হতাশ: ফ্লেক্স-এর জন্য কেনা হয়ে গিয়েছিল নতুন যন্ত্র। সিউড়িতে। ছবি: তাপস বন্দ্যোপাধ্যায়
ভোট নেই। তাই কাজও নেই দেওয়াল লিখিয়েদের। শূন্যতা ফ্লেক্স-এর দোকানেও।
ভোটের নির্ঘণ্ট ঘোষণা হলেই শুরু হয় প্রচার-পর্ব। গত পঞ্চায়েত নির্বাচনেও দেওয়াল লিখন, বাড়ি বাড়ি জনসংযোগের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে প্রচারে থেকেছে ফ্লেক্স, ফেস্টুন। সঙ্গে দলীয় প্রতীক আঁকা পতাকা আর টুপির মেলা। এ বার আবার পঞ্চায়েত ভোটের মরসুমেই পড়েছে বাংলা নববর্ষ। অন্য জেলায় নতুন ক্যালেন্ডার, শুভেচ্ছা কার্ডের সঙ্গেই চলছে ভোটের ফ্লেক্স, ফেস্টুন ছাপা। বরাত অনুযায়ী সব সরবরাহ করতে হিমশিম খাচ্ছেন ছাপাখানার কর্মীরা। সেখানে উল্টো ছবি বীরভূমে। নববর্ষের কিছু কাজ থাকলেও ভোট প্রচারের কাজই নেই!
যুদ্ধের আগেই জয় কার্যত নিশ্চিৎ করে ফেলায় বিপাকে দেওয়াল লিখিয়ে, ফ্লেক্স-প্রিন্টিং প্রচারের ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত থাকা লোকজন। এই জেলার জেলা পরিষদে এক জনও বিরোধী নেই। গ্রাম পঞ্চায়েত ও পঞ্চায়েত সমিতির প্রায় ৮০ শতাংশ আসনে নির্বাচনে বিরোধীরা মনোনয়ন জমা দিতে না-পারায় কার্যত একতরফা জয় হয়েছে শাসকদলের। দেওয়াল লিখিয়ে বা ফ্লেক্স ব্যবসায়ীরা বলছেন, ‘‘সেয়ানে-সেয়ানে টক্করই যেখানে নেই, সেখানে প্রচারের লড়াই থাকবে কোথা থেকে?’’
একটা সময় ছিল ফ্লেক্স, ফেস্টুনে প্রচারের উপকরণ আনা হত মূলত কলকাতা থেকে। সে সব এখন অতীত। সিউড়ি জেলা সদরেই দুটি ফ্লেক্স প্রিন্টিং ইউনিট রয়েছে। ভোট উপলক্ষে প্রস্তুতিও চূড়ান্ত করেছিলেন তাঁরা। কিন্তু, মনোনয়নে পর্বেই ভোট কার্যত শেষ হওয়ায় বিপাকে তাঁরা। সিউড়ি হাটজনবাজার রেলগেটের কাছে বিশাল মাপের প্রিন্টিং ইউনিট। মালিক নিখিলকুমার মণ্ডল বলছেন, ‘‘একটি ফ্লেক্স মেশিন ছিল। শুধু ভোটের কথা মাথায় রেখে স্ত্রী-র ঋণ করে আর একটি মেশিন নিয়েছিলাম। কিন্তু, কাজই তো নেই।’’ স্ত্রী চিন্তাদেবী বলছেন, ‘‘২৫ লক্ষ টাকা ব্যাঙ্ক-ঋণ হয়েছে। মাসে কিস্তি প্রায় ৪০ হাজার টাকা। প্রতিবার নির্বাচনের সময় লক্ষ লক্ষ টাকার কাজ হয়। এ বার কী করব বলতে পারেন?’’
পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, সিউড়ি ১ ও ২, দুবরাজপুর, খয়রাশোল ব্লকে এ বার নির্বাচনই হবে না। ফলে দিনরাত এক করে যাঁরা গ্রামে গ্রামে দেওয়াল লিখে বেড়াতেন, তাঁদেরও আক্ষেপের শেষ নেই। তেমনই এক জন দুবরাজপুরের সন্তোষ দে। সন্তোষ বলছেন, ‘‘পঞ্চায়েত নির্বাচনের একটা মাস নাওয়া-খাওয়া ভুলে এ গ্রাম ও গ্রামে ঘুরে দেওয়াল লিখেছি। আয় হত দিনে গড়ে দু’হাজার টাকা। ছয় হাজার টাকার ফ্লুরসেন্ট রং, চুন ও তুলি কিনেছি। একটা আঁচড়ও কাটা হয়নি।’’ একটা দেওয়াল লেখারও বরাত নেই যে। একই বক্তব্য খয়রাশোলের সনৎ ডোমেরও। সনৎ বলছেন, ‘‘এক একটা পঞ্চায়েতের কাজ করেই ভাল আয় হত। ১০ থেকে ১২টি আসনের জন্য কমপক্ষে ৩০ জন প্রার্থীর হয়ে পাড়ায় পাড়ায় দেওয়াল লিখে বেড়াতাম। এ বার খুব মনখরাপ লাগছে।’’
‘‘দেওয়াল লিখন বা ফ্লেক্স নয়। লিফলেট থেকে নকল ব্যালট, পোস্টার থেকে হ্যান্ডবিল—সব তৈরির হিড়িক পড়ে এই সময়ে। এ বার সব ফাঁকা’’— বলছেন দুবরাজপুর এবং সিউড়ির বেশ কয়েক জন ব্যবসায়ী। বিরোধীরা বলছেন, ‘‘গোটা নির্বাচন প্রক্রিয়াকেই শাসকদল প্রহসণে পরিণত করেছে। গণতন্ত্রই বিপন্ন।’’ আর শাসকদলের জবাব, বিরোধীদের অস্তিত্ব থাকলে তো মনোনয়ন হবে, লড়াই জমবে। তা না হলে প্রচারের প্রয়োজন কোথায়?
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy