Advertisement
E-Paper

সেচ খালে পড়ে গেল হস্তিশাবক

জন্ম থেকেই বন কর্মীদের তাড়া খেয়ে মায়ের সঙ্গে দৌড়ে বেড়াতে হচ্ছে তাকে। পালাতে গিয়ে বৃহস্পতিবার ভোররাতে হস্তিশাবকটি ওন্দার কৃষ্ণনগর বিটের শুশুনিয়া গোবিন্দপুর এলাকায় কংসাবতীর একটি সেচ ক্যানালে কোনও ভাবে পড়ে যায়।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১২ জানুয়ারি ২০১৮ ০০:২৩
পিছে-পিছে: মায়ের পা ঘেঁষে শাবক। নিজস্ব চিত্র

পিছে-পিছে: মায়ের পা ঘেঁষে শাবক। নিজস্ব চিত্র

বড় সড় বিপদ থেকে রক্ষে পেল ‘কাশীনাথ’। সাত দিন আগেই খাতড়া রেঞ্জের কাশীপুরের জঙ্গলে পৃথিবীর আলো দেখেছে সে। সেই সূত্রেই এলাকাবাসী ও বন দফতরের আধিকারিকদের কাছে ছ‌োট্ট হাতিটির নাম হয়ে গিয়েছে—কাশীনাথ। জন্ম থেকেই বন কর্মীদের তাড়া খেয়ে মায়ের সঙ্গে দৌড়ে বেড়াতে হচ্ছে তাকে। পালাতে গিয়ে বৃহস্পতিবার ভোররাতে হস্তিশাবকটি ওন্দার কৃষ্ণনগর বিটের শুশুনিয়া গোবিন্দপুর এলাকায় কংসাবতীর একটি সেচ ক্যানালে কোনও ভাবে পড়ে যায়। বারবার চেষ্টা করেও ফুট দশেকের বেশি গভীর ক্যানাল থেকে শাবককে তুলতে না পেরে মা হাতি ও তার সঙ্গীরা ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে। শেষে মেশিন নিয়ে এসে খালে মাটি ফেলে রাস্তা তৈরি করে দিয়ে সাত দিনের ওই শাবককে উদ্ধারের ব্যবস্থা করে বন দফতর।

সম্প্রতি ঝাড়গ্রাম থেকে রাইপুর হয়ে খাতড়া রেঞ্জের জঙ্গলে ঢুকে পড়ে দলমার হাতির একটি দল। বন দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, গত ৪ জানুয়ারি খাতড়ার কাশীপুর জঙ্গলেই জন্ম হয় হস্তি শাবকটির। সঙ্গীরা শিশুটির নিরাপত্তা নিয়ে সজাগ হয়ে উঠেছিল। সেই সময়ে খাতড়ার এক যুবককে জঙ্গলের ভিতরে সামনে পেয়ে একটি হাতি পিষে দেয়। বন কর্মীরা দলটিকে বিষ্ণুপুরের দিকে তাড়িয়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে।

হাতিগুলি বিষ্ণুপুর পাঞ্চেৎ বিভাগের ওন্দা রেঞ্জের জঙ্গলে ঢুকে পড়ে দু’টি দলে বিভক্ত হয়ে যায়। দলের দশটি হাতি রয়েছে ওন্দা রেঞ্জের ছাগুলিয়া বিটে। কাশীনাথ-সহ ছ’টি হাতির একটি দল বুধবার রাতে কৃষ্ণনগর বিটের জঙ্গলে ঢুকে পড়েছিল।

তারই মধ্যে বৃহস্পতিবার ভোররাতে কাশীনাথ শুশুনিয়া গোবিন্দপুর এলাকার কংসাবতীর একটি সেচ খালে কোনও ভাবে পড়ে যায়। বন দফতরের আধিকারিকেরা খবর পান, গভীর সেচ খাল থেকে কিছুতেই উপরে উঠতে পারছিল না শিশু হাতিটি। তার মা-সহ দলের অন্যান্য হাতিরা ঘিরে ফেলে গোটা এলাকা। কিন্তু শুঁড় বাড়িয়েও তারা কাশীনাথের নাগাল পাচ্ছিল না। ভয়ে হাতিরা চিৎকার শুরু করে।

সেই হাঁকডাকে ঘুম ভেঙে যায় এলাকাবাসীর। তাঁদের কাছ থেকে খবর পৌঁছয় ওন্দা রেঞ্জ অফিসে। কনকন ঠান্ডার মধ্যেও ক্যানালের পাড়ে ভিড় জমে যায় কয়েক হাজার মানুষের। সেই সেই ভিড় দেখে দলের অন্যান্য হাতিগুলি আরও ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে। ভিড় সামাল দিতে নাজেহাল হন ওন্দা রেঞ্জের অফিসার সুভাষচন্দ্র ঘোষ ও ওন্দা থানার পুলিশ কর্মীরা। ক্ষিপ্ত হাতিদের কাছে চলে গেলে বিপদ হয়ে যাবে বুঝে কৌতূহলী বাসিন্দাদের দূরে ঠেলে নিয়ে যায় পুলিশ।

মানুষে ছুঁলে শিশু হাতিদের দল কখনই ফেরত নেয় না। তাই মা হাতি যাতে ক্যানালে নেমে শিশুটিকে উদ্ধার করে আনতে পারে, সে জন্য পাড় থেকে মাটি ফেলে রাস্তা তৈরির সিদ্ধান্ত নেয় বন আধিকারিকেরা। খোঁজ শুরু হয় মাটি ফেলার গাড়ির। সেই গাড়ি এসে মাটি ফেলা শুরু হয় ক্যানালে। ঘিরে থাকে হাতির দল। ঘণ্টাখানেকের মধ্যে মাটি ফেলে রাস্তা তৈরি হয়ে যায়। গাড়ি সরে যেতেই সে দিকে এগিয়ে যায় মা হাতিটি। রাস্তা দিয়ে ক্যানালে নেমে হাতিটি বাচ্চাটিকে শুঁড় দিয়ে পাড়ে টেনে তোলে। উদ্ধারের পরেই কাশীনাথকে নিয়ে সটান জঙ্গলে চলে যায় দল।

কাশীনাথ উদ্ধার হওয়ার পরে স্বস্তির শ্বাস ফেলেন বন দফতরের কর্মীরা। সুভাষবাবু বলেন, “বাচ্চা হাতিটি ভালয় ভালয় উদ্ধার হয়ে যাওয়ায় আমরা স্বস্তি পেয়েছি। অনেক সময় মানুষের সংস্পর্শে এসে পড়লে হাতিকে আর দলে ফিরিয়ে নেয় না। তাই এ ক্ষেত্রে আমরা সতর্কতা নিয়েছিলাম। শেষ পর্যন্ত দল হাতিটিকে ফিরিয়ে নিয়েছে।’’

বন দফতরের কর্মীরা জানাচ্ছেন, পড়ে গিয়ে পায়ে চোট পেয়েছে কাশীনাথ। মানসিক ভাবেও আতঙ্কিত সে। সুভাষবাবু বলেন, “বাচ্চা হাতিটি শারীরিক ও মানসিক ভাবে সুস্থ না হওয়া পর্যন্ত আপাতত দলটিকে সরানোর অভিযান বন্ধ রাখা হচ্ছে।’’ তিনি জানাচ্ছেন, হাতিগুলি যাতে কোনওভাবেই আশপাশের গ্রামে ঢুকে পড়তে না পারে, সে জন্য হুলাপার্টি ও বন কর্মীরা তাদের ঘিরে রাখবে।

হস্তিশাবকটির উদ্ধার কাজ দেখতে গিয়েছিলেন স্থানীয় বাসিন্দা হেমন্ত মুর্মু, জগন্নাথ দে। তাঁরা বলেন, “বাচ্চা হাতিটিকে রক্ষা করতে অন্যান্য সব হাতিগুলি আপ্রাণ চেষ্টা চালাচ্ছিল। চারপাশ ঘিরেও রেখেছিল ওরা। কেউ কাছাকাছি যাওয়ার সাহস দেখাইনি।’’

Elephant Baby Elephant Canal
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy