উত্তাল: বধূর শ্বশুরবাড়িতে আসবাবপত্র থেকে মোটরবাইক ভাঙচুর করে কুয়োয় ফেলে দেওয়া হয়। পরে দমকল কর্মীরা এসে কুয়ো থেকে জিনিসপত্র উদ্ধার করেন। ছবি: অভিজিৎ সিংহ
বধূর অস্বাভাবিক মৃত্যুতে দেহ আটকে রেখে শ্বশুরবাড়ি লন্ডভন্ড করে দিল উত্তেজিত জনতা। মোটরবাইক, সোফাসেট-সহ বিভিন্ন আসবাব ফেলে দেওয়া হয় কুয়োয়। শুক্রবার সকালে বাঁকুড়ার রাজগ্রামের ঘটনা। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে প্রায় ঘণ্টা খানেক ধরে হিমশিম খায় পুলিশ।
পুলিশ সুপার সুখেন্দু হীরা বলেন, ‘‘নিহতের বাপের বাড়ির লোকেদের অভিযোগের ভিত্তিতে পাঁচ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ধৃতদের পরিবারের অভিযোগের ভিত্তিতে ভাঙচুরের ঘটনার তদন্তও শুরু হয়েছে।’’
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বৃহস্পতিবার গভীর রাতে রাজগ্রামের শ্যামডাঙার বধূর রূপালি লোহ-র (২৪) শ্বশুরবাড়ি থেকে তাঁর বাপের বাড়িতে ফোন যায়। স্বামী বিদ্যুৎ লোহো ফোনে দাবি করেন, রূপালির দেহ সিঁড়ির জানালার গ্রিল থেকে ঝুলতে দেখা গিয়েছে। খবর পেয়ে ভোর রাতেই ছাতনার বৈদ্যপাড়া থেকে শ্যামডাঙায় চলে আসে রূপালির বাপের বাড়ির লোকজন। তাঁরা অভিযোগ তোলেন, রূপালিকে খুন করা হয়েছে। ততক্ষণে সেখানে পৌঁছে গিয়েছে পুলিশ।
বছর পাঁচেক আগে শ্বশুরবাড়িতেই বিদ্যুতের দাদা নরহরি লোহ-র স্ত্রীর অপমৃত্যু হয়েছিল। তখনও বধূ খুনের অভিযোগ উঠেছিল ওই পরিবারের বিরুদ্ধে। গ্রেফতার হয়েছিলেন কয়েকজন। তবে এখন সবাই ছাড়া পেয়ে রয়েছেন। শুক্রবার ভোরে খবর কানে জেতেই এলাকার লোকজন বিদ্যুৎদের বাড়ির সামনে ভিড় জমাতে শুরু করেন। উত্তেজিত জনতাও ওই পরিবারের কড়া শাস্তির দাবি তুলতে শুরু করে। কিছুক্ষণের মধ্যেই উত্তেজিত জনতা বাড়িতে ঢুকে ভাঙচুর শুরু করে। পরিস্থিতি হাতের বাইরে যেতে পারে বুঝে এলাকায় কমব্যাট ফোর্স নিয়ে আসা হয়।
উত্তেজিত জনতাকে লাঠিচার্জ করে সরিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে পুলিশ ও কমব্যাট ফোর্স। ছবি: অভিজিৎ সিংহ
সুইচবোর্ড উপড়ে, আসবাব ভেঙে তছনছ করে ফেলা হয়। আলমারি, ফ্রিজ, টিভি, কম্পিউটার তুলে এনে ফেলে দেওয়া হয় কুয়োয়। এমনকী একটি সাইকেল, তিনটি মোটরবাইকও কুয়োয় নিয়ে ফেলা হয়। কুয়োর কানা পর্যন্ত আসবাব জমে ওঠে। ওই পরিস্থিতিতে উত্তেজিত জনতাকে রুখতে পুলিশ লাঠিচার্জ করে বলে অভিযোগ। যদিও লাঠিচার্জের কথা অস্বীকার করেছে পুলিশ। ঘটনাস্থলে যান ডিএসপি (শৃঙ্খলা ও প্রশিক্ষণ) আশিস সুব্বা, বাঁকুড়া সদর থানার আইসি রাজর্ষি দত্ত।
ঝামেলার মাঝেই চম্পট দেন মৃতার শ্বশুর সদানন্দ লোহো ও ননদ মণিকা দাস। মৃতার স্বামী বিদ্যুৎ, শাশুড়ি অশোকা লোহো, ভাসুর নরহরি, দেওর বিশ্বরূপ ও বিশ্বরূপের স্ত্রী পুজারানিকে আটক করে থানায় নিয়ে যায় পুলিশ। পরে গ্রেফতার করা হয়। উদ্ধার করে নিয়ে যাওয়া হয় রূপালির দেহ। পরে দমকল কর্মীরা গিয়ে কুয়ো থেকে আসবাব তোলেন। মৃতার পরিবার বাঁকুড়া সদর থানায় শ্বশুরবাড়ির ন’জনের বিরুদ্ধে খুনের অভিযোগ দায়ের করেন।
এ দিন থানা চত্বরে দাঁড়িয়ে মৃতার মা চন্দনা দাস জানান, বছর তিনেক আগে সম্বন্ধ করেই বিদ্যুতের সঙ্গে রূপালির বিয়ে হয়েছিল। ওই দম্পতির ন’মাসের একটি শিশু সন্তানও রয়েছে। চন্দনাদেবী জানান, বিয়ের সময়ে পাত্রপক্ষের চাহিদা মতো লক্ষাধিক টাকা পণ ও আরও আসবাবাপত্র দিয়েছিলেন তাঁরা। রূপালির বোন চাঁপা দাস বলেন, “শ্বশুরবাড়িতে নির্যাতন করা হচ্ছে বলে দিদি মুখ ফুটে কখনও কিছু বলেনি। খুবই চাপা স্বভাবের মেয়ে ছিল। তবে ও যে ভাল নেই সেটা ওর হাবভাবেই আমরা টের পেতাম।”
পুলিশের জিপে বসে রূপালিদেবীর স্বামী বিদ্যুৎ অবশ্য খুনের অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, “আমরা কিছু করিনি। ও আত্মহত্যা করেছে। কিন্তু কেন এই কাজ করল কিছুই বুঝে উঠতে পারছি না।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy