Advertisement
E-Paper

মূর্তি-কাণ্ডে জড়াল বিজেপি কর্মীর নাম

এই ঘটনায় ‘রাজনৈতিক চক্রান্ত’ দেখছে বিজেপি।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৩ জুলাই ২০২০ ০১:০৫
উদ্বোধনের পরের দিন সকালে এ ভাবেই পড়েছিল মূর্তি। —নিজস্ব চিত্র

উদ্বোধনের পরের দিন সকালে এ ভাবেই পড়েছিল মূর্তি। —নিজস্ব চিত্র

হুল দিবসের রাতে মন্ত্রীর গ্রামে কানহোর মূর্তি ভাঙার ঘটনায় নাম জড়াল এক বিজেপি কর্মীর। পুরুলিয়ার মানবাজার থানার কাদলাগোড়া জুনিয়র হাইস্কুল চত্বরে মঙ্গলবার রাতে কানহোর মূর্তি ভাঙার ঘটনায় বৃহস্পতিবার ওই গ্রামেরই বাসিন্দা বৈদ্যনাথ মান্ডির বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ দায়ের করেছে ‘সিধু কানু মেলা কমিটি’। পুলিশ জানিয়েছে, অভিযুক্ত পলাতক। এসডিপিও (মানবাজার) আফজল আবরার বলেন, ‘‘মূর্তি ভাঙার তদন্ত শুরু হয়েছে। অভিযুক্তের খোঁজ চলছে।’’

যদিও এই ঘটনায় ‘রাজনৈতিক চক্রান্ত’ দেখছে বিজেপি। দলের জেলা সভাপতি বিদ্যাসাগর চক্রবর্তীর দাবি, ‘‘সিধো-কানহোকে সাঁওতাল যুবকেরা ভগবান বলে মানেন। বৈদ্যনাথ এ ঘটনায় কোনও ভাবেই জড়িত নন। তিনি এলাকায় সক্রিয় ভাবে বিজেপির কর্মসূচিতে যুক্ত বলেই তাঁকে মিথ্যা অভিযোগে ফাঁসানো হচ্ছে। তৃণমূলের দলীয় কোন্দলের জেরে এমনটা ঘটে থাকতে পারে।’’

যদিও কাদলাগোড়ার বাসিন্দা অনগ্রসর শ্রেণিকল্যাণ দফতরের প্রতিমন্ত্রী সন্ধ্যারানি টুডুর স্বামী তথা জেলা পরিষদের শিক্ষা কর্মাধ্যক্ষ গুরুপদ টুডুর দাবি, ‘‘তৃণমূলের নামে মিথ্যা অভিযোগ তুলছে বিজেপি। বৈদ্যনাথ নিজে যে কানহোর মূর্তি ভেঙেছেন, সে কথা মেলা কমিটির ডাকা সভায় তিনি স্বীকার করেছেন। তবে কেন ভাঙলেন, তা কবুল করেননি।’’ ঘটনার সঙ্গে লোকসভা ভোটের আগে কলকাতায় বিদ্যাসাগর কলেজে বিজেপি কর্মীদের বিরুদ্ধে বিদ্যাসাগরের মূর্তি ভাঙার অভিযোগের প্রসঙ্গ টেনেছেন স্থানীয় কিছু তৃণমূল কর্মী।

তবে রাজনীতিতে না জড়িয়েও পুরুলিয়া ও বাঁকুড়া জেলার বিভিন্ন সংগঠন এ দিন ওই ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়ে জড়িতদের শাস্তির দাবি তুলে প্রশাসনের দ্বারস্থ হয়েছে।

বছর তিনেক আগে সাঁওতাল নায়ক সিধো ও কানহোর মূর্তি কাদলাগোড়া স্কুল চত্বরে বসানো হয়। প্রতি বছর হুল দিবসে স্কুল চত্বরে দিন-রাত ধরে অনুষ্ঠান করা হয়। এ বার করোনা-আবহে ভিড় এড়াতে অনুষ্ঠান পালন করা হয় স্কুল থেকে কিছুটা দূরে। ফলে, মঙ্গলবার রাতে পাঁচিলবিহীন স্কুল চত্বর ফাঁকা ছিল। বুধবার সকালে গ্রামবাসীর নজরে আসে সিধোর মূর্তি ঠিক থাকলেও, কানহোর মূর্তি মাটিতে পড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

গুরুপদবাবু বুধবারই মৌখিক ভাবে পুলিশের কাছে বৈদ্যনাথের নামে অভিযোগ করেন। যদিও অভিযোগ মানেননি বিজেপি নেতৃত্ব। তবে কাদলাগোড়া, কুন্দরু ও বুকঠেলা গ্রামের বাসিন্দাদের নিয়ে গঠিত মেলা কমিটির নেতৃত্ব বিষয়টি নিয়ে বুধবার ও বৃহস্পতিবার আলোচনায় বসেন। মেলা কমিটির অন্যতম কর্মকর্তা বিভূতিভূষণ হাঁসদা ও যজ্ঞেশ্বর টুডু থানায় লিখিত অভিযোগ জানান, বুধবার বৈদ্যনাথ তাঁদের কাছে স্বীকার করেছেন, তিনিই কানহোর মূর্তি ভেঙেছেন। তাঁদের বক্তব্য, ‘‘আমরা জরিমানা বা শাস্তির বিধান দিতে পারি না। তাই পুলিশকে বৈদ্যনাথকে গ্রেফতার করে শাস্তি দিতে অনুরোধ জানিয়েছি।’’

এ দিন গ্রামে গিয়ে বৈদ্যনাথের দেখা মেলেনি। বাড়িতে খোঁজ করলে এক কিশোরী বেরিয়ে দাবি করে, বৈদ্যনাথ বাড়িতে নেই। সকালেই বেরিয়ে গিয়েছেন। মোবাইল ফোন না থাকায় তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।

তবে বিজেপির মানবাজার ১ মণ্ডল সভাপতি বাণীপদ কুম্ভকারের দাবি, ‘‘আমরাও চাই, মূর্তি ভাঙার প্রকৃত দুষ্কৃতীর শাস্তি হোক। কিন্তু বৈদ্যনাথ মন্ত্রীর গ্রামের যুবক হয়েও সক্রিয় ভাবে বিজেপি করায় তৃণমূল তাঁকে মিথ্যা মামলায় ফাঁসাল।’’

এ দিন ‘ভারত জাকাত মাঝি পারগানা মহল’ মানবাজার মহকুমা অফিসে স্মারকলিপি দেয়। সংগঠনের মানবাজার তালুকের তরফে রঞ্জিত টুডু বলেন, ‘‘দোষিকে শাস্তি দিতেই হবে।’’ পুরুলিয়ায় জেলাশাসকের অফিসে স্মারকলিপি দিয়ে ‘ভারত জাকাত মাঝি পারগানা জুয়ান মহল’-এর জেলা সভাপতি রাজেন টুডু প্রশাসনকে কানহোর মূর্তি পুনর্নিমাণের আর্জি জানান। মানবাজার মহকুমা অফিসের ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট নীলাঞ্জন তরফদার বলেন, ‘‘পুলিশকে তদন্ত করে ব্যবস্থা নিতে বলেছি।’’

বাঁকুড়ার রানিবাঁধের তৃণমূল বিধায়ক জ্যোৎস্না মান্ডি এ দিন কালো ব্যাজ পরে সাংবাদিক বৈঠকে দাবি করেন, ‘‘মূর্তি ভাঙার ঘটনায় যাঁরাই যুক্ত থাকুক, দ্রুত তাঁদের চিহ্নিত করে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে।’’

BJP Kanhu Murmu
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy