Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪
ফের রাজ্য-সেরা বাঁকুড়ার ছেলেমেয়েরা

তালিকায় নাম তোলাই যেন অভ্যাস

বস্তুত, ফি-বছর মাধ্যমিক ও উচ্চ মধ্যমিকে দুর্দান্ত রেজাল্ট করাটা এখন বাঁকুড়া জেলা স্কুল অভ্যাসে পরিণত করে ফেলেছে। কিন্তু, এ বার উচ্চ মাধ্যমিক নিয়ে এই স্কুলের উপরে জেলার মানুষের প্রত্যাশা ছিল কিছুটা বেশিই।

সুরজিৎ লোহার,  শুভদীপ সিংহ , পিনাকী চট্টোপাধ্যায় , শুভজিৎ মণ্ডল, দেবজ্যোতি গঙ্গোপাধ্যায় ,অঙ্কিতা শীট , সায়ন্তী কুণ্ডু ও জয়শ্রী রাহা

সুরজিৎ লোহার, শুভদীপ সিংহ , পিনাকী চট্টোপাধ্যায় , শুভজিৎ মণ্ডল, দেবজ্যোতি গঙ্গোপাধ্যায় ,অঙ্কিতা শীট , সায়ন্তী কুণ্ডু ও জয়শ্রী রাহা

রাজদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় ও শুভ্র মিত্র
বাঁকুড়া ও বিষ্ণুপুর শেষ আপডেট: ৩১ মে ২০১৭ ০২:০২
Share: Save:

দু’বছর আগে মাধ্যমিকে প্রথম হয়ে নিজের উপরে প্রত্যাশাটা সে বাড়িয়ে তুলেছিল। তাই এ বার উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা শেষ হওয়ার পরেও রেজাল্ট নিয়ে চাপা উত্তেজনা ছিল ভিতরে। মঙ্গলবার রেজাল্ট বের হওয়ার দিন সকাল থেকে সেই টেনশনেই মুখে দানাপানি কাটতে পারেনি সে। অবশেষে রাজ্যের মেধা তালিকায় তৃতীয় স্থানে নিজের নামটা দেখেই মিষ্টিমুখ করল বাঁকুড়া জেলা স্কুলের ছাত্র সুরজিৎ লোহার।

৪৮৯ নম্বর পাওয়া সুরজিৎই নয়, জেলা স্কুল থেকে এ বার উচ্চ মাধ্যমিকে চার জন রাজ্যের প্রথম দশে উঠে এসেছে। মাধ্যমিকের মতো পরের ধাপেও ধারাবাহিক সাফল্য বজায় রাখল এই স্কুল। এবং জেলাও। বাঁকুড়া কেন্দুয়াডিহি হাইস্কুল, বাঁকুড়া মিশন গার্লস-সহ জেলার মোট আট জন পরীক্ষার্থীর নাম আছে মেধা তালিকায়।

বস্তুত, ফি-বছর মাধ্যমিক ও উচ্চ মধ্যমিকে দুর্দান্ত রেজাল্ট করাটা এখন বাঁকুড়া জেলা স্কুল অভ্যাসে পরিণত করে ফেলেছে। কিন্তু, এ বার উচ্চ মাধ্যমিক নিয়ে এই স্কুলের উপরে জেলার মানুষের প্রত্যাশা ছিল কিছুটা বেশিই। কারণ, এই স্কুলের ২০১৫-র মাধ্যমিক ব্যাচ সাড়া জাগানো ফলাফল করেছিল। সে বার মেধা তালিকায় সুরজিৎ-সহ ১০ জন ছাত্র প্রথম দশে উঠে এসেছিল। প্রথম হয়েছিল সুরজিৎ। জেলা স্কুল এ বারও নিরাশ করেনি। সুরজিৎ ছাড়াও মেধা তালিকায় আরও তিন জন আছে প্রথম দশে। জেলা স্কুল থেকে ২০১৫-র মাধ্যমিকে ষষ্ঠ হওয়া শুভদীপ সিংহ মহাপাত্র এ বার ৪৮৫ পেয়ে পঞ্চম হয়েছে। ওই বছর মাধ্যমিকে চতুর্থ হওয়া শুভজিৎ মণ্ডল ৪৮১ নম্বর পেয়ে এ বার নবম। একই নম্বর পেয়েছে জেলা স্কুলের আর এক ছাত্র দেবজ্যোতি গঙ্গোপাধ্যায়।

সুরজিতের বাবা প্রশান্ত লোহার পূর্ত দফতরের কর্মী, মা দীপালিদেবী প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষিকা। সুরজিতের কথায়, “মাধ্যমিকের পরে উচ্চ মাধ্যমিকেও ভাল কিছু করে দেখানোর একটা তাগিদ আমার মধ্যে ছিল। নিজেকে ফের প্রমাণ করতে পেরে ভাল লাগছে।’’ শুভদীপের বাবা প্রবীর সিংহ মহাপাত্র শিক্ষক, মা মানসীদেবী গৃহবধূ। শুভজিতের বাবা বরেন মণ্ডল শিক্ষক, মা ময়নাদেবী গৃহবধূ। দেবজ্যোতির বাবা স্বাস্থ্যকর্মী, মা সুতপাদেবী গৃহবধূ। সুরজিতের মতো ডাক্তারি নিয়ে পড়তে চায় তার কৃতী সহপাঠীরাও।

সুরজিৎ, শুভদীপ, শুভজিৎ বা দেবজ্যোতিরা সময় বেঁধে পড়াশোনা করার পক্ষপাতি নয়। অবসর সময়ে সুরজিৎ ক্রিকেট খেলা দেখতে ভাল বাসে। শুভদীপের গান শোনা হবি। শুভজিতের গোয়েন্দা গল্প পড়া ও দেবজ্যোতির ছবি আঁকার নেশা রয়েছে। তাদের কথায়, “স্কুলের পড়াশোনার পরেও আমরা নিজেদের মধ্যে খেলাধুলোয় মত্ত থাকতাম। পড়াশোনা নিয়েও আলোচনা হত।’’

জেলা স্কুলের প্রধান শিক্ষক বারিদবরণ মিশ্রের কথায়, “চার জন ছাত্র মেধা তালিকায় থাকায় আমরা খুশি। তবে, এই স্কুলের কম বেশি সব ছাত্রই পড়াশোনায় সমান। ভবিষ্যতে ওরা নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করতে পারলেই আমরা গর্বিত হব।’’

বাঁকুড়ার মুখ উজ্জ্বল করে মেধা তালিকায় রয়েছে আরও কিছু ছাত্রছাত্রী। ৪৮১ নম্বর পেয়ে এ বার নবম হয়েছে কেন্দুয়াডিহি হাইস্কুলের ছাত্র পিনাকী চট্টোপাধ্যায়, মিশন গার্লস হাইস্কুলের ছাত্রী অঙ্কিতা শীট এবং সোনামুখী বিন্দুবাসিনী জুবিলি হাইস্কুলের ছাত্রী সায়ন্তী কুণ্ডু। দশম হয়েছে রাজগ্রাম শশীভূষণ রাহা ইনস্টিটিউশনের ছাত্রী জয়শ্রী নন্দী (৪৮০)।

কেন্দুয়াডিহির বাসিন্দা পিনাকীর বাবা প্রদীপ চট্টোপাধ্যায় স্কুল শিক্ষক, মা বিজয়াদেবী গৃহবধূ। অঙ্কিতার বাবা অনীশরঞ্জন শীট পেশায় ফার্মাসিস্ট, মা রিম্পাদেবী গৃহবধূ। অঙ্কিতা কাটজুড়িডাঙার বাসিন্দা। দু’জনেরই স্বপ্ন ডাক্তার হওয়ার। পড়াশোনার পাশাপাশি পিনাকী ফুটবল দেখতে পছন্দ করে। অঙ্কিতা আবৃত্তি ও গানের তালিম নেয়। প্রতিটি বিষয়ের জন্য আলাদা করে টিউশনি নিয়েছিল তারা। কেন্দুয়াডিহি হাইস্কুলের টিচার ইনচার্জ সুবীর কুমার দত্ত, মিশন গার্লস হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষিকা অবিজিতা চৌধুরীরা পিনাকি ও অঙ্কিতার ভাল ফল নিয়ে আশাবাদী ছিলেন।

এ দিন সকাল থেকেই টিভি-তে চোখ ছিল সোনামুখী শহরের লালবাজারের বাসিন্দা সায়ন্তীর। নবম হয়েছে শুনেই বাড়িতে খুশির হাওয়া। সায়ন্তীর কথায়, ‘‘ভাল ফলের আশা করেছিলাম। কিন্তু এক থেকে দশের মধ্যে থাকব, ভাবতে পারিনি!’’ বাবা বাবলু কুণ্ডু ব্যাবসায়ী, মা পারুলদেবী গৃহবধূ। সাহিত্য নিয়ে অনেক দূর পড়তে চায় কলা বিভাগের এই কৃতী ছাত্রী। মনে পড়থে জেঠুর কথা। ‘‘জেঠু আমাকে পড়ায় খুব সাহায্য করতেন। টেস্টের আগে উনি আমাদের ছেড়ে চলে যান।’’—বলল সে।

টিভি-তে মেয়ের দশম হওয়ার খবর দেখে কেঁদেই ফেলেছিলেন জয়শ্রীর মা বন্দনা নন্দী। কোতুলপুর থানার রাইবাঘিনি গ্রামে জয়শ্রীর বাড়িতে ভিড় করেছিল গোটা গ্রাম। জয়শ্রীর বাবা শান্তিনাথ নন্দী কলকাতায় একটি ওষুধ প্রস্তুতকারক সংস্থার কর্মী। জয়েন্ট দিয়ে ডাক্তারি পড়ার ইচ্ছা আছে তার।

জয়শ্রীর নিজের কথায়, ‘‘পড়াশোনায় স্কুলের স্যাররা দারুণ সাহায্য করতেন। আমাদের স্কুলের ল্যাব বড় শহরের যে কোনও স্কুলের সঙ্গে টক্কর দিতে পারে।’’ নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে গ্রামে একটা অনাথ আশ্রম খোলার স্বপ্নও রয়েছে এই মেধাবীর চোখে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

higher secondary secondary Top District
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE