Advertisement
E-Paper

‘কোঁদল’ কাটল কেঁদুলিতে? কেষ্টর পা ছুঁয়ে কাজলের প্রণাম, মেলায় একসঙ্গে একই মঞ্চে ‘দাদা-ভাই’

প্রকাশ্যে দুই নেতা পরস্পরকে সম্মান জানান। নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে তাঁরা বলেন, বীরভূম তৃণমূলে কোনও গোষ্ঠীকোন্দল নেই। কিন্তু ঘটনাপরম্পরা ঠিক অন্য কথাই বলে।

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৩ জানুয়ারি ২০২৫ ২২:৩২
Anubrata Mondal and Kajal Sheikh

কেষ্টর পায়ে হাত কাজলের। মেলাল জয়দেব মেলা। —নিজস্ব চিত্র।

বিজয়া সম্মিলনীর অনুষ্ঠানে হয়নি। মিলনমেলাতেও ছিলেন না। দলনেত্রীর জন্মদিন পালনের অনুষ্ঠানেও তাঁরা ছিলেন আলাদা। বীরভূমে তৃণমূলের মধ্যে গোষ্ঠীকোন্দলের আঁচ যখন তীব্র হচ্ছে, তখনই একই মঞ্চে দেখা গেল তৃণমূলের জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল (কেষ্ট) এবং জেলা পরিষদের সভাধিপতি কাজল শেখকে। শুধু দেখা হওয়াই নয়, কেষ্টর পা ছুঁয়ে প্রণামও করলেন কাজল। কিছু ক্ষণ কথাবার্তাও বললেন তাঁরা। গোষ্ঠীকোন্দলের মাঝে দুই নেতার এই সৌজন্য বিনিময় ইঙ্গিতবহ।

অজয় নদের তীরে বাউল-ফকিরের গান, আখড়ায়-আখড়ায় কোলাহল, পুণ্যার্থীদের থিকথিকে ভিড়— সব মিলিয়ে চেনা ছবি দেখা যাচ্ছে জয়দেব-কেঁদুলির মেলায়। সোমবার ইলামবাজারের জয়দেবে মকর সংক্রান্তিতে মেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে একসঙ্গে দেখা গেল কেষ্ট এবং কাজলকে। মঞ্চে ভাষণ রাখলেন ‘দাদা’ কেষ্ট। হাততালি দিলেন ‘ভাই’ কাজল। মঞ্চ থেকে নামার সময় ‘দাদা’র পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করলেন ‘ভাই’।

বীরভূমের রাজনীতিতে কাজল বনাম অনুব্রতের ‘দ্বন্দ্ব’ তৃণমূল শীর্ষ নেতৃত্বের কাছে সুবিদিত। গত কয়েক মাসে সেই ‘দ্বৈরথ’ বার বার প্রকাশ্যে এসেছে। প্রকাশ্যে দুই নেতা পরস্পরকে সম্মান জানান। নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে তাঁরা বলেন, বীরভূম তৃণমূলে কোনও গোষ্ঠীকোন্দল নেই। কিন্তু ঘটনাপরম্পরা ঠিক অন্য কথা বলে। সেই বিজয়া সম্মিলনী থেকে দুই নেতাকে একই মঞ্চে দেখা যায়নি। দলের কোনও কর্মসূচিতে তাঁরা একসঙ্গে থাকেননি। দিন কয়েক আগে মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জন্মদিন উদ্‌যাপনেও ভিন্ন মঞ্চে ছিলেন জেলার তৃণমূল সভাপতি ও জেলা পরিষদের সভাধিপতি। দু’জনে নেত্রীর জন্মদিন উপলক্ষে কেক কাটেন। দুই নেতার দ্বন্দ্ব নিয়ে চাপানউতরের মধ্যে সোমবার কেঁদুলির মেলায় অন্য ছবি দেখা গিয়েছে। মেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠান থেকে কেষ্ট স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গিতে বলেন, ‘‘গত বছর আসতে পারিনি (জেলে ছিলেন)। এ বার জয়দেব মেলায় এলাম।’’ তাঁর সংযোজন, ‘‘জয়দেব মেলাকে অন্য ভাবে জনপ্রিয় করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মেলা জমে উঠেছে। সবাই আনন্দ করুন। এ বছর থেকে প্রতি বছর এই মেলায় ১০ লক্ষ টাকা করে দেবেন বলে ঘোষণা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। জয়দেব মেলাকে তিনি রাজ্য মেলা হিসাবে ঘোষণা করেছেন।’’ বস্তুত, অজয়ে প্রতি বার যে ভাবে মকর স্নান হয়ে এসেছে, সে ভাবে এ বারও ব্যবস্থা করা হয়েছে। মেলার মূল আকর্ষণ বাউল-ফকিরের গান। সেখানে জেলার দুই নেতা একই মঞ্চ থেকে কর্মীদের উদ্দেশে বার্তা দিলেন বলে মনে করা হচ্ছে।

গত বছরের সেপ্টেম্বরে কেষ্ট তিহাড় জেল থেকে বীরভূমে ফেরার পরে যখন দলে দলে নেতা এবং কর্মীরা তাঁর সঙ্গে দেখা করেছেন, কথা বলেছেন, সেই তালিকায় কাজল ছিলেন না। কারাবাসের সময়ে অনুব্রতকে জেলা তৃণমূলের সভাপতি পদ থেকে না-সরালেও জেলার রাজনীতি পরিচালনার জন্য একটি কোর কমিটি গঠন করে দিয়েছিলেন তৃণমূলনেত্রী মমতা। সেই কমিটি এত দিন বীরভূমের সাংগঠনিক কাজকর্ম দেখার পাশাপাশি পঞ্চায়েত এবং লোকসভা ভোট পরিচালনারও কাজ করেছে। অনুব্রতকে ছাড়াই কোর কমিটির নেতারা ওই দু’টি ভোটে বীরভূমে তৃণমূলের ‘আধিপত্য’ বজায় রেখেছেন। বস্তুত, ২০২৪ লোকসভা ভোটে দুই লোকসভায় জয়ের ব্যবধান গত বারের চেয়ে বেড়েছে। তাই বীরভূমের রাজনীতিতে অনুব্রত নিজের পুরনো জায়গা ফিরে পাবেন কি না, তা নিয়ে সন্দিহান অনেকে। গত কয়েক মাসে এলাকায় বোমাবাজি, মারামারি, অশান্তির ঘটনায় অনুব্রত এবং কাজলের গোষ্ঠীর নাম জড়াচ্ছে। সে দিক থেকে জয়দেব মেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে দুই নেতার উপস্থিতি ‘তাৎপর্যপূর্ণ’ বলে মনে করছেন অনেকে।

TMC Anubrata Mondal Kajal Sheikh Birbhum Joydev Kenduli
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy