Advertisement
E-Paper

দুই মামলাতেই জামিন বাঁকুড়ার বাপির

এ ক্ষেত্রে সরকারি আইনজীবী এজলাসে উপস্থিত ছিলেন। জামিনের বিরোধিতাও করেছিলেন। কিন্তু, পুলিশ পেটানো ও এক বধূর শ্লীলতাহানির অভিযোগে ধৃত বাঁকুড়ার যুব তৃণমূল নেতা পীযূষ চক্রবর্তী ওরফে ‘ক্যাসেট’ বাপি জামিন পেয়ে গেলেন। মঙ্গলবার তাঁকে বাঁকুড়া জেলা আদালতে তোলা হলে দু’টি মামলাতেই তিনি জামিন পান।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৪ জুন ২০১৫ ০১:১৯
জামিন পেয়ে বেরোচ্ছেন বাপি। বাঁকুড়া কোর্টে মঙ্গলবার।— নিজস্ব চিত্র।

জামিন পেয়ে বেরোচ্ছেন বাপি। বাঁকুড়া কোর্টে মঙ্গলবার।— নিজস্ব চিত্র।

এ ক্ষেত্রে সরকারি আইনজীবী এজলাসে উপস্থিত ছিলেন। জামিনের বিরোধিতাও করেছিলেন। কিন্তু, পুলিশ পেটানো ও এক বধূর শ্লীলতাহানির অভিযোগে ধৃত বাঁকুড়ার যুব তৃণমূল নেতা পীযূষ চক্রবর্তী ওরফে ‘ক্যাসেট’ বাপি জামিন পেয়ে গেলেন। মঙ্গলবার তাঁকে বাঁকুড়া জেলা আদালতে তোলা হলে দু’টি মামলাতেই তিনি জামিন পান। পুলিশ সূত্রে খবর, পুলিশকর্মীকে মারধরের অভিযোগে সোমবারই বাঁকুড়া আদালতে চার্জশিট জমা করেছে বাঁকুড়া সদর থানা। ওই ঘটনায় এ দিন জামিন পেয়েছেন বাপি। অন্য দিকে, শ্লীলতাহানির অভিযোগের মামলায় ১০০০ টাকা বন্ডে বাপির অন্তর্বতীকালীন জামিন মঞ্জুর করেছে আদালত।

গত ৯ জুন বাঁকুড়ার গোবিন্দনগর এলাকায় দুর্গাপুরের বেনাচিতির বাসিন্দা এক বধূকে শ্লীলতাহানি এবং সদর থানার সাব ইন্সপেক্টর ক্ষিতীশ পাইনকে মারধরের অভিযোগ ওঠে বাঁকুড়া পুরসভার এক তৃণমূল কাউন্সিলরের স্বামী বাপির বিরুদ্ধে। মাঝরাতে স্বামীর সঙ্গে ওই বধূ বাঁকুড়া বাসস্ট্যান্ডে এসেছিলেন। তিনি প্রথমেই কিছু দুষ্কৃতীর খপ্পরে পড়েন। ওই বধূ জানিয়েছিলেন, উপায় না দেখে স্থানীয় লোকজনদের কাছ থেকে বাপির ফোন নম্বর নিয়ে ওই বধূ তাঁদের উদ্ধার করার জন্য বাপিকে ডাকেন। পুলিশের কাছে লিখিত অভিযোগে বধূটি দাবি করেছিলেন, বাপি ঘটনাস্থলে এসে উল্টে তাঁর শ্লীলতাহানি করেন এবং তাঁর স্বামীকেও মারধর করেন। এর পর পুলিশ ওই বধূকে উদ্ধার করতে এলে বাপি পুলিশকর্মীদেরও পেটান বলে অভিযোগ। ঘটনাটিকে কেন্দ্র করে নানা মহলে হইচই পড়ে যায়।

প্রথম থেকেই বাপির পাশে দাঁড়িয়েছিলেন জেলা পরিষদের সভাধিপতি তথা তৃণমূল নেতা অরূপ চক্রবর্তী। বাপিকে ‘সৎ’ ও ‘সমাজসেবী’ বলে উল্লেখ করে তাঁকে ফাঁসানোর চেষ্টা হচ্ছে বলেও অভিযোগ তুলেছিলেন অরূপবাবু। শুধু তাই নয়, বাপিকে গ্রেফতার করার দিনই বাঁকুড়া সদর থানার আইসি বিশ্বজিৎ সাহার বদলির নির্দেশ আসে। শাসক দলের নেতাকে গ্রেফতার করার জেরেই আইসি-কে বদলি করে দেওয়া হল বলে অভিযোগ তোলেন বিরোধীরা। বিষয়টি নিয়ে জেলার পুলিশ মহলেও ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। শেষ অবধি আইসি-কে বদলি হতেও হয়।

আর তার পরে পরেই এ দিন বাপি জামিন পাওয়ায় জেলার রাজনৈতিক মহলে শুরু হয়েছে বিতর্ক। তৃণমূলের চাপে পড়েই পুলিশ দ্রুত চার্জ গঠন করে কড়া ধারা বাদ দিয়ে বাপির জামিনের পথ সুগম করেছে বলে অভিযোগ তুলেছেন বিরোধীরা। জেলা কংগ্রেস নেতা তথা আইনজীবী অরূপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের দাবি, “পুলিশ প্রথম থেকে কড়া পদক্ষেপ করলেও শাসক দলের চাপে পড়েছে। কর্তব্যরত পুলিশের উপরে হামলার অভিযোগে ধৃত কাউকে এত দ্রুত জামিন পেতে আগে দেখিনি। এ থেকে আমাদের মনে হচ্ছে, পুলিশ কিছু কড়া ধারা চার্জশিটে বাদ দিয়ে দিয়েছে।’’ তাঁর সংযোজন, “পুলিশের উপরে সাধারণ মানুষের ভরসা আগেই উঠে গিয়েছে। এই ঘটনায় পুলিশকর্মীদেরও নিজের দফতরের প্রতি আস্থা উঠে গেল!’’ চার্জশিটে বাপির বিরুদ্ধে কোনও ধারা আদৌ বাদ দেওয়া হয়েছে কিনা, সে বিষয়ে জেলা পুলিশের কোনও কর্তাই এই অভিযোগের বিষয়ে মুখ খুলতে চাননি।

এ দিন বাঁকুড়ার মুখ্য বিচারবিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেট (সিজেএম) হৃদয়াতুল্য ভুটিয়ার এজলাসে দুপুর দুটো নাগাদ বাপিকে হাজির করানো হয়। সিজেএম দু’টি মামলার কেস ডায়েরি খতিয়ে দেখেন। বাপির আইনজীবী তাঁর মক্কেলের জামিনের আবেদন করেন। জামিনের বিরুদ্ধে সওয়াল করেছিলেন সরকারি কৌঁসুলি অমিতজ্যোতি দত্ত। কিন্তু, জামিন আটকানো যায়নি। কেন জামিন পেলেন বাপি জানতে চাওয়া হলে অমিতজ্যোতিবাবু বলেন, “সংবাদমাধ্যমের কাছে আমি কিছু বলব না।’’ অন্য দিকে, বাপির আইনজীবী তথা তৃণমূল আইনজীবী সেলের বাঁকুড়া জেলা সভাপতি রথীন দে বলেন, “পুলিশকে মারধরের ঘটনায় চার্জশিট জমা দেওয়া হয়েছে। বিচারক দু’পক্ষের সওয়াল শুনে আমার মক্কেলকে জামিন দিয়েছেন।’’ একই সঙ্গে তিনি জানা, অন্য একটি অভিযোগে শ্লীলতাহানি ও চুরির ঘটনায় বাপির বিরুদ্ধে কিছু জামিন-অযোগ্য ধারা থাকলেও এ দিন অন্তর্বতীকালীন জামিন মঞ্জুর করেছেন সিজেএম।

জেল থেকে বেরিয়ে এ দিন তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা যাবতীয় অভিযোগ অস্বীকার করেছেন বাপি। তাঁর দাবি, “ঘটনার রাতে ওই বধূর ফোন পাওয়ার পরেই আমি বাঁকুড়া থানায় ফোন করে পুলিশকে ওই মহিলার সাহায্যের জন্য যেতে বলেছিলাম। কিন্তু, পুলিশ যায়নি। মাঝরাতে তাই আমাকেই ঘটনাস্থলে যেতে হয়েছিল। আমি যাওয়ার কিছুক্ষণ পরে পুলিশ গিয়ে পৌঁছয়। এক মহিলা বিপদে পড়েছে শুনেও কেন পুলিশ এত দেরি করল আসতে, সেই প্রশ্নই করেছিলাম এসআইকে। তাতেই আমার সঙ্গে বচসা শুরু করেন ওই পুলিশকর্মী।’’ পুলিশকে মারধর এবং মহিলার শ্লীলতাহানির অভিযোগ সম্পূর্ণ সাজানো বলেও দাবি করেছেন এই যুব তৃণমূল নেতা।

Trinamool Bapi Bankura court congress TMC
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy