Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

হাসপাতালে অনুব্রত, ২১শে ভিড় টানার বাড়তি চ্যালেঞ্জ দলে

ভিড় বাড়াতে তাই বাড়তি চ্যালেঞ্জ জেলার তৃণমূল নেতাদের ঘাড়ে। বিশেষ করে যখন অনুব্রত মণ্ডলই হাসপাতালে! অন্য বছরগুলিতে শহিদ সমাবেশের আগে জেলা সভাপতি অনুব্রত নিজে নিয়ম করে ব্লকে ব্লকে সভা করেন।

নিজস্ব সংবাদদাতা
সিউড়ি ও নানুর শেষ আপডেট: ১৭ জুলাই ২০১৯ ০০:১৮
Share: Save:

দলের দাপুটে জেলা সভাপতি অসুস্থ হয়ে কলকাতার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। এই অবস্থায় আগামী ২১ জুলাই, দলের শহিদ সমাবেশে জেলা থেকে কর্মী-সমর্থক নিয়ে যাওয়ার দায়িত্ব পড়েছে অধস্তন নেতাদের উপরে। কারণ, প্রতি বছরই জেলা থেকে বিপুল সংখ্যক দলীয় কর্মী-সমর্থক ধর্মতলায় যান। লোকসভা ভোটে খারাপ ফলের প্রেক্ষিতে এ বার সেই সমবেশকে আরও বড় করার ভাবনা নিয়েছেন তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্ব। সেই বার্তা পৌঁছেছে জেলাতেও।

ভিড় বাড়াতে তাই বাড়তি চ্যালেঞ্জ জেলার তৃণমূল নেতাদের ঘাড়ে। বিশেষ করে যখন অনুব্রত মণ্ডলই হাসপাতালে! অন্য বছরগুলিতে শহিদ সমাবেশের আগে জেলা সভাপতি অনুব্রত নিজে নিয়ম করে ব্লকে ব্লকে সভা করেন। প্রকাশ্যে জানিয়েও দেন, বীরভূম থেকে কত কর্মী-সমর্থককে তিনি নিয়ে যাবেন ধর্মতলায়।

এ বার সেই রেওয়াজে ছেদ পড়েছে। দলের অন্দরমহলের খবর, কোনও একটি বিশেষ এলাকা বা ব্লক নয়, প্রতিটি বুথ, গ্রাম, অঞ্চল থেকে সমান সংখ্যক কর্মী-সমর্থকদের ওই সমাবেশে নিয়ে যেতে বলা হয়েছে। জেলার বিভিন্ন প্রান্তে ২১ জুলাইয়ের প্রস্তুতি সভা, মিছিলের মাধ্যমে নিচুতলার নেতাদের ‘টার্গেট’ বেঁধে দিচ্ছেন তৃণমূল নেতৃত্ব।

দলীয় সূত্রে খবর, বিজেপির উত্থান, কাটমানি-বিতর্কে জর্জরিত তৃণমূলের কাছে কার্যত শক্তিপরীক্ষার মঞ্চ হতে চলেছে ওই দিনের সমাবেশ। তাই ভিড় টানার লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করে হচ্ছে। জেলা সভাপতির অসুস্থতার জন্য, কর্মী-সমর্থক নিয়ে যাওয়ার দায় বর্তেছে অন্য নেতাদের উপর। এখন সেই প্রস্তুতিতেই চূড়ান্ত ব্যস্ত জেলার দুই মন্ত্রী আশিস বন্দ্যোপাধ্যায় ও চন্দ্রনাথ সিংহ এবং জেলা পরিষদের সভাধিপতি বিকাশ রায়চৌধুরী।
এই কাজের সমন্বয়ের দায়িত্বে রয়েছেন তৃণমূল জেলা সহ-সভাপতি অভিজিৎ সিংহ।
সহ-সভাপতি বলছেন, ‘‘আগের বারের থেকে এ বার আরও বেশি মানুষ শহিদ সমাবেশে যাবেন। লক্ষ্য রাখা হচ্ছে প্রতিটি বুথ, গ্রাম, অঞ্চল ও ব্লক থেকে দলীয় কর্মী-সমর্থকদের ধর্মতলায় নিয়ে যাওয়ার।’’

সিউড়ি, দুবরাজপুর, রাজনগর, মহম্মদবাজার সহ বিভিন্ন এলাকার ব্লকস্তরের নেতারা জানিয়েছেন, তাঁদের লক্ষ্য— প্রতিটি পঞ্চায়েত থেকে কমপক্ষে ১ হাজার লোক নিয়ে যাওয়া। সেই লক্ষ্যমাত্রা ধরেই এগোনো হচ্ছে। মিছিল-মিটিং করা হচ্ছে। পোস্টার, ফ্লেক্স টাঙানো হচ্ছে। চলছে দেওয়াল লিখন। এলাকায় এলাকায় জনসংযোগ বাড়ানোর সব রকম চেষ্টা চলছে। সেই লক্ষ্যেই মঙ্গলবার নানুরের নতুনগ্রাম বাসস্ট্যান্ড এলাকায় মিছিল এবং পথসভা করে তৃণমূল। পথসভায় হাজির ছিলেন জেলা পরিষদের পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ আব্দুল কেরিম খান, যুবনেতা মীরমাখন আলি, বাপ্পা চৌধুরী, পঞ্চায়েত সমিতির কর্মাধ্যক্ষ অসিত ঘোষ। কেরিম খানেরও দাবি, অন্যান্য বারের তুলনায় এ বারের শহিদ সমাবেশে বেশি সংখ্যক লোক যোগ দিতে যাবেন।

তবে দলের নিচুতলার কর্মীদের একাংশেই প্রশ্ন, রেকর্ড লোক নিয়ে যাওয়ার বিষয়ে নেতারা যাই বলুন, বাস্তবে কি এ বার তা করা যাবে। তাঁরা মনে করিয়ে দিচ্ছেন, লোকসভা নির্বাচনে রাজ্য জুড়ে প্রবল বিজেপি হাওয়ার মধ্যে জেলার দু’টি আসনে জয় পেয়ে গড়-রক্ষা করলেও, আঁচড় পড়েছে। জেলার পাঁচটি বিধানসভা এলাকায় বিজেপির থেকে পিছিয়ে গিয়েছে তৃণমূল। নলহাটি বাদ দিলে প্রতিটি পুর-এলাকায়
একই হাল। জেলার বিভিন্ন প্রান্তে শাসকদলের নেতাদের ঘিরে প্রতি দিন কাটমানি নিয়ে বিক্ষোভ, অসন্তোষ চলছেই।
দলের বহু কর্মী বিজেপি-তে নামও লিখিয়েছেন। তার উপরে অসুস্থতাজনিত কারণে অনুব্রত মণ্ডল জেলার বাইরে থাকায় ২১ জুলাইয়ের শহিদ সমাবেশে জেলা থেকে কত লোক হয়, সে প্রশ্ন উঠছেই।

বিতর্ক উস্কে দিয়েছেন বিজেপি-র জেলা সভাপতি শ্যামাপদ মণ্ডল। তাঁর কটাক্ষ, ‘‘নামে শহিদ দিবস হলেও এটা বিজেপির মুণ্ডপাতের দিন হতে চলেছে। তাই সর্বশক্তি দিয়ে সমাবেশে লোক নিয়ে যেতে চাইছে শাসকদল। কিন্তু ওদের সঙ্গে এখন লোক কোথায়! গর্জনই সার হবে।’’

যা শুনে তৃণমূলের জেলা সহ-সভাপতি বলছেন, ‘‘বিজেপির রং এখনই ফিকে হতে শুরু করেছে। যাঁরা দিল্লি গিয়ে ওই দলে যোগ দিয়েছিলেন, তাঁরা সেটা হাড়ে হাড় টের পাচ্ছেন। বীরভূমের মনিরুল, গদাধর যেমন।’’ তাঁর বক্তব্য, তৃণমূলের কাউন্সিলরদের দলে যোগ করিয়ে হালিশহর, কাঁচড়াপাড়ার মতো পুরসভা দখলের দাবি করেছিল বিজেপি। পরে দেখা গেল, বিজেপি-র প্রতি মোহহভঙ্গ হয়ে ওই কাউন্সিলরেরা আবার তৃণমূলেই ফিরলেন। একই ঘটনা ঘটেছে দক্ষিণ দিনাজপুর জেলা পরিষদের ক্ষেত্রে।

অভিজিৎবাবুর কথায়, ‘‘বীরভূমের কোমা পঞ্চায়েতে কী হল? বিজেপি-তে নাম লেখানোর পরে আমাদের সদস্যেরা ঘরেই ফিরলেন। কাজেই বিজেপি কী বলল, কিছু যায় আসে না। দলের শহিদ সমাবেশ সফল করবেন মানুষই।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

TMC Martyr's day TMC Anubrata Mondal
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE