনে পরে যান তিনি। একটি দাঁতাল চপলবাবুকে শুঁড়ে পাকিয়ে ছুড়ে গিয়ে থেঁতলে দেয়। মৃত চপলবাবুর স্ত্রী রবি লোহার কাঁদতে কাঁদতে বলছিলেন, ‘‘দিনের বেলাতেই হাতিরা সুস্থ মানুষটাকে এক লহমায় শেষ করে দিল! আমি ভেসে গেলাম।’’

ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, শাল জঙ্গলে রাস্তা থেকে খানিকটী দূরে ঝোপের মধ্যে পরে রয়েছে দেহটি। সাদা ধুতি-ফতুয়া রক্তে ভেজা। মৃতের পড়শি বামাপদ বারিক, নিরঞ্জন লোহার, সাধন চন্দ্রদের সঙ্গেই আশপাশের তিরবঙ্ক, বাঁধগাবা, চুয়াশোল, বাসুদেবপুর, কানগোড়, শিরোমণিপুর থেকে আসা লোকজন হাতি নিয়ন্ত্রণে বন দফতর ব্যর্থতার অভিযোগে ক্ষোভে ফুঁসছিলেন। তাঁরা বলছিলেন, ‘‘কয়েকশো ফুট দূরেই হাতি তাড়ানোর হুলাপাটির ক্যাম্প, পাশেই পিলখানাতে তিনটি কুনকি হাতি রয়েছে। তাঁরা কি খবর পাননি এখানে হাতিরা ঢুকে পড়েছে? তাঁরা তো স্থানীয়দের সতর্ক করতে পারতেন।’’

আরও পড়ুন: ক্ষতিপূরণ চেয়ে মৃত চাষির স্ত্রী প্রশাসনে

হুলাপার্টির ব্যারাকে হামলা যখন হয়, তখন সেখানে ছিলেন হুলাকর্মী নূর ইসলাম মণ্ডল। তাঁর অভিযোগ, ‘‘২০-২৫ জন রড , বাঁশ, লাঠি দিয়ে হামলা চালায়। মারধর খেলেও বলেন কোনও রকমে পালিয়ে বাঁচি। কিন্তু ওরা আমার মোটরবাইকটা ভাঙচুর করে।’’ তিনি জানান, মারধরে আহত হয়েছেন আরেক হুলা কর্মী আবদুল রজ্জক বায়েন, কুনকি হাতির মাহুত অপু রায়। তাঁদের স্বাস্থ্যকেন্দ্রে প্রাথমিক চিকিৎসা করা হয়।

বনকর্মীরা অবশ্য হাতি তাড়ানোর ক্ষেত্রে তাঁদের বিরুদ্ধে ওঠা নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ মানতে চাননি। তাঁদের দাবি, দলমা থেকে আসা হাতির বড় দলটিকে রাত-ভোর পাহারা দিয়ে তাঁরা বিষ্ণুপুর বনাঞ্চল পার করিয়েছেন ক’দিন আগে। দলছুট কয়েকটা হাতি এরইমধ্যে ঢুকে পড়েছিল। তাদেরও দ্বারকেশ্বর নদ পার করে মেদিনীপুরের দিকে পাঠিয়েছেন তাঁরা। কিন্তু সোমবার রাতে যে তিনটে হাতি গভীর রাতে বিষ্ণুপুর রেঞ্জে ঢুকে পরেছে, সে খবরটা তাঁদের কাছে ছিল না। না হলে মঙ্গলবারের এই দুর্ঘটনা হয়তো তাঁরা এড়াতে পারতেন।

ডিএফও (বিষ্ণুপুর পাঞ্চেত) নীলরতন পান্ডা বলেন, ‘‘মনে হচ্ছে বেলিয়াতোড়ে পর পর দু’জনকে মেরে আসা দাঁতালটি আমাদের এলাকায় ঢুকে এ দিন হামলা চালিয়েছে। এই হাতি টিকে ‘টি ২’ নাম দেওয়া হয়েছে। মানুষ দেখলেই সে দ্রুত তাড়া করছে।’’ তিনি জানান, বাসুদেবপুর বিটের বড় গুরামির জঙ্গলে হাতিটিকে তিনটি হুলা পাটির দল ঘিরে রেখে নজর রাখছে। তিনি জানান, মৃতের পরিবার নিয়মানুযায়ী আড়াই লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ পাবেন।

Elephant Elderly Man Death
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy