Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪

টেপ রেকর্ডারে পড়া শুনে পরীক্ষা আয়েষার

আয়েষার বাড়ি সাঁইথিয়ার কুসুমযাত্রা গ্রামে। জন্মান্ধ।

প্রত্যয়ী: পরীক্ষাকেন্দ্রে আয়েষা। নিজস্ব চিত্র

প্রত্যয়ী: পরীক্ষাকেন্দ্রে আয়েষা। নিজস্ব চিত্র

অর্ঘ্য ঘোষ
সাঁইথিয়া শেষ আপডেট: ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০২:৫৯
Share: Save:

জন্ম থেকেই দু’চোখে অন্ধকার। সেই প্রতিবন্ধকতা রুখেই এগিয়ে চলেছে আয়েষা পটুয়া। অদম্য মনের জোরে এ বার সে বসেছে উচ্চ মাধ্যমিকে।

আয়েষার বাড়ি সাঁইথিয়ার কুসুমযাত্রা গ্রামে। জন্মান্ধ। তবে ওই বাধা তাকে থামাতে পারেনি জীবনের পথে। গ্রামের স্কুলে প্রাথমিকের পাঠ নিয়ে ভর্তি হয় মৃতদাসপুর হাইস্কুলে। নবম শ্রেণিতে ভর্তি হয় আমোদপুর জয়দুর্গা বালিকা বিদ্যালয়ে। ২০১৬ সালে মাধ্যমিক পরীক্ষা দেয়। ৪৩৪ নম্বর পায় সে। সেই স্কুলেই উচ্চ মাধ্যমিকে কলা বিভাগে ভর্তি হয়।

শারিরিক প্রতিবন্ধকতাই শুধু নয়, আর্থিক হরেক বাধাও রয়েছে আয়েষার। বাবা সমীর পটুয়া রাজমিস্ত্রি। তাঁর সামান্য আয়েই চলে ৬ জনের সংসার। ভাই রাকেশ পটুয়া পড়ে দশম শ্রেণিতে। দু’জনের পড়াশোনার খরচ সামলে সংসার চালাতে হিমসিম হন মা দেলেহার পটুয়া। মেয়ের জন্য আলাদা কোনও গৃহশিক্ষক রাখতে পারেননি। গ্রামেরই বিএড কলেজের ছাত্রী পল্লবী মাল মাঝেমধ্যে আয়েষাকে পড়া দেখিয়ে দিয়ে যান। আর রয়েছেন ‘স্পেশ্যাল এডুকেটর’ তারকনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়। সপ্তাহে এক দিন বাড়িতে আর দু’দিন অবর বিদ্যালয় পরিদর্শকের দফতরে আয়েষাকে পড়ান তিনি৷

অন্য দিন মেয়েটির ভরসা একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার দেওয়া একটি টেপ রেকর্ডার আর দাদু লালু পটুয়া। টেপ রেকর্ডারে প্রশ্নোত্তর শুনে দাদুর বই পড়া শুনে শুনে সব মুখস্থ করতে হয় তাকে। লালুবাবুর শিক্ষাগত যোগ্যতাও অষ্টম শ্রেণির। তবু তিনিই এখন ভরসা আয়েষার। প্রতিবন্ধতার কারণে বেশিরভাগ দিনই স্কুলে যেতে পারত না আয়েসা। এ ভাবেই পড়ত বাড়িতেই।

তারকনাথবাবু জানান, উচ্চ মাধ্যমিকের পড়াশোনা শুনে শুনেই পড়া মনে রাখতে হয়েছে আয়েষাকে। কারণ মাধ্যমিক পর্যন্ত ব্রেইলের বই পাওয়া গেলেও উচ্চ মাধ্যমিকের জন্য তা মেলেনি। আয়েষার বাবা বলেন, ‘‘অনেক চিকিৎসা করানো হয়েছে। কিন্তু দৃষ্টিশক্তি ফেরেনি। টাকার অভাবে পড়াশোনায় তেমন ভাবে সাহায্য করতে পারিনি। নিজের চেষ্টাতেই মেয়ে পড়াশোনা চালিয়ে যাচ্ছে।’’

ভবিষ্যতে প্রতিবন্ধীদের স্কুলে শিক্ষিকা হতে চায় আয়েষা। সে বলে, ‘‘শুধু নিজের পায়ে দাঁড়ানোর জন্যই নয়, আমার মতো প্রতিবন্ধকতার সঙ্গে লড়াই করা ছেলেমেয়েদের পাশে দাঁড়ানোর জন্যই শিক্ষিকা হতে চাই। কারণ ওদের কষ্টটা আমি জানি।’’ ওই ছাত্রীর সম্পর্কে আশাবাদী স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা চন্দনা সাহা সর্দার। তিনি বলেন, ‘‘অনমনীয় মনোবলই এক দিন ঠিক আয়েষাকে লক্ষ্যে পৌঁছে দেবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Sainthia Blind Higher Secondary
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE