Advertisement
E-Paper

দুই আসনে ডজন প্রার্থী তৃণমূলেরই

জেলা পরিষদে তৃণমূলের হয়ে মনোনয়ন পড়ল দ্বিগুনেরও বেশি। জেলা প্রশাসনের দেওয়া পরিসংখ্যান অনুযায়ী, পুরুলিয়ায় জেলা পরিষদের ৩৮টি আসনে তৃণমূলের মনোনয়ন পড়েছে ৭৮টি! 

প্রশান্ত পাল ও শুভ্রপ্রকাশ মণ্ডল

শেষ আপডেট: ১১ এপ্রিল ২০১৮ ০০:৫২
প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

শাসকদলের দ্বন্দ্বের ছায়া পড়ল পুরুলিয়ার পঞ্চায়েত নির্বাচনেও।

জেলা পরিষদে তৃণমূলের হয়ে মনোনয়ন পড়ল দ্বিগুনেরও বেশি। জেলা প্রশাসনের দেওয়া পরিসংখ্যান অনুযায়ী, পুরুলিয়ায় জেলা পরিষদের ৩৮টি আসনে তৃণমূলের মনোনয়ন পড়েছে ৭৮টি! প্রায় একই অবস্থা পঞ্চায়েত সমিতির ক্ষেত্রেও। ২০টি পঞ্চায়েত সমিতির মোট আসন ৪৪৬। আর তৃণমূলের মনোনয়ন পড়েছে ৬৯২টি। গ্রাম পঞ্চায়েতে ১৯৪৪টি আসনে তৃণমূলের মনোনয়ন ২৪৭৭টি। পঞ্চায়েতের তিনটি স্তরেই মোট আসনের থেকে শাসকদলের এত বেশি সংখ্যক মনোনয়নকে ঘিরে জোর চর্চা শুরু হয়ে গিয়েছে বিভিন্ন মহলে। জেলা তৃণমূল নেতৃত্বের অবশ্য বক্তব্য, মনোনয়ন প্রত্যাহারের শেষ দিন ১৬ এপ্রিলের পরে অনেক হিসেবই বদলে যাবে।

এই বক্তব্য মানলেও গোঁজ-অস্বস্তি লুকোতে পারছে না শাসকদল। অথচ, নির্বাচনে দলীয় দ্বন্দ্ব যাতে প্রভাব না ফেলে, তা নিশ্চিত করতে মনোনয়ন শেষ হতেই মঙ্গলবার পুরুলিয়ায় একটি হোটেলে দলের সমস্ত ব্লকের সভাপতি, বিধায়ক ও জেলার শীর্ষ নেতাদের নিয়ে বৈঠকে বসেন জেলা সভাপতি শান্তিরাম মাহাতো। সূত্রের খবর, বৈঠকে গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব মেটানোর বিষয়ে বিশেষ কিছু সমাধানসূত্র অবশ্য বেরোয়নি। যদিও তৃণমূলের জেলা নেতৃত্বের দাবি, ত্রিস্তরীয় পঞ্চায়েতে অতিরিক্ত যাঁরা দাঁড়িয়েছেন, তাঁরা মনোনয়ন প্রত্যাহার করবেন। শান্তিরামবাবু বলেন, ‘‘দল যাঁদের প্রার্থী করেছে, তাঁদেরকেই দলীয় প্রতীক দেওয়া হবে। এর বাইরে যাঁরা মনোনয়ন জমা করেছেন, তাঁদেরকে নাম প্রত্যাহার করার নির্দেশ দেওয়া হচ্ছে।” তবে এই নির্দেশ কতটা কার্যকরী হবে, তা নিয়ে সংশয়ে দলেরই অনেকে। তেমন বহু প্রার্থী সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, দল টিকিট না দিলে, নির্দল হিসাবেই তাঁরা দাঁড়াবেন।

নির্বাচন ঘোষণার পরেই প্রার্থী হতে চেয়ে হুড়োহুড়ি পড়ে গিয়েছিল শাসকদলের অন্দরে। জেলা পরিষদে প্রার্থী হতে প্রায় দুশো জন নেতা-কর্মী আবেদন করেন। ফলে ত্রিস্তরীয় পঞ্চায়েতের সবক’টিতেই প্রার্থী নির্বাচন করতে সমস্যায় পড়তে হয় নেতৃত্বকে। তখনই আভাস মেলে। কিন্তু, তা বলে জেলা পরিষদে দ্বিগুনের বেশি নেতা-কর্মী প্রার্থী হতে চেয়ে মনোনয়ন জমা করে বসবেন, তা ভাবতে পারেননি বলে কবুল করেছেন তৃণমূলেরই এক জেলা এক শীর্ষনেতা।

জেলা পরিষদে প্রার্থী হওয়ার ক্ষেত্রে গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব সব থেকে প্রকট হয়েছে পাড়া বিধাননসভার রঘুনাথপুর ২ ব্লকে। এই ব্লকের ৩০ নম্বর আসনে ৫টি ও ৩১ নম্বর আসনে ৭টি মনোনয়ন করেছেন শাসকদলের ১২ জন প্রার্থী। পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি মনীষা ঘোষ, যুব তৃণমূলের ব্লক সভাপতির স্ত্রী কাঞ্চন মাহাতা, সিপিএমের প্রাক্তন বিধায়ক তথা বর্তমানে তৃণমূলের মহিলা শাখার নেত্রী মিনু বাউরি থেকে আগের জেলা পরিষদের সদস্যের স্ত্রী, ব্লকের কার্যকরী সভাপতির আত্মীয়া— সকলেই আছেন প্রার্থী হওয়ার দৌড়ে। বস্তুত, এই ব্লকে দল কাদের জেলা পরিষদের প্রার্থী করেছে সেটাই এখনও নিশ্চিত নয় বলে জানাচ্ছেন নেতৃত্ব। গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব আরও বেড়ে যাওয়ার ভয়ে জেলা নেতৃত্ব এই ব্লকে দলের প্রার্থীর নাম ঘোষণা করতে চাইছে না।

দল সূত্রে খবর, ওই ১২ জনের মনোনয়নের খবর পৌঁছেছে পুরুলিয়া নিয়ে সচেতন রাজ্যের এক শীর্ষ নেতার কানেও। রুষ্ট হয়ে ওই নেতা মঙ্গলবারই দুপুরে রঘুনাথপুরের পুরপ্রধান ভবেশ চট্টোপাধ্যায় ও পাড়ার বিধায়ক উমাপদ বাউরিকে ফোন করে সমস্যা দ্রুত মিটিয়ে ফেলার নির্দেশ দেন। পুরপ্রধান বলেন, ‘‘আমাদের নেতা রঘুনাথপুর ২ ব্লকে দু’টি আসনে বেশি প্রার্থী হওয়া নিয়ে সমস্যা মেটানোর নির্দেশ দিয়েছেন। উমাপদবাবুর সঙ্গে আলোচনায় বসব। পরে ব্লকের নেতাদের সঙ্গেও কথা বলে সমস্যা মিটিয়ে নিতে বলা হবে।”

অন্যদিকে, রঘুনাথপুর ২ ব্লকের মতো না হলেও একই অবস্থা আড়শা, পুরুলিয়া ২, বরাবাজার, ঝালদা ১, বান্দোয়ান, মানবাজার, হুড়া, পাড়া-সহ বেশ কিছু ব্লকে। পুরুলিয়া ২ ব্লকে একই আসনে প্রার্থী হতে চেয়ে মনোনয়ন জমা করেছেন বিদায়ী দুই কর্মাধ্যক্ষ হলধর মাহাতো ও পুষ্প মাহাতো। এই আসনে গতবার জিতেছিলেন জনস্বাস্থ্য কর্মাধ্যক্ষ পুষ্প মাহাতো। সূত্রের খবর, দলের তরফে তাঁকেই প্রার্থী করা হবে বলে স্থির করা হয়েছিল। কিন্তু নিজের আসনটি সংরক্ষিত হয়ে পড়ায় পুরুলিয়া ২ ব্লকের ওই ২১ নম্বর আসনে মনোনয়ন করে বসেছেন বন ও ভূমি কর্মাধ্যক্ষ হলধরবাবু।

মানবাজার ২ ব্লকের ৪ নম্বর আসনে গতবারের জয়ী সুমিত সিংহ মল্লের আসনে এ বার তিনি ছাড়াও মনোনয়ন জমা করেছেন তৃণমূলের আরও দুই প্রার্থী। গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে দীর্ণ বান্দোয়ান ব্লকের ৫ নম্বর আসনে স্থানীয় বিধায়ক রাজীব সোরেনের স্ত্রীর প্রার্থী হওয়ার কথা। সেখানে মনোয়ন জমা করেছেন শাসকদলেরই আরও দু’জন।

দল সূত্রের খবর, গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের কারণেই এ বার প্রার্থী হতে পারেননি গতবারের খাদ্য কর্মাধ্যক্ষ কাশীপুরের সারদাদেবী কিস্কু। মনোনয়নের শেষ দিন সোমবার জেলা পরিষদ আসনে তৃণমূলের ৫৮ জন প্রার্থী মনোনয়ন করেছেন। দলের এক নেতার কথায়, ‘‘দলের মধ্যে দ্বন্দ্ব আরও বেড়ে যাবে, এই আশঙ্কায় জেলা পরিষদের প্রার্থী তালিকা এ বার আর ঘোষণা করা হয়নি। কিন্তু বাস্তবে যা দাঁড়িয়েছে, সেটাও মারাত্মক। চল্লিশ জন প্রার্থীকে কী ভাবে বুঝিয়ে নির্বাচন থেকে সরানো হবে, সেটাই বোঝা যাচ্ছে না।”

গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের কারণেই দল চাইলেও প্রার্থী হতে পারেননি অন্যতম জেলা সম্পাদক নবেন্দু মাহালি। বরাবাজার, পাড়া, পুরুলিয়া ২ ব্লকের যে কোনও একটি আসন থেকে নবেন্দুবাবুকে প্রার্থী করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু স্রেফ ওই এলাকার শাসকদলের বিভিন্ন গোষ্ঠীর মধ্যে দ্বন্দ্বের কারণে শেষ পর্যন্ত প্রার্থী হওয়া সম্ভব হয়নি তাঁর।

তবে জেলা পরিষদের বিদায়ী সভাধিপতি সৃষ্টিধর মাহাতো, বিদায়ী পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ তথা সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট সুজয় বন্দ্যোপাধ্যায়, আর এক কর্মাধ্যক্ষ তথা মহিলা শাখার নেত্রী নিয়তি মাহাতোর আসনগুলিতে অবশ্য দলের তরফে দ্বিতীয় কোনও মনোনয়ন জমা হয়নি। আপাতত এটাই স্বস্তি পুরুলিয়া তৃণমূলের।

West Bengal Panchayet election 2018 Panchayet election Purulia পুরুলিয়া
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy