তফসিলি জাতি, জনজাতি-সহ তথাকথিত সমাজের পিছিয়ে পড়া বর্গের মানুষের মন টানতে সংবিধান প্রণেতা বি আর অম্বেডকরের শরণাপন্ন হচ্ছে গেরুয়া শিবির। তাঁকে সামনে রেখেই আসন্ন বিধানসভা ভোটের আগে ময়দানে নামতে চলেছেন জেলা বিজেপি নেতৃত্ব।
দলীয় সূত্রে খবর, সম্প্রতি কলকাতায় দলের প্রতিটি সাংগঠনিক জেলা থেকে এক জনকে বেছে নিয়ে অম্বেডকরের জীবন ও কর্ম সম্পর্কে ওয়াকিবহাল করতে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। প্রশিক্ষিতেরা নিজ নিজ এলাকায় অম্বেডকর নিয়ে আয়োজিত সভায় বক্তব্য রাখবেন। অম্বেডকরের নীতি-আদর্শের সঙ্গে দলের মানসিকতার কোথায় কোথায় মিল রয়েছে, কেন্দ্রে দীর্ঘ কংগ্রেস শাসনে কী ভাবে দলিতদের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন স্তব্ধ ছিল, বর্তমানে কেন্দ্রীয় সরকারের নীতিতে চলে কী ভাবে প্রকৃত উন্নয়ন সম্ভব, এমন নানা বিষয় তুলে ধরা হবে।
এ বারে জেলা জুড়ে অম্বেডকর জয়ন্তীতে বেশ সক্রিয় ভূমিকায় দেখা গিয়েছে বিজেপিকে। অম্বেডকরের মূর্তি পরিষ্কার করা থেকে শুরু করে তাঁর জন্মদিনে বিভিন্ন অনুষ্ঠানও করেছে তারা। আগামী কাল, শনিবার বিষ্ণুপুর শহরের একটি লজে অম্বেডকরকে নিয়ে সম্মেলন করছে বিজেপি। বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত তফসিলি জাতি, জনজাতির ১০০ জনকে সেখানে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। বিজেপির বিষ্ণুপুর সাংগঠনিক জেলা সভাপতি সুজিত অগস্তি বলেন, “বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলি এত দিন তফসিলি জাতি, জনজাতিভুক্তদের কেবল রাজনৈতিক স্বার্থে ভোট-ব্যাঙ্ক হিসেবে ব্যবহার করেছে। তাঁদের প্রকৃত উন্নয়নে কেউ এগিয়ে আসেননি। আমরা সেই কাজ করতে চাই। সেই বার্তা প্রতি ঘরে ঘরে আমরা পৌঁছে দেব।”
রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের একাংশের মত, বাঁকুড়া জেলায় তফসিলি জাতি ও জনজাতি ভোট অনেক ক্ষেত্রে জয়-পরাজয়ে নিয়ন্ত্রক ভূমিকা নেয়। ২০১৯-র লোকসভা নির্বাচনে ওই সম্প্রদায়ের বড় অংশের সমর্থন নিয়েই বিজেপি জেলায় বাজিমাত করেছিল। তবে গত লোকসভা নির্বাচনে বাঁকুড়া লোকসভা কেন্দ্রে সেই ভোট-ব্যাঙ্কের বড় অংশ তৃণমূলের দিকে ঝুঁকেছে।
আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনের আগে ‘হিন্দুত্ব’ আবেগ ও তৃণমূল সরকারের ‘দুর্নীতি’কে সামনে রেখে বিজেপি ইতিমধ্যে মাঠে নেমেছে। তবে, তফসিলি জাতি ও জনজাতিদের মন টানতে অন্য ভাবনার দরকার রয়েছে, মত দলের একাংশের। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের পর্যবেক্ষণ, অম্বেডকরকে সামনে রেখে জাতীয় রাজনীতিতে বরাবর সুফল পেয়েছে কংগ্রেস বা কংগ্রেস ভেঙে তৈরি হওয়া দলগুলি। এ বারে সেখানে থাবা বসাতে চলেছে বিজেপি। তবে বাঁকুড়ার তৃণমূল সাংসদ অরূপ চক্রবর্তীর কটাক্ষ, “বিজেপি তো অম্বেডকরের সংবিধানকেই মানে না। সংবিধান বদলে ফেলছে ওরা। অম্বেডকরের আদর্শের সঙ্গে বিজেপি কোনও ভাবে খাপ খায় না। মানুষ ওদের কথায় ভুলবে না।”
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)