মঙ্গলবারের ঘটনার পুনরাবৃত্তি বুধবারেও। বন্যপ্রাণ শিকার ও সাপ নিয়ে সাধারণ মানুষের অজ্ঞতা ও ভীতিকে পুঁজি করে লোক ঠকিয়ে রোজগার করার অভিযোগে ফের ধরা পড়লেন চার সাপুড়ে। এ দিন সিউড়ি ১ এর হুসনাবাদ গ্রামে সাপের খেলা দেখাতে এসে বন দফতরের কর্মী-আধিকারিকদের হাতে ধরা পড়েন সাপুড়েরা।
বন্যপ্রাণ আইনে যতই নিষেধাজ্ঞা থাক, এলাকায় গিয়ে বিষধর সাপ ধরে, সেগুলির বিষ দাঁত ভেঙে দিয়ে কিংবা বিষ-থলি উপড়ে নিয়ে খেলা দেখায় সাপুড়েরা। পাশাপাশি তাবিজ কবজ বিক্রি করে রোজগার কারাও পেশা সাপড়ুদের। এই কাজ করতে বীরভূমে এসে মঙ্গলবার ধরা পড়ছিলেন মুর্শিদাবাদ জেলার তিন সাপুড়ে। কেন লোক ঠকাচ্ছেন, এই অভিযোগ তুলে তিন জনকে ধরে বন দফতরের হাতে তুলে দেন সিউড়ি ২ ব্লকের রস্তানপুর গ্রামের বাসিন্দারা। বুধবার সেই একই কাজ করলেন হুসনাবাদ গ্রামের বাসিন্দারা।
এডিএফও বিজনকুমার নাথ বলেন, ‘‘অভিযুক্তদের গ্রেফতার করা হয়েছে। ধৃতদের নাম পবন মাল, লালন চন্দ্র এবং রাজকুমার মাল নামেই দুই ব্যক্তি রয়েছেন। প্রত্যেকের বাড়ি বোলপুর থানা এলাকায়। ধৃতদের কাছ থেকে উদ্ধার হয়েছে দুটি জীবন্ত কেউটে সাপ। ১টি গোখরো এবং পাঁচটি মেটে সাপ। উদ্ধার হওয়া সাপগুলির বিষের থলে উপড়ে নেওয়া হয়েছে। উদ্ধার করা সাপগুলিকে জঙ্গলে ছাড়া হলেও বেশি দিন সেগুলি বাঁচবে না।’’
বন দফতর ও এলাকা সূত্রে খবর, ভারতীয় বন্যপ্রাণ দুর্নীতি দমন শাখার সদস্য তথা শিক্ষক দীনবন্ধু বিশ্বাস সিউড়ি শহরেই বসবাস করেন। অজয়পুর স্কুলের ওই শিক্ষক বহু বছর ধরে সিউড়ি ও সংলগ্ন বন্যপ্রাণ এবং সাপেদের প্রতি অন্যায় নিয়ে সোচ্চার। কয়েক হাজার সাপ উদ্ধার করেছেন। মানুষকে বুঝিয়েছেন, সাপেদেরও এই পৃথিবীতে বাঁচার অধিকার রয়েছে। সাপুড়েরা সাধারণ মানুষের ভয়কে কাজে লাগিয়ে সাপ ধরেন এবং মোটা টাকার বিনিময়ে তাবিজ, মাদুলি বিক্রি সেটা অন্যায় আইনত দণ্ডনীয়। এতে এলাকায় এমন প্রচারের জন্যই সচেতনতা বেড়েছে।
এই কারণেই পরপর দু’দিন এলাকায় ঢুকে এভাবে বাসিন্দাদের হাতেই ধরা পড়লেন সাপুড়েরা। সাপুড়েরা অবশ্য দাবি করছেন, পেট চালাতেই এই কাজ করতে তাঁরা বাধ্য হয়েছেন। বন কর্তা এবং পরিবেশ প্রেমীদের আক্ষেপ, ধৃতদের বিরুদ্ধে বন্যপ্রাণ শিকার, জীববৈচিত্র্য নষ্ট করা এবং মিলিত অপরাধের ধারায় মামলা রুজু করে সিউড়ির সিজেএম আদালতে পেশ করা হলেও সঙ্গে সঙ্গে জামিন পেয়ে গিয়েছেন ধৃতেরা। মঙ্গলবার
মুর্শিদাবাদের তিন সাপুড়েও একই ভাবে জামিন পেয়ে গিয়েছেন। এমন হলে ভয়টা থাকবে না। অইনজীবীরা বলছেন, প্রথমত ধৃতদের হেফাজত থেকে জীবন্ত অবস্থায় সাপগুলিকে উদ্ধার করার কথা বললেও সাপগুলি কেন শীঘ্রই মারা যাবে সেই সব কথা উল্লেখ থাকছে না।
দ্বিতীয়ত, জামিনের বিরোধিতা করার জন্য সরকারি আইনজীবী থাকছেন না। তাই সহজেই জামিন পাচ্ছেন ধৃতেরা।