বর্ষার জলে ভেসে গিয়েছে অজয়ের এই বিকল্প রাস্তাও। —ফাইল চিত্র
সংস্কারের কাজে বারবার বন্ধ হচ্ছে অজয় সেতু। তার জেরে ক্ষতির মুখে পড়ছেন বীরভূম ও বর্ধমানের কয়েকশো ব্যবসায়ী। শেষমেশ সংস্কারের কাজ দ্রুত শেষ করার দাবিতে সরব হলেন দুই জেলার ভুক্তভোগী ব্যবসায়ীরা।
শুক্রবার দুপুরে এই মর্মে ইলামবাজারের বিডিও উৎপল পাৎসাকে স্মারকলিপি দিলেন শতাধিক ব্যবসায়ী। পরে উৎপলবাবু বলেন, ‘‘জেলা প্রশাসনের নির্দেশে সেতু সংস্কারের কাজ চলাকালীন ওই সেতু দিয়ে যে কোনও রকম যান চলাচল বন্ধ আছে। বর্ষার কারণে ওই এলাকায় বিকল্প রাস্তার ব্যবস্থাও করা যাচ্ছে না।’’ তবে, সেতু সংস্কারের কাজ দ্রুত শেষ করার ব্যাপারে সংশ্লিষ্ঠ দফতরের সঙ্গে কথা বলার আশ্বাস তিনি দিয়েছেন।
ঘটনা হল, ১৯৬২ সালের ১৭ জুন ১৪ নম্বর রাজ্য সড়কে অজয় নদের উপরে ইলামবাজারে বর্ধমান-বীরভূম সংযোগকারী এই সেতুর উদ্বোধন করেছিলেন রাজ্যের তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী বিধানচন্দ্র রায়। বীরভূম-সহ আশপাশের কিছু জেলা এবং একাধিক রাজ্যের সঙ্গে কলকাতার অন্যতম যোগাযোগের মাধ্যম পাঁচ দশকেরও পুরনো এই সেতু। অভিযোগ, দিনের পর দিন ক্ষমতার বাইরে ওই সেতু দিয়ে হাজারও মালবাহী গাড়ি যাতায়াত করতে দেওয়া হয়েছে। আবার অবৈধ ভাবে বালি তোলায় দুর্বল হয়েছে সেতুর বেশ কিছু স্তম্ভও। গত বছর সেতুর একাধিক জায়গায় ফাটল দেখা দেওয়ায় সংস্কারের জন্য যান চলাচল বন্ধ রাখে প্রশাসন। কিন্তু সংস্কার হওয়ার আট মাসের মধ্যে ফের ওই সেতুতে ফাটল দেখা দেয়। তার জেরেই গত ৩-২৯ জুন পর্যন্ত সংস্কারের জন্য ওই সেতুতে যান চলাচল বন্ধ ছিল। একই কারণে গত শুক্রবার থেকে ২০ জুলাই পর্যন্ত অজয় সেতুর উপর দিয়ে চলাচল বন্ধ করেছে প্রশাসন। অজয় সেতু নিয়ে এই সমস্যার স্থায়ী সমাধান না হওয়ায় ক্ষোভ বেড়েছে এলাকায়। যান চলাচল বন্ধে ব্যবসা মার খাওয়ায় দুর্ভোগে পড়েছেন একটা বড় অংশের ব্যবসায়ীরাও।
এ দিন ইলামবাজার ব্যবসায়ী সমিতির উদ্যোগে একজোট হন দুই জেলার শতাধিক ব্যবসায়ী। সমিতির সম্পাদক সুবল ঘোষের ক্ষোভ, ‘‘এই সেতুর উপর নির্ভর করে রুজি রুটি হয় দুই জেলার কয়েক হাজার ব্যবসায়ী এবং স্থানীয় বাসিন্দার। বারবার সেতু বন্ধ হওয়ায় বহু আর্থিক ক্ষতি হচ্ছে। ব্যবসা-বাণিজ্যের নানা জিনিসপত্র ঘুরপথে আনা ও পাঠানোর জন্য স্বাভাবিক ভাবেই খরচ বেড়ে যাচ্ছে। আবার খরচ বেড়ে যাওয়ায় চড়া দামে তা কিনতে হচ্ছে সাধারণ ক্রেতাকেও।’’ এই পরিস্থিতির বদল চেয়ে সেতু সংস্কারে গতি আনার দাবি তুলছেন সুবলবাবুরা।
ইলামবাজার ব্লকের বনভিলা, কামারপাড়া, জয়দেব, বাতিকার, হাঁসড়া, পাড়ুই ছাড়াও এই অজয় সেতুর উপরে বর্ধমানের বনকাঠি, এগারো মাইল, তিলকচন্দ্রপুর, রামনগর, বসুধা, ভুঁয়ের, মোড়বাঁধ-সহ নানা এলাকার মানুষ নির্ভরশীল। তাই বিডিও-কে স্মারকলিপি দিতে এ দিন ইলামবাজারে পৌঁছে যান লাগোয়া বর্ধমানের শ’দেড়েক ব্যবসায়ীও। বর্ধমানের বসুধার ব্যবসায়ী বীরু মিশ্র, বনকাঠির উত্তম পাত্র, তিলকচন্দ্রপুরের অশোক ঘোষ মোরবাঁধের গোপাল পোদ্দাররা বলছেন, ‘‘প্রত্যেকটা দিন আমরা ক্ষতির মুখে পড়ছি। সেতু এ ভাবে বারবার টানা বন্ধ হয়ে থাকলে আমাদের সংসার চলবে কী করে? তাই প্রশাসনের দ্বারস্থ হয়েছি।’’ এই পরিস্থিতিতে বিকল্প পথের দাবি তুলেছে ব্যবসায়ী সমিতি।
পূর্ত দফতরের (সড়ক) হাইওয়ে ডিভিশনের অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ার সমরজিৎ সরকার অবশ্য বলছেন, ‘‘আমরা কাজ শুরুর আগে সেতুতে যে পরিমাণ মেরামতির দরকার রয়েছে বলে ভেবেছিলাম, বাস্তবে কাজ করতে গিয়ে আরও কিছু জায়গা সংস্কারের প্রয়োজন রয়েছে বলে দেখা গিয়েছে। তাই আরও একটু সময় নেওয়া হয়েছে। ২০ তারিখের মধ্যেই কাজ শেষ হবে বলে আশা করছি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy