Advertisement
E-Paper

আদর নেই, নামেই টিকে জামাইপাড়া

২৮ বছর আগে গাজীপুর গ্রামের পটল সরেনের সঙ্গে বিয়ে হয় বেলেড়ার ভগবতী সরেনের। বিয়ের পরে কিছু দিন তাঁরা ওই পাড়াতেই থেকে যান। পরে ওই গ্রামের কাছে একটি পুকুরধারে খাসজমির পাট্টা পান পটল। সেখানে বাড়ি করে চলে যান সেই দম্পতি। সেই থেকে শুরু।

অর্ঘ্য ঘোষ 

শেষ আপডেট: ০৩ মার্চ ২০১৯ ০৭:০০
এই আলপথেই যোগাযোগ দুই পাড়ার। নিজস্ব চিত্র

এই আলপথেই যোগাযোগ দুই পাড়ার। নিজস্ব চিত্র

ঢিলছোড়া দূরত্বে দু’টি পাড়া। আদিবাসী অধ্যুষিত মূল পাড়ার নাম বেলেড়া। এলাকার মানুষ সেটি চেনে শ্বশুরপাড়া নামে। লাগোয়া অন্য বসতির নাম জামাইপাড়া।

স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ময়ূরেশ্বর থানার ঢেকা পঞ্চায়েতের অন্তর্গত শ্বশুরপাড়ায় বর্তমানে ৬০টি পরিবারের বাস। অন্য পাড়ায় থাকেন ১৮টি পরিবার। দু’টি পাড়ার অধিকাংশ পরিবারের জীবিকা দিনমজুরি। হাতেগোণা কয়েক জনের সামান্য জমি রয়েছে। এক সময় ছোট ওই পাড়ার অস্তিত্ব ছিল না। ২৮ বছর আগে গাজীপুর গ্রামের পটল সরেনের সঙ্গে বিয়ে হয় বেলেড়ার ভগবতী সরেনের। বিয়ের পরে কিছু দিন তাঁরা ওই পাড়াতেই থেকে যান। পরে ওই গ্রামের কাছে একটি পুকুরধারে খাসজমির পাট্টা পান পটল। সেখানে বাড়ি করে চলে যান সেই দম্পতি। সেই থেকে শুরু।

তার পর থেকে একে একে বেলেড়ায় বিয়ের পরে বহিরাগত অনেক জামাই পাট্টা পাওয়া জমিতে বাড়ি তৈরি করে বসবাস শুরু করেন। বছর দশেক আগে মুর্শিদাবাদের মহিষগ্রামের নরেন কিস্কু বেলেড়ার বালিকা কিস্কুকে বিয়ে করে জুড়েছেন সেই জামাইয়ের দলেই। জামাইপাড়ার ১৮টি পরিবারের কর্তাদের সবার শ্বশুরবাড়ি পাশের পাড়াতেই।

ওই পাড়ার বাসিন্দাদের আজও প্রায় সব পরিষেবার জন্যেই শ্বশুরপাড়ার উপরে নির্ভরশীল হয়ে থাকতে হয়। কারণ জামাইপাড়ায় রয়েছে একটি মাত্র পানীয় জলের নলকূপ এবং বিদ্যুৎ। অঙ্গনওয়াড়ি, প্রাথমিক এবং উচ্চ প্রাথমিক স্কুল রয়েছে শ্বশুরপাড়ায়। মুদিখানার জন্যও জামাইপাড়ার বাসিন্দাদের শ্বশুরপাড়াতেই যেতে হয়।

অভিযোগ, দুই পাড়ার মধ্যে সংযোগকারী কোনও রাস্তা নেই। সরু আলপথই যোগাযোগের মাধ্যম। বর্ষাকালে ওই আলপথ দিয়ে যাতায়াত করতে জামাইপাড়ার বাসিন্দাদের বিশেষ করে পড়ুয়াদের সমস্যায় পড়তে হয়। জামাইপাড়ায় ১৮ জন এখন অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র, প্রাথমিক বা হাইস্কুলে পড়ে।

দ্বিতীয় শ্রেণির রাকেশ মাড্ডি, পাতামনি হাঁসদা বলে, ‘‘বর্ষাকালে আলরাস্তায় যাওয়ার সময় মাঝেমধ্যেই পা পিছলে পড়ে গিয়ে ইউনিফর্ম, বইখাতায় কাদা লেগে যায়। তাই নিয়েই ক্লাস করতে হয়।’’ গ্রামের প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক প্রফুল্ল মণ্ডল জানান, বর্ষায় জামাইপাড়ার পড়ুয়াদের স্কুলে আসতে খুব সমস্যা হয়।

নবম শ্রেণির মল্লিকা মাড্ডি, তুলসী সরেনর বলে, ‘‘সবুজসাথী প্রকল্পে সাইকেল পেয়েছি। কিন্তু আলপথে বর্ষায় কাদা থাকায় সাইকেল সেই সময় ব্যবহার করা যায় না।’’

জামাইপাড়ার পুরনো বাসিন্দা পটল সরেন, ভোলানাথ হেমব্রম জানান, প্রথম দিকে শ্বশুরবাড়ির সাহায্যে অন্য পাড়ায় বাড়ি করে বসবাস করতে শুরু করেছিলেন। নানা প্রয়োজনে এখনও তাঁদের তাকিয়ে থাকতে হয় শ্বশুরপাড়ার দিকেই।

মঙ্গলি হেমব্রম, ভগবতী সরেনের কথায়, ‘‘বিবাহিত মেয়েদের ঘন ঘন বাপের বাড়ি যাওয়া ভাল দেখায় না। কিন্তু আমাদের তো না গিয়ে উপায়ও নেই। সবই তো ওই পাড়াতে।’’

জামাইপাড়ার একমাত্র স্নাতক প্রভাত সরেন বলেন, ‘‘এখন আর শ্বশুরবাড়িতে জামাই আদর মেলে না। তবুও এ পাড়ার লোকেদের শ্বশুরপাড়াতেই বারবার যেতে হয়। কারণ সে ভাবে কোনও সরকারি পরিষেবা এ পাড়ায় নেই।’’

ঢেকা পঞ্চায়েতের উপপ্রধান তমোরেশ ভট্টাচার্য জানান, জায়গার অভাবে ওই পাড়ায় রাস্তা তৈরি করা যায়নি। জায়গা জোগাড় হলেই সমস্যা মেটানো হবে।’’ জেলা পরিষদের সভাধিপতি বিকাশ রায়চৌধুরী বলেন, ‘‘ওই পাড়ার কথা জানা নেই। খোঁজ নিয়ে কী ভাবে সরকারি প্রকল্পে সেখানে উন্নয়ন করা যায় তা দেখা হবে।’’

Colony Government Schemes
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy