Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

খেলার মাঠ থেকে মেলা, প্রচারে নেতা

ফি বছর নিজের গ্রামের শিব গাজনে ভক্তা হয়ে উপোস করেন জেলা পরিষদের বিদায়ী কর্মাধ্যক্ষ তৃণমূলের হলধর মাহাতো। এ বারও তিনি পুরুলিয়া ২ ব্লকের একটি আসন থেকে মনোনয়ন দিয়েছেন।

পুরুলিয়া আলাপ: জলেশ্বর গ্রামে শিব মন্দির এলাকায় ভক্তদের মাঝে পুরুলিয়া জেলা পরিষদের তৃণমূল মনোনীত প্রার্থী হলধর মাহাতো। নিজস্ব চিত্র

পুরুলিয়া আলাপ: জলেশ্বর গ্রামে শিব মন্দির এলাকায় ভক্তদের মাঝে পুরুলিয়া জেলা পরিষদের তৃণমূল মনোনীত প্রার্থী হলধর মাহাতো। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ১৬ এপ্রিল ২০১৮ ০১:২৮
Share: Save:

কেউ মাঠের বার পুজো করলেন। কেউ বা গাজনের ভক্তা হলেন। কেউ নির্বাচনী অফিস খুললেন। এ ভাবেই বিভিন্ন দলের রাজনৈতিক নেতা, প্রার্থীরা পয়লা বৈশাখের দিনটা কাটালেন আমজনতাকে নিয়ে, দলের কর্মীদের সঙ্গে।

ফি বছর নিজের গ্রামের শিব গাজনে ভক্তা হয়ে উপোস করেন জেলা পরিষদের বিদায়ী কর্মাধ্যক্ষ তৃণমূলের হলধর মাহাতো। এ বারও তিনি পুরুলিয়া ২ ব্লকের একটি আসন থেকে মনোনয়ন দিয়েছেন। এ দিন ভক্তা হয়েই তিনি আনুষ্ঠানিক ভাবে ভোট-প্রচার শুরু করলেন। নিজের গ্রাম সিহলি লাগোয়া বাবা জলেশ্বরের গাজনে তিনি ভক্তা হন অনেকদিন ধরেই। তাঁর কথায়, ‘‘পনেরো-ষোলো বছর ধরে গাজনে ভক্তা হচ্ছি। শনিবার দিনভর উপোস রেখে রবিবার তেল-হলুদ প্রথা সেরে প্রচারে নেমেছি।’’ রাজ্য সরকারের সবুজ সাথী, কন্যাশ্রী, বাংলার সড়ক, মিশন নির্মল বাংলা, আমার বাড়ি-সহ বিভিন্ন প্রকল্পের কথা ঝুমুরের সুরে গেঁথে এ দিন থেকেই প্রচার শুরু করেছেন তিনি।

তবে তাঁকে জমি ছাড়তে নারাজ পুরুলিয়ার কংগ্রেস বিধায়ক সুদীপ মুখোপাধ্যায়। ধুরহি গ্রামের গাজন থেকে পুরুলিয়া শহরের নামোপাড়ার বুড়াবাবার শিবের গাজনে তিনি চষে বেড়িয়েছেন। সুদীপের কথায়, ‘‘গাজনের মেলায় গেলে অনেক পরিচিত মানুষের সঙ্গে দেখা হয়। ভোটের প্রচার বা জনসংযোগটা ঝালিয়ে নেওয়ার জন্য গাজন ভাল মঞ্চ।’’

এ দিন পুজো দিয়ে আনুষ্ঠানিক ভাবে প্রচার শুরু করেছেন জেলা পরিষদে হুড়ার একটি আসনের তৃণমূল প্রার্থী সৌমেন বেলথরিয়া। কাশীপুর পঞ্চায়েত সমিতির এই বিদায়ী সভাপতির জেলা পরিষদে লড়ার অভিজ্ঞতা প্রথম। তাঁর কথায়, ‘‘এ দিন আমার নির্বাচনী এলাকার স্বনির্ভর দলের সদস্যাদের সঙ্গে বৈঠক করেছি।’’ এ দিনই ঝালদা ১ ব্লকের ইচাগে নতুন নির্বাচনী অফিসের দ্বারোদ্ঘাটন করেন বিজেপির স্থানীয় মণ্ডল সভাপতি শঙ্কর মাহাতো। প্রার্থী অষ্টমী মাহাতো ও কর্মীদের নিয়ে তিনি মিষ্টিমুখও করান। এ দিনই পুরুলিয়ায় জেলা পার্টি অফিসে কর্মীদের নিয়ে মিষ্টিমুখ করিয়ে প্রার্থীদের জন্য ফ্লেক্স তৈরির বরাত দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন জেলা সভাপতি বিদ্যাসাগর চক্রবর্তী।

গ্রামাঞ্চলের ভোট হলেও শহরের নেতারাও বসে নেই। গত বিধানসভা ভোটে পুরুলিয়া কেন্দ্রে তৃণমূলের ভরাডুবি হয়। এ বার ওই এলাকার প্রচারের দায়িত্ব পেয়েছেন তৃণমূলের পুরুলিয়া শহর কমিটির সভাপতি বৈদ্যনাথ মণ্ডল। এ দিন তিনি ওই ব্লকের বিলতোড়া গ্রামে কর্মীদের বৈঠকে ডেকেছিলেন। সেখানে নতুন বছরের শুভেচ্ছা বিনিময়ের পরে মিষ্টিমুখ হয়। তারপরে কর্মিসভা করেন তিনি। বৈদ্যনাথবাবুর কথায়, ‘‘নির্বাচনের জন্য অনেক বৈঠক হবে। কিন্তু এই দিনটা বিশেষ হওয়ায় মিষ্টিমুখ করেই বৈঠক শুরু করেছি।’’

মানবাজারের সিপিএমের দুই প্রাক্তন প্রধান অনুরূপা সেন ও নিতাই দত্ত বসেছিলেন না। তাঁরাও নববর্ষের সকালে কর্মীদের নিয়ে এলাকার এ পাড়া ও পাড়া ঘুরে বাসিন্দাদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। পরিচিতজনের বাড়িতে ঢুঁ মেরে চায়ের কাপে চুমুক মেরে প্রচারও সেরেছেন। নিতাইবাবুর কথায়, ‘‘নববর্ষের শুভেচ্ছা বিনিময়ের মাধ্যমে ভোটের প্রচারে জনসংযোগ বেশ ভাল হয়।’’

জয়পুরের ঘাগরায় এ দিন থেকেই আনুষ্ঠানিক প্রচার শুরু করেছেন তৃণমূলের জেলা সভাপতি শান্তিরাম মাহাতোর ভাইপো মেঘদূত মাহাতো। কুড়মালি ভাষায় কথাবার্তা বলতে বলতে পৌঁছে গিয়েছেন ভোটারদের উঠোনে।

নিতুড়িয়া শিল্পাঞ্চলের ছবি অবশ্য কিছুটা ভিন্ন। পারবেলিয়া ইসিএল মাঠে বারপুজোর আয়োজন করেছিল স্থানীয় সরস্বতী ক্লাব। এখানে মধ্যমণি এলাকার প্রয়াত তৃণমূল নেতা শশিভূষণপ্রসাদ যাদবের ভাই নিতুড়িয়া পঞ্চায়েত সমিতির বিদায়ী সভাপতি শান্তিভূষণপ্রসাদ যাদব। তাঁর কথায়, ‘‘এই দিনে ক্রীড়াপ্রেমী, প্রাক্তন খেলোয়াড়-সহ সকলেই মাঠে আসেন। সকলের সঙ্গে দেখা হয়, জনসংযোগটা উপরি পাওনা।’’

বুধবার তাঁর তালুকে মানবাজারে কর্মিসভা করতে আসছেন দলের জেলা পর্যবেক্ষক তথা যুব সভাপতি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। তাই দলের জেলা কমিটির সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট সুজয় বন্দ্যোপাধ্যায়ের ব্যস্ততা তুঙ্গে। রবিবার রাস্তায় তোরণ তৈরি, ব্যানার-ফ্লেক্স লাগানোর কাজ দেখভালের পরে সন্ধ্যায় পুঞ্চার দলীয় কার্যালয়ে কর্মীদের নিয়ে মিষ্টিমুখ করে নববর্ষের শুভেচ্ছা জানান তিনি। সুজয়বাবুর কথায়, ‘‘সকলের সঙ্গে সকলের দেখা, মিষ্টিমুখ এটাই তো আমাদের সংস্কৃতি। দলের প্রবীণ কর্মীদের সঙ্গেও কত কথা হল।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE