—প্রতীকী চিত্র।
জেলার অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে ক্ষুদ্র, ছোট ও মাঝারি শিল্পকে পাখির চোখ করেছে জেলা প্রশাসন। অভিযোগ, এই লক্ষ্যপূরণে ব্যাঙ্কগুলির তরফে যতটা সাড়া পাওয়া উচিত, তা
মিলছে না।
অগস্ট-কে ক্ষুদ্র, ছোট ও মাঝারি শিল্পের মাস হিসাবে পালন করছে জেলা শিল্প দফতর। ১-১৮ অগস্ট জেলার নানা প্রান্তে ১১৮টি শিবির হয়েছে। জেলা শিল্প দফতরের আধিকারিক জয়ন্ত আচার্য জানান, কোনও শিল্পোদ্যোগী ‘উদ্যম রেজিস্ট্রেশন পোর্টালে’ কী ভাবে নিজের নাম নথিভুক্ত করাবেন, ই-মার্কেটিং পোর্টালে উৎপাদিত পণ্যের বাজার কী ভাবে ধরবেন, জমির ব্যবস্থা করতে পারলে সেখানে ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্ক গড়ার জন্য দফতরের তরফে কী সহায়তা মিলবে, এমন নানা বিষয়ে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে শিবিরে। জমি সংক্রান্ত সমস্যার সমাধান, বিদ্যুৎ সংযোগ, দূষণ সংক্রান্ত ছাড়পত্র, দমকল, ট্রেড লাইসেন্স দেওয়া এবং কর সংক্রান্ত বিষয়গুলি শিবিরে হাজির ব্যক্তিদের জানানো হয়েছে।
প্রশাসন সূত্রে খবর, ৯৭০ জন শিল্পোৎসাহী উদ্যম রেজিস্ট্রেশন পোর্টালে নাম নথিভুক্ত করিয়েছেন। এত দিন জেলাস্তরে এই শিবির হত। এ বার হয়েছে সমস্ত ব্লকে। তবে, শিল্পোৎসাহীরা ব্যাঙ্কঋণ না পেলে এই উদ্যোগ আদৌ সফল হবে কিনা, বিভিন্ন মহল থেকে সে প্রশ্ন উঠেছে। সেই সূত্রেই আলোচনায় এসেছে ঋণদানের প্রশ্নে ব্যাঙ্কগুলির ভূমিকা। শিবির পরিদর্শনে এসে ক্ষুদ্র, ছোট, মাঝারি ও বস্ত্র দফতরের যুগ্ম-অধিকর্তা সন্দীপ নাগ বলেন, ‘‘কোনও সরকারই সবাইকে চাকরি দিতে পারে না। ব্যবসাই বিকল্প রাস্তা। সেই লক্ষ্যেই শিবিরের আয়োজন। একাধিক ব্লকে শিবিরে গিয়ে মনে হয়েছে, ব্যাঙ্কের তরফে সাড়া কম মিলছে।’’
জেলার লিড ডিস্ট্রিক্ট মানেজার তপন মণ্ডল অবশ্য এই বক্তব্যের সঙ্গে সহমত নন। তাঁর প্রশ্ন,‘‘ব্যাঙ্ক ঋণ না দিলে শিল্প হচ্ছে কী ভাবে। আরও ঋণ দেওয়ার দাবি রয়েছে। তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’’ জেলাশাসক রজত নন্দা বলেন, ‘‘আগে শিল্পক্ষেত্রের বিভিন্ন সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে তিন মাস অন্তর জেলাস্তরে বৈঠক হত। এখন হচ্ছে প্রত্যেক মাসে।’’
পুরুলিয়ার পুরপ্রধান নবেন্দু মাহালির দাবি, ‘‘শহরে হকারেরা ‘পি এম স্বনিধি প্রকল্পে’ দশ হাজার টাকা পর্যন্ত ঋণ পেতে পারেন। আমাদের কাছে আসা আবেদনগুলি খতিয়ে দেখে ব্যাঙ্কে পাঠাচ্ছি। ঋণদানের ক্ষেত্রে গড়িমসির অভিযোগ রয়েছে ব্যাঙ্কের বিরুদ্ধে। বিষয়টি প্রশাসনকে দেখতে হবে।’’ পুরসভা সূত্রে খবর, ওই প্রকল্পে বিভিন্ন ব্যাঙ্কের কাছে পাঠানো ১২৯০টি আবেদনের মধ্যে মঞ্জুর হয়েছে ৭৭৫টি।
জেলা পরিষদের সহ-সভাধিপতি সুজয় বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতে, ‘‘ঋণ পরিশোধ হবে না, এই আশঙ্কা থেকে ঋণ দেওয়া না হলে উন্নয়নের গতি শ্লথ হবে।’’ জেলা পরিষদের কো-মেন্টর জয় বন্দ্যোপাধ্যায় মনে করেন, ‘‘ব্যাঙ্কগুলিকে খোলা মনে শিল্পোদ্যোগীদের কথা ভাবতে হবে।’’ তাঁর দাবি, ‘‘ক্ষুদ্র, ছোট ও মাঝারি শিল্পে ৪০ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ হয়েছে। কর্মসংস্থান হয়েছে ৭৫ হাজার। বৃহৎ শিল্পে বিনিয়োগের পরিমাণ ৯৭০৫ কোটি টাকা। তাতে ২২ হাজার কর্মসংস্থান তৈরি হয়েছে। এই তথ্য জেলা শিল্প দফতরের।’’ জেলা পরিষদের বিদায়ী বোর্ডের কর্মাধ্যক্ষ সৌমেন বেলথরিয়ার দাবি, ‘‘আমার কাছে অভিযোগ আসে, ভর্তুকির টাকা আটকে রাখা হয়। ব্যাঙ্কগুলির সমস্যা থাকলে তা নিয়ে আলোচনা হতে পারে। কিন্তু ব্যাঙ্ক পাশে না দাঁড়ালে উৎসাহীরা কার কাছে যাবেন?’’
জেলা শিল্প দফতর সূত্রে খবর, ওয়েস্ট বেঙ্গল ভবিষ্যৎ ক্রেডিট কার্ডের জন্য (শিল্পোদ্যোগীরা ১৫ শতাংশ ভর্তুকিতে পাঁচ লক্ষ টাকা পর্যন্ত ঋণ পেতে পারেন) শিবিরে ১,১১১ জন আবেদন করেছেন। শিবির শুরুর আগে পর্যন্ত ৪,১১৬টি আবেদনপত্র জমা পড়েছিল। সেগুলির মধ্যে প্রাথমিক অনুমোদন পেয়েছে ৯৯১টি। চূড়ান্ত ছাড়পত্র পেয়েছে ১৫২টি। শিবিরে জমা পড়া আবেদনগুলির মধ্যে ১৬টি চূড়ান্ত ছাড়পত্র পেয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy