সিউড়িতে বিক্ষোভ আশাকর্মীদের। নিজস্ব চিত্র
আবাস যোজনার তালিকায় নাম থাকা ব্যক্তি বাড়ি পাওয়ার যোগ্য কি না— প্রশাসনের পক্ষ থেকে তা সমীক্ষা করার দ্বায়িত্ব দেওয়া হয়েছে আশা, অঙ্গনওয়াড়ি কর্মী, সিভিক ও ভিলেজ পুলিশকে। কিন্তু সমীক্ষা করতে গিয়ে সমস্যায় পড়েছেন জেলার অনেক আশা ও অঙ্গনওয়াড়ি কর্মী। গ্রামে গিয়ে সমীক্ষা করার সময়ে তাঁদের প্রাণনাশের হুমকিও শুনতে হচ্ছে বলে অভিযোগ।
এরই প্রতিবাদে মঙ্গলবার নলহাটি ২ ব্লক অফিসে বিক্ষোভ দেখালেন তাঁরা। একই সমস্যা নিয়ে এ দিন সিউড়িতে, বীরভূম স্বাস্থ্যজেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক এবং জেলাশাসকের দ্বারস্থ হন পশ্চিমবঙ্গের আশা কর্মী ইউনিয়নের সদস্যেরা। তাঁরা মিছিল করে সিএমওএইচ অফিসে আসেন। সেখানে বিক্ষোভ দেখানোর পরে জেলাশাসককে স্মারকলিপি দেন। একই অভিযোগে রামপুরহাট সিএমওএইচ অফিসেও বিক্ষোভ দেখানো হয়। বিক্ষোভ হয় দুবরাজপুরেও।
তাঁদের বক্তব্য, সরকারের এই নির্দেশের ফলে তাঁদের প্রাণসংশয় হয়েছে। নানা হুমকি শুনতে হচ্ছে। কারণ, বাড়ি পেতে যে ১৫টি বিধির কথা বলা হয়েছে, তালিকায় নাম থাকা অনেকে তার মধ্যে পড়ছে না। এ নিয়ে ফর্ম পূরণ করার সময়ে আবাস যোজনার তালিকা থেকে নাম বাদ গেলে দেখে নেওয়ার হুমকি দেওয়া হচ্ছে। আশাকর্মীদের দাবি, কারও বাড়ি থাকলে লাল দাগ দিতে বলা হয়েছে। কিন্তু, তা করলে ওই ব্যক্তি-সহ স্থানীয় নেতারা ক্ষুব্ধ। আবার না করলে প্রশাসনের চাপ আসছে।
সমস্যা শুধু নলহাটি ২ ব্লকেই নয়, জেলার সমস্ত ব্লকে একই সমস্যা বলে জানিয়েছেন আশা ও অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীদের সংগঠন। তাই এ দিন সিউড়ি ও দুবরাজপুরেও তাঁরা বিক্ষোভ দেখিয়েছেন বলে সংগঠনের কর্তৃপক্ষ জানান।
নলহাটির আশা কর্মী মমতাজ বেগম বলেন, ‘‘ব্লকের আধিকারিকেরা পাঁচ বছর আছেন। আমাদের ষাট বছর পর্যন্ত কাজ করতে হবে। সমীক্ষা করতে গিয়ে আমাদের ভিলেন হতে হচ্ছে। এ কাজ কেন করব। বিডিওকে এই কাজ করব না বলে জানিয়েছি।’’ নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অনেক কর্মী জানিয়েছেন, নেতারা এমন অনেকের নাম তালিকায় রেখেছেন যাঁদের পাকা বাড়ি, মোটরবাইক এমনকি আগেও সরকারি বাড়ি রয়েছে। নিয়ম মেনে সমীক্ষা হলে অনেকের নাম তালিকা থেকে বাদ যাবে। এটা অনেকেই মানতে পারছেন না। তাঁদের বাড়ি সমীক্ষা করতে গিয়ে হুমকি শুনতে হচ্ছে। তাই এই সমীক্ষা থেকে অব্যাহতি চাইছেন আশা ও অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীরা।
বিডিও (নলহাটি ২) হুমায়ুন চৌধুরী বলেন, ‘‘আশা ও অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীরা সমীক্ষা নিয়ে সমস্যা কথা বলতে এসেছিলেন। তাঁদের কথা শুনে পুলিশ প্রশাসনকে প্রযোজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলা হয়েছে। আর কোনও সমস্যা হবে না।’’
আশাকর্মী সংগঠনের পক্ষে মাধবী সিংহ বলেন, ‘‘বীরভূম স্বাস্থ্য জেলায় কোনও ব্লকেই আশা কর্মীরা এ কাজ শুরু করেননি। অনেক লড়াই করে আটকে রাখা হয়েছে। আমরা চাই এই কাজে আমাদের যেন নিয়োজিত না করা হয়।’’
যদিও স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে খবর, বীরভূম স্বাস্থ্য জেলার সিউড়ি ১, মহম্মদবাজার, সাঁইথিয়া ব্লকে ইতিমধ্যেই কাজ শুরু করেছেন আশা কর্মীরা। বীরভূম স্বাস্থ্য জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক হিমাদ্রী আড়ি বলেন, ‘‘এটা সরকারের নির্দেশ। তবে আমি ওঁদের দাবিদাওয়া শুনেছি। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানাব।’’ আশা কর্মীরা স্বাস্থ্য সংক্রান্ত কাজ করে থাকেন। এ ধরনের কাজে কেন তাদের নিয়োগ করা হচ্ছে এবং বিনা পারিশ্রমিককে কেন এই সমীক্ষা করানো হবে— এমন দাবিও তোলা হয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy