Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪
কোমর সমান জল বোলপুরের ওয়ার্ডে

ক্ষোভের মুখে পুরসভা

আশঙ্কা ছিলই। নিকাশি ব্যবস্থা বেহাল হয়ে পড়ায় মাঝে মধ্যেই বৃষ্টিতে নাকাল হচ্ছিলেন পুরবাসী। আর এই ভরা বর্ষা সেই সমস্যা আরও বাড়িয়ে চরম দুর্ভোগে ফেলল বাসিন্দাদের। শুক্রবার বোলপুর শহর ঘুরে কোথাও হাঁটুজল, কোথাও আবার কোমর সমান জল জমে রয়েছে দেখা গেল।

বোলপুর

বোলপুর

নিজস্ব সংবাদদাতা
বোলপুর শেষ আপডেট: ১১ জুলাই ২০১৫ ০০:৪৪
Share: Save:

আশঙ্কা ছিলই। নিকাশি ব্যবস্থা বেহাল হয়ে পড়ায় মাঝে মধ্যেই বৃষ্টিতে নাকাল হচ্ছিলেন পুরবাসী। আর এই ভরা বর্ষা সেই সমস্যা আরও বাড়িয়ে চরম দুর্ভোগে ফেলল বাসিন্দাদের। শুক্রবার বোলপুর শহর ঘুরে কোথাও হাঁটুজল, কোথাও আবার কোমর সমান জল জমে রয়েছে দেখা গেল।

টানা বৃষ্টির জেরে বৃহস্পতিবার দুপুর থেকেই জল জমছিল বোলপুরের বিভিন্ন এলাকায়। বৃষ্টির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে শহরের বিভিন্ন এলাকায় জমে যাওয়া জলের পরিমাণও বাড়তে থাকে। আর তাতেই পুরসভার ৪, ৫ নম্বর-সহ একাধিক ওয়ার্ড এবং লাগোয়া শান্তিনিকেতনের বহু এলাকায় জল জমে বাসিন্দাদের দুর্ভোগ পৌঁছয় চরমে। পরিস্থিতি এমনই অবস্থায় পৌঁছয় যে শহরের জামবুনি বাসস্ট্যান্ড এলাকায় তৃণমূলের উপপুরপ্রধান নরেশ বাউরিকে পেয়ে ঘিরে ধরেন ক্ষোভ জানাতে শুরু করেন বাসিন্দারা। দ্রুত জল নিকাশির দাবি জানাতে থাকেন তাঁরা।

রামপুরহাট

শুধু তাই নয়, ক্ষোভ এত দূর পৌঁছেছে যে, এ দিন ঘণ্টা দেড়েক বোলপুর-সিউড়ি রাস্তার জামবুনি বটতলায় অবরোধ করেন বাসিন্দারা। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে বোলপুর থানার পুলিশ এবং পুরপ্রধান সুশান্ত ভকত ও আশপাশের একাধিক ওয়ার্ডের কাউন্সিলরদের সেখানে ছুটে যেতে হয়। তাঁদেরও বাসিন্দাদের ক্ষোভের মুখে পড়তে হয়। সামিল হয়েছিলেন বাসস্ট্যান্ডের দোকানদার এবং বাস কর্মীরাও। প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া-সহ দ্রুত সমস্যা সমাধানের আশ্বাসের পরে অবরোধ ওঠে। সকাল সাড়ে ন’টা নাগাদ ওই রাস্তায় স্বাভাবিক হয় যান চলাচল শুরু হয়। তবে চিকিৎসা পরিষেবা, পানীয় জল, দুধ সরবরাহ করার মতো জরুরি পরিষেবার কাজে যাওয়া গাড়ি এবং রাজ্য সরকারি আধিকারিকদের অবরোধের বাইরে রেখেছিলেন আন্দোলনকারীরা।

প্রসঙ্গত, বোলপুর পুরশহরের নিকাশি ব্যবস্থা বিপর্যস্তের অভিযোগ দীর্ঘদিনের। ইতিমধ্যেই বেশ কিছু ওয়ার্ডে নিকাশি নালায় প্রয়োজনীয় সংস্কার করা-সহ কোথাও কোথাও পুরকর্তৃপক্ষের উদ্যোগে তৈরি হয়েছে নতুন নালা। অভিযোগ, ওই নিকাশি নালা সংস্কার বা তৈরি করার সময় ঢাল ঠিক রাখা হয়নি। যার জেরে নালায় জল জমে যাচ্ছে। ফলে বৃষ্টির জল বের হওয়া দূরের কথা, শুকনো দিনে নোংরা জলও নানা উপচে রাস্তায় এসে পডছে। স্থানীয় কাউন্সিলার থেকে উপপুরপ্রধান এবং পুরপ্রধানের কাছে বারবার আবেদন জানিয়েছেন বাসিন্দারা। সমস্যা মেটেনি।

বাসিন্দারা জানাচ্ছেন, খোদ উপপুরপ্রধান নরেশচন্দ্র বাউরির ৬ নম্বর ওয়ার্ডে কোথাও কোমর-সমান জল জমে গিয়েছে। লাগোয়া কংগ্রেসের রিনা বীরবংশীর ৫ নম্বর ওয়ার্ডেও একই ছবি। সেখানে আবার কোথাও কোমরের উপরে জল উঠে গিয়েছে। নিজের ওয়ার্ড এবং লাগোয়া ওয়ার্ডে জল জমা এবং বাসিন্দাদের ক্ষোভের খবর পেয়ে সাতসকালে এলাকায় যান নরেশবাবু। বাসিন্দাদের কটাক্ষ, ‘‘আমাদের ক্ষোভের আঁচ পেয়েই উপপুরপ্রধান এলাকা থেকে সরে পড়েন।’’ তারপরেই স্থানীয় বাসিন্দা, জামবুনি বাসস্ট্যান্ডের দোকানদার এবং কর্মচারীদের একাংশের ক্ষোভ বাড়তে থাকে। যদিও এলাকা থেকে সরে যাওয়ার অভিযোগ মানতে চাননি উপপুরপ্রধান।

সাঁইথিয়া

এ দিন ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা গেল, বোলপুরের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের জামবুনি উদয়নপল্লির বাসিন্দা আহমেদ রেজা হাসানের বাড়ির একতলার ঘরে হাঁটুর উপর জল। ওই পাড়ার তারাশঙ্কর মান্ডি, দীপক ঘোষ, রমেশ রায়েদের মতো প্রায় চল্লিশটি বাড়িতে জল ঢুকেছে। তাঁরা জানান, সারারাত ধরে ঘরের ভিতর জল ঢুকছে। ভয়ে অনিদ্রায় রাত কেটেছে। একই ছবি ৫ নম্বর ওয়ার্ডের ইন্দিরাপল্লি, খাসপাড়া এলাকায়। বেশ কিছু মাটির বাড়িতে জল ঢুকেছে। এ বার তাঁরা বাড়ি ভেঙে পড়ার আশঙ্কা করছেন। জল ঢুকেছে টগরি বিবি, গোলাপ শেখ, ক্রান্তি শেখ এবং নারায়ণ কুনুইদের মাটির বাড়িতে। কংগ্রেসের ব্লক সভাপতি তথা ৫ নম্বর ওয়ার্ডের প্রাক্তন কাউন্সিলর মহম্মদ জাহাঙ্গীর এবং বর্তমান কাউন্সিলর রিনাদেবীর আশঙ্কা, ‘‘জমা জল থেকে বিদ্যুতের শটসার্কিট হওয়ারও আশঙ্কা রয়েছে। পুরসভাকে জানিয়েছি।’’

বাসিন্দাদের মতে, ফাঁকা এলাকায় এখন বড় বড় বাড়ি, বেআইনি নির্মাণ, দোকান তৈরি হচ্ছে। এ দিকে নিকাশি ব্যবস্থাও সেই অনুযায়ী তৈরি করা হচ্ছে না। ফলে জল বের হতে না পেরে জলবন্দি হয়ে পড়ছেন বাসিন্দারা। বাসিন্দাদের ক্ষোভ, ‘‘ঘর থেকে বের হওয়া যাচ্ছে না। কেউ অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে হাসপাতালেও নিয়ে যাওয়া যাবে না।’’ উদয়নপল্লির এই অবস্থার জন্য আবার বাসিন্দারা অভিযোগ করছেন, গীতাঞ্জলির পশ্চিম দিকে এবং আরএমসি-র পাশ দিয়ে যে নিকাশি নালা ছিল তা বুজে গিয়েছে। নালার উপর দোকান গজিয়ে ওঠায় শান্তিনিকেতনের রাস্তার উপর জল জমেছে কোমর উঁচু। স্নাতক এবং স্নাতকোত্তর স্তরে ভর্তির সময় বাইরে থেকে আসা পড়ুয়া এবং তাঁদের অভিভাবকেরা চরম হেনস্তার মধ্যে পড়েছেন।

পুরপ্রধান সুশান্ত ভকত বলেন, “পরিস্থিতি সরজমিনে দেখে এসেছি। পরিকল্পনা মাফিক শহরের নিকাশি নালার ব্যবস্থা করা হবে। বর্ষা একটু থামলে, অস্থায়ী ভাবে কী করা যেতে পারে তা নিয়ে আলোচনায় বসব।’’

ছবি: বিশ্বজিৎ রায়চৌধুরী, সব্যসাচী ইসলাম এবং অনির্বাণ সেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE