Advertisement
১৯ জুন ২০২৪

সিলিন্ডার বিস্ফোরণে জখম ভাই

গ্যাস সিলিন্ডারে আগুন লাগতেই রাস্তার পাশের নালায় গড়িয়ে দিয়েছিলেন কেব্‌ল লাইনের কর্মীরা। হইচই শুনে গ্রামের লোকজনের সঙ্গে ভিড় করেছিলেন দুই ভাই-বোন। হঠাৎই বিকট শব্দে ফেটে যায় সিলিন্ডার।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কেন্দা শেষ আপডেট: ২৯ নভেম্বর ২০১৭ ০০:৩৫
Share: Save:

গ্যাস সিলিন্ডারে আগুন লাগতেই রাস্তার পাশের নালায় গড়িয়ে দিয়েছিলেন কেব্‌ল লাইনের কর্মীরা। হইচই শুনে গ্রামের লোকজনের সঙ্গে ভিড় করেছিলেন দুই ভাই-বোন। হঠাৎই বিকট শব্দে ফেটে যায় সিলিন্ডার। সিলিন্ডারের লোহার পাতের টুকরো ছিটকে গুরুতর জখম হয় বছর বারোর সেই বালক। ভাইকে রক্তাক্ত দেখে জ্ঞান হারায় দশম শ্রেণির ছাত্রী দিদিরও। সোমবার সন্ধ্যায় কেন্দা থানার মাঠা গ্রামে দুর্ঘটনাটি ঘটেছে।

পার্থসারথি মাহাতো ও তার দিদি মল্লিকা মাহাতোকে প্রথমে পুরুলিয়া সদর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। পার্থর আঘাত গুরুতর হওয়ায় সেখান থেকে তাকে রাঁচীর একটি হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। মঙ্গলবার অবশ্য তার অবস্থার উন্নতি হয়েছে বলে জানা গিয়েছে। মল্লিকার মানসিক ধকল এখনও কাটেনি বলে, এ দিন তাকে পুরুলিয়া সদর হাসপাতালেই ভর্তি রাখা হয়েছে।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, মাঠা গ্রামে মানবাজার-পুরুলিয়া রাস্তার পাশে গর্ত করে বেসরকারি টেলিকম সংস্থার হয়ে কেব্‌ল পাতছিলেন ঠিকা সংস্থার কর্মীরা। ওই এলাকাতেই একটি বাড়িতে তাঁরা সন্ধ্যায় রান্না করছিলেন। সেই সময়েই বিপত্তি বাধে।

এক কর্মীর কথায়, ‘‘গ্যাস সিলিন্ডারে রান্না করছিলাম আমরা। হঠাৎ সিলিন্ডারের মুখ দিয়ে হিস হিস করে গ্যাস বেরনোর শব্দ কানে আসে। দেখি, সিলিন্ডারের মুখে কাছে আগুন লেগে গিয়েছে। বিপদ বুঝে ওভেনের মুখ বন্ধ করে দিই। সিলিন্ডারটা কোনও রকমে আলাদা করে দুই কর্মী মিলে সেটা কিছুটা টেনে নিয়ে গিয়ে রাস্তার পাশে নালায় ফেলে দিই। আমাদের চেঁচামেচি শুনে গ্রামের কিছু লোক বেরিয়ে এসেছিলেন। তাঁদের মধ্যে ওই দুই ভাই-বোনও ছিল। বিপদের আশঙ্কায় আমরা চেঁচিয়ে সবাইকে দূরে থাকতে বলেছিলাম। কিন্তু তাতেও বিপদ ঠেকানো গেল না।’’

মাঠা গ্রামের বাসিন্দা আনন্দ মাহাতো, বলরাম মাহাতো বলেন, ‘‘কেব্‌ল লাইনের কর্মীরা কাজ শেষে কয়েক দিন ধরে দেখছিলাম রাস্তার ধারে একটা বাড়িতে রান্না করতেন। সোমবার সন্ধ্যায় ওদের চেঁচামেচি শুনে ছুটে আসি। দেখি দু’জনে মিলে ধরাধরি করে সিলিন্ডারটা নিয়ে এসে নালার ধারে ফেলে দিল। সিলিন্ডারটার মুখে আগুন দেখে আমরা কেউ কাছে যাইনি। দূর থেকে লক্ষ্য করছিলাম। এই সময় হঠাৎ কান ফাটানো আওয়াজ করে সিলিন্ডারটা ফেটে গেল। একটা বিরাট আগুনের গোলা যেন চারদিক গ্রাস করে নিল। ভয়ে আমরা সবাই মাটিতে শুয়ে পড়েছিলাম।’’

ঘটনাস্থল থেকে প্রায় একশো মিটার দূরে পার্থ-মল্লিকাদের বাড়ি। তার বাবা পেশায় কৃষক লাল্টু মাহাতোর কথায়, ‘‘অনেকের সঙ্গে আমরা দূর থেকে দেখছিলাম, কী হয়। বিস্ফোরণের ধকল কাটতেই শুনি একটা ছেলে আহত হয়েছে। ছুটে গিয়ে দেখি, আমার ছেলেই চোট পয়ে মাটিতে পড়ে রয়েছে। ওর সারা শরীর রক্তে ভেসে যাচ্ছিল। আমার মেয়ে তা দেখে জ্ঞান হারিয়ে লুটিয়ে পড়ল। কী করব ভেবে পাচ্ছিলাম না।’’

কিছুক্ষণের মধ্যেই সেখানে এসে পৌঁছয় কেন্দা থানার পুলিশ। স্থানীয় বাসিন্দা ও পুলিশ কর্মীরা দুই ভাই-বোনকে গাড়িতে তুলে পুরুলিয়া সদর হাসপাতালে পাঠান। পুলিশ জানিয়েছে, সিলিন্ডারের ধাতব টুকরো ছিটকে পার্থের মাথায় লেগেছে।

রাঁচীতে ছেলের সঙ্গে রয়েছেন লাল্টুবাবু। এ দিন তিনি বলেন, ‘‘ছেলের কপাল ও মাথার বাঁ দিকে অনেকখানি কেটে গিয়েছে। ডাক্তাররা স্ক্যান করিয়ে জানিয়েছেন, বিপদ কেটে গিয়েছে। ছেলেও এ দিন অল্প কথাবার্তা বলছে।’’

পুরুলিয়ায় মল্লিকার সঙ্গে রয়েছেন পড়শি রাধু মাহাতো, অজিত মাহাতো। রাধুবাবু বলেন, ‘‘মেয়েটা মনে এতই আঘাত পেয়েছে, যে কথা বলতে পারছে না। চিকিৎসকেরা ওকে এখনই ছাড়তে চাইছেন না।’’

হঠাৎ এই বিপদে আতান্তরে পড়েছেন লাল্টুবাবু। কেন্দার বাসিন্দা সিপিএম নেতা অনিল মাহাতো বলেন, ‘পরিবারটির আর্থিক অবস্থা ভাল নয়। দু’ভাই-বোনের চিকিৎসার জন্য টাকার প্রয়োজন ছিল। ওই ঠিকা সংস্থার কর্মীরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে টাকার ব্যবস্থা করেছেন।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Gas cylinder explosion Injured
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE