Advertisement
E-Paper

বাসে পিষে ছাত্রীর মৃত্যু, জ্বলল জামবুনি

বিশ্বভারতীর শিক্ষাসত্রের দ্বিতীয় শ্রেণির ওই ছাত্রীর মৃত্যু ঘিরেই এরপর কার্যত রণক্ষেত্র হল জামবুনি। জ্বালানো হল বাস। মায়ের অসহায় কান্না দেখে থমকে গেলেন আশেপাশের মানুষ। চোখের সামনে ওই দুর্ঘটনা দেখে জ্ঞান হারান এক যুবকও।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৬ এপ্রিল ২০১৯ ০৭:৪০
অগ্নিগর্ভ: দুর্ঘটনার পরে দাউদাউ করে জ্বলছে সেই বাস। (ইনসেট) মৃত অঙ্কিতা পাল। শুক্রবার বোলপুরের জামবুনিতে। নিজস্ব চিত্র

অগ্নিগর্ভ: দুর্ঘটনার পরে দাউদাউ করে জ্বলছে সেই বাস। (ইনসেট) মৃত অঙ্কিতা পাল। শুক্রবার বোলপুরের জামবুনিতে। নিজস্ব চিত্র

স্কুল থেকে সাইকেলে মেয়েকে নিয়ে বাড়ি ফিরছিলেন পিউ পাল। শুক্রবার তখন সকাল পৌনে ১১টা। শ্রীনিকেতন রোড দিয়ে দু’জনে যাচ্ছিলেন বাঁধগোড়ায়। পুলিশ সূত্রে খবর, আচমকা সাইকেলের পাশে চলে আসে একটি যাত্রিবাহী বাস। চলতে চলতেই সেটির সামনের দরজা খুলে যায়। ধাক্কায় মাটিতে ছিটকে পড়েন পিউদেবী। তাঁর মেয়ে, বছর আটেকের অঙ্কিতা পড়ে যায় বাসের চাকার নীচে। জামবুনি টোল ট্যাক্সের কাছে ওই স্কুলপড়ুয়াকে পিষে দিয়ে এগিয়ে যায় বাসটি।

বিশ্বভারতীর শিক্ষাসত্রের দ্বিতীয় শ্রেণির ওই ছাত্রীর মৃত্যু ঘিরেই এরপর কার্যত রণক্ষেত্র হল জামবুনি। জ্বালানো হল বাস। মায়ের অসহায় কান্না দেখে থমকে গেলেন আশেপাশের মানুষ। চোখের সামনে ওই দুর্ঘটনা দেখে জ্ঞান হারান এক যুবকও। মৃত বালিকার দেহ উদ্ধারে বাধার মুখে পড়তে হল পুলিশকে। নামল র‌্যাফ। প্রায় ঘণ্টাচারেক ধরে পর স্বাভাবিক হয় পরিস্থিতি।

স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, পথের নিয়ম মেনেই রাস্তার একেবারে বাঁ দিক দিয়ে সাইকেল চালাচ্ছিলেন পিউদেবী। পিছনে বসে ছিল অঙ্কিতা। অভিযোগ, হাঁসরা-সিউড়ি রুটের একটি বাস বোলপুর বাসস্ট্যান্ডের দিকে বেপরোয়া গতিতে যাচ্ছিল। টোল ট্যাক্সের কাছে এসে হঠাৎ বাসের সামনের দরজা খুলে যায়। দরজায় ধাক্কা লেগে টাল সামলাতে না পেরে বাঁ দিকে পড়ে যান পিউদেবী। ডান দিকে ছিটকে পড়ে অঙ্কিতা। বাসটি না থামায় সেটির পিছনের চাকায় পিষে যায় অঙ্কিতার মাথা। ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় তার। চোখের সামনে মেয়ের মৃত্যু দেখে চিৎকার করে ওঠেন পিউদেবী।

পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, মলয় পাল এবং পিউদেবীর একমাত্র মেয়ে ছিল অঙ্কিতা। তাঁদের বাড়ি লাভপুর থানার ইন্দাসের ভরতপুর গ্রামে। পড়াশোনার জন্য পিউদেবী মেয়েকে নিয়ে বাঁধগোড়ায় ভাড়াবাড়িতে থাকতেন। মলয়বাবুর একটি মুদিখানার দোকান রয়েছে ভরতপুরে। পিউদেবীই মেয়েকে স্কুলে দিয়ে যেতেন। ছুটির পরে নিয়ে যেতেন বাড়িতে। গরম পড়ে যাওয়ায় এ দিনই শিক্ষাসত্রে সকাল সাড়ে ছ’টা থেকে ক্লাস শুরু হয়েছিল। ছুটি হয় সওয়া ১০টায়। পিউদেবী মেয়েকে নিয়ে বাঁধগোড়ার বাড়িতে ফিরছিলেন। মাঝপথেই ঘটে দুর্ঘটনা।

স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, অঙ্কিতার মৃতদেহ চাদরে ঢাকা দিয়েই বাসটিকে ঘিরে ফেলেন স্থানীয় মানুষ। যদিও চালক পালিয়ে যান। বাসে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। অভিযোগ, খবর পেয়ে দমকলের দু’টি ইঞ্জিন ঘটনাস্থলে পৌঁছলে ঢিল ছুড়ে সেটির কাচ ভেঙে দেয় উত্তেজিত জনতা। বোলপুর ও শান্তিনিকেতন থানার পুলিশ, র‌্যাফ, সিভিককর্মী এবং দমকল বাহিনী পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করে।

পুলিশের তরফে বার বার ঘোষণা করা হয়, বাসের কাছে যেন কেউ না যান। কারণ সেটিতে বিস্ফোরণের আশঙ্কা ছিল। প্রশাসনের অভিযোগ, মৃতদেহ উদ্ধার করতে গেলে পুলিশকে বাধা দেন স্থানীয়েরা। মেেয়টির বাবা না আসা পর্যন্ত মৃতদেহ নিয়ে যাওয়া যাবে না বলে দাবি করেন। পুলিশ বিষয়টি নিয়ে তদন্তের আশ্বাস দেওয়ার পরে মৃতদেহ নিয়ে যেতে দেওয়া হয়। ময়নাতদন্তের জন্য মৃতদেহটি বোলপুর মহকুমা হাসপাতালে পাঠানো হয়। পরে রেকার ভ্যান নিয়ে এসে পুড়ে যাওয়া বাসটিকে রাস্তা থেকে সরিয়ে নিয়ে যায়।

এ দিন দুপুরে বোলপুর মহকুমা হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, অঙ্কিতার বাবা এবং অন্য পরিজনের পাশাপাশি গ্রামের বাসিন্দারা সেখানে পৌঁছেছেন। কথা বলার অবস্থায় ছিলেন না মলয়বাবু। বোলপুর থানায় গিয়ে বাসের চালকের নামে লিখিত অভিযোগ করেন তাঁরা। বিকেলে মৃতদেহ গ্রামে পৌঁছতেই কান্নায় ভেঙে পড়েন গ্রামবাসী।

জেলা পুলিশের এক শীর্ষকর্তা বলেন, ‘‘পরিবারের পক্ষ থেকে নির্দিষ্ট অভিযোগ জমা পড়েছে। অভিযুক্তের খোঁজে তল্লাশি চালাচ্ছে পুলিশ।’’ এ দিন ঘটনাস্থলে গিয়েছিলেন বিশ্বভারতীর ভারপ্রাপ্ত জনসংযোগ আধিকারিক অনির্বাণ সরকার। তাঁর প্রতিক্রিয়া, ‘‘উপাচার্য নিজেও ঘটনাস্থলে যেতে চেয়েছিলেন। কিন্তু তার আগেই মৃতদেহ নিয়ে চলে যায় পুলিশ। বিশ্বভারতী পরিবার এই ঘটনায় মর্মাহত। সব দিক দিয়ে পরিবারের পাশে থাকব আমরা।’’ তিনি আরও জানান, আজ, শনিবার ইন্দাসে অঙ্কিতার বাড়ি যেতে পারেন উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তী। তার আগে সকালে শিক্ষাসত্রে একটি শোকসভা করে ছুটি ঘোষণা করা হবে।

death Accident School girl
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy