Advertisement
E-Paper

জাতি-শংসাপত্রের নতুন নিয়মে বিপাকে বিরোধী

বিরোধীদের দাবি, এমনিতে শাসকদলের দাঁড়িয়ে থাকা ‘উন্নয়ন’ উপেক্ষা করে মনোনয়ন দাখিল করাটাই মস্ত চ্যালেঞ্জ। রক্তাক্ত হতে হচ্ছে। সেই চ্যালেঞ্জ আরও কঠিন করেছে কমিশনের সিদ্ধান্ত।

দয়াল সেনগুপ্ত

শেষ আপডেট: ০৮ এপ্রিল ২০১৮ ০২:২৬
প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

‘প্রভিশনাল’ বা কাঁচা জাতিগত শংসাপত্রে চলবে না। ত্রি-স্তরীয় পঞ্চায়েত নির্বাচনে সংরক্ষিত আসনে মনোনয়ন দাখিল করতে হলে দিতে হবে প্রথামাফিক শংসাপত্র। নির্বাচন কমিশনের এই ফরমানেই বিপাকে বিরোধী শিবির। বিরোধীদের দাবি, এমনিতে শাসকদলের দাঁড়িয়ে থাকা ‘উন্নয়ন’ উপেক্ষা করে মনোনয়ন দাখিল করাটাই মস্ত চ্যালেঞ্জ। রক্তাক্ত হতে হচ্ছে। সেই চ্যালেঞ্জ আরও কঠিন করেছে কমিশনের সিদ্ধান্ত।

কেন এমন কথা বলছেন বিরোধীরা?

সিপিএম, বিজেপি ও কংগ্রেসের তরফে ব্যাখ্যা: মহিলাদের জন্য ৫০ শতাংশ আসন সংরক্ষিত। তাঁদের মধ্যে যাঁদের এ বার নির্বাচনে প্রার্থী করার কথা ভাবা হয়েছে, সেই তফসিলি জাতি, উপজাতি, ওবিসি-ভুক্ত বহু মহিলারই জাতিগত শংসাপত্র নেই। শুধু মহিলারা নন, জাতিগত শংসাপত্র নেই মনোনীত অনেক পুরুষ প্রার্থীদেরও। সেই শংসাপত্র এখন বের করাই শক্ত হয়ে দাঁড়িয়েছে। মনোনয়নে মাত্র তিনটি দিন বাকি রয়েছে। এখনও বহু আসনে প্রার্থী দেওয়া বাকি। শাসকদলের বাধা ঠেলে শেষ পর্যন্ত মনোনয়ন করা গেলও, শংসাপত্রের অভাবে দাখিল করা মনোনয়নই না বাতিল হয়ে যায়।

প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, গ্রাম পঞ্চায়েতের মোট ২২৪৭টি আসনের মধ্যে ৬৬৭টি আসন সংরক্ষিত তফসিলি জাতির জন্য। তার মধ্যে মহিলাদের জন্য সংরক্ষিত ৩০৪টি আসন। তফসিলি উপজাতির জন্য সংরক্ষিত ১৪২টি আসনের মধ্যে মহিলা সংরক্ষিত আসন ৭১টি। ওবিসি সংরক্ষিত ২০৪টি আসনের মধ্যে ৮৭টি আসন মহিলাদের জন্য সংরক্ষিত। জানা গিয়েছে, আগের নির্বাচনগুলিতে এমন প্রার্থীদের জন্য প্রভিশনাল বা কাঁচা জাতিগত শংসাপত্র দেওয়ার ব্যবস্থা থাকত। বিডিও অফিসে আবেদন করলে মহকুমাশাসকের কাছে থেকে প্রার্থীকে শুধু ভোটে লড়ার জন্যই দেওয়া হত ওই শংসাপত্র। এ বার নিয়ম মেনেই এক জনকে জাতিগত শংসাপত্রের আবেদন জানতে হবে। অনলাইনে আবেদন করা যাবে।

সিপিএমের জেলা সম্পাদক মনসা হাঁসদা, বিজেপির জেলা সভাপতি রামকৃষ্ণ রায়দের দাবি, ‘‘জাতিগত শংসাপত্রের জন্য কেউ আবেদন করলে আধার, ভোটার কার্ড লাগছে। এর সঙ্গে লাগছে আয়-ব্যয়ের হিসেব এবং বংশতালিকায় স্থানীয় পঞ্চায়েত প্রধানের সই। কারও আধার না থাকলে লাগছে প্রধানের কাছ থেকে স্থায়ী বাসিন্দার শংসাপত্রও। যেখানে বিরোধীদের ঠেকাতে মরিয়া শাসকদল, সেখানে শাসকদলের প্রধান বিরোধী দলের প্রার্থীদের শংসাপত্র ও সই সহজে দেবেন না সেটাই স্বাভাবিক। বহু জায়গায় প্রধানের দেখাই পাওয়া যাচ্ছে না। ফলে প্রতিনিয়ত সমস্যায় পড়তে হচ্ছে।’’

শংসাপত্র দেওয়ার ক্ষেত্রে শাসকদলের গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধানরা বিরোধীদের প্রতি ভিন্ন নীতি নিচ্ছেন, এই অভিযোগ না মানলেও নিয়ম বদলানোয় যে সময় বেশি লাগছে সেটা শাসকদলের নেতারাও আড়ালে মেনে নিয়েছেন। প্রার্থীদের মনোনয়ন করানোর কাজে যুক্ত এক নেতার কথায়, ‘‘আগে মনোনয়নের সঙ্গে জাতিগত শংসাপত্রের জন্য আবেদনের হার্ডকপি বিডিওর কাছে জমা দিলেই মিলত প্রভিশনাল শংসাপত্র। এ বার নিয়ম বদলে অন্তত দু’দিন কাগজপত্র জোগাড়, প্রধানের সই পেতেই খরচ হচ্ছে।’’ বিরোধীদের ভয় ঠিক এখানেই। তাদের দাবি, বেশির ভাগ মনোনয়ন জমা বাকি। শেষবেলায় এত কিছু কী ভাবে করা সম্ভব? সঙ্গে প্রধানের সই নেওয়ার ঝক্কি থাকছে। এটা আসলে বিরোধীদের মনোনয়ন না করতে দেওয়ার কৌশল।

জেলা প্রশাসন জানাচ্ছে, অনলাইনে আবেদনের সঙ্গে প্রয়োজনীয় নথি ঠিক থাকলে আবেদনের ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে শংসাপত্র দেওয়ার চেষ্টা হবে। বিরোধীদের প্রশ্ন, এত সংখ্যক শংসাপত্র দেওয়ার কাজটা কী এত সহজ? জেলাশাসক পি মোহন গাঁধী বলছেন, ‘‘আবেদন তো করুন। তার পরে তো এই প্রশ্ন উঠবে।’’ তাঁর সংযোজন, ‘‘কারও যদি আধার, ভোটার কার্ড থাকে, তাঁরা যদি প্রধানের সই না পান তা হলেও চলবে। শুধু ঠিক ভাবে আবেদন করলে জাতিগত শংসাপত্র পেতে সমস্যা হবে না।’’

West Bengal Panchayat Elections 2018 Provisional Certificate Opposition
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy