প্রতীকী ছবি।
আজ, মঙ্গলবার উচ্চ মাধ্যমিকের ফল প্রকাশিত হতে চলেছে। এরপরেই শুরু হয়ে যাবে কলেজে কলেজে ভর্তি। কবে থেকে ভর্তির আবেদন করা যাবে, কোন রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের টাকা জমা করতে হবে, কোন কোন বিষয়ে অনার্স নেওয়া যাবে, মোট আসনই বা কত— সে সব জানিয়ে কলেজের নিজস্ব ওয়েবসাইটে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশও সময়ের অপেক্ষা মাত্র।
কতটা প্রস্তুত কলেজগুলি?
বীরভূমের একাধিক কলেজের সঙ্গে কথা বলে জানা গিয়েছে, সিউড়ির বীরভূম মহাবিদ্যলয়ের মতো হাতে গোনা দু’চারটি কলেজ ছাড়া এখনও এ বিষয়ে তেমন কোনও প্রস্তুতি নেই। কেন এমনটা হল, তার অন্তর্তদন্তে উঠে এসেছে মূলত দু’টি বিষয়। প্রথমত, এ বারই প্রথম বার্ষিক কাঠামোর বদলে শুরু হতে চলেছে সেমেস্টার পদ্ধতি। অর্থাৎ, বছরে দু’টি পরীক্ষা। তিন বছরের অনার্সে ছ’টি সেমেস্টার। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের পরামর্শ মেনে বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তর্গত সব কলেজেই এ বার সেমেস্টারে পড়ানো হবে। তার চূড়ান্ত রূপরেখা এখনও তৈরি হয়নি।
দ্বিতীয়টি হল সিবিসিএস বা ‘চয়েস বেস ক্রেডিট সিস্টেম’। বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয় জানিয়েছে, সিবিসিএস কোনও কলেজের উপরে বাধ্যতামূলক ভাবে চাপিয়ে দেওয়া হবে না। কিন্তু, কী এই সিবিসিএস?
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রের খবর, চয়েস বেসড ক্রেডিট সিস্টেমে নিজের পছন্দ মতো বিষয়ে পড়াশোনা করা যায়। কলা, বিজ্ঞান, বাণিজ্য শাখা বিভাজনের গণ্ডি ছাপিয়ে যে-কেউ মূল বিষয়ের সঙ্গে পছন্দের অন্য যে-কোনও বিষয় পড়তে পারেন। সাহিত্যের সঙ্গী হতে পারে রসায়ন বা চারুকলা। গণিতের হাত ধরতে বাধা নেই সঙ্গীতের। পছন্দের দ্বিতীয় বা তৃতীয় বিষয়টি যদি নিজের কলেজে পড়ানো না-হয়, একই সঙ্গে অন্যত্র তা পড়া যাবে। প্রশ্ন হল, জেলার প্রত্যন্ত কলেজগুলিতে সেই পরিকাঠামো কোথায়? যেখানে পড়ুয়ারা সিবিসিএস-এর সুফল পেতে পারবেন। জেলার কলেজ সূত্রে জানা গিয়েছে, এ বার প্রতি ছ’মাস অন্তর স্নাতকস্তরের পাসকোর্সের পড়ুয়াদের দিতে হবে ২০ ক্রেডিট পয়েন্টে বা ২৫০ নম্বরের পরীক্ষা। তিন বছরে ছ’টি সেমেস্টার মিলিয়ে পরীক্ষা হবে ১২০ ক্রেডিট পয়েন্টর। অন্য দিকে, এক জন অনার্সের ছাত্র বা ছাত্রীকে দিতে হবে তিন বছরে ছ’টি সেমিস্টারে ১৪০ ক্রেডিট পয়েন্টের পরীক্ষা।
ভর্তির ক্ষেত্রে পাসকোর্সে কোনও অসুবিধা না থাকলেও জটিলতা রয়েছে অনার্সের ক্ষেত্রে। এক জন পড়ুয়া যে বিষয়ে অনার্স নেবেন তার সঙ্গে (আগে যাকে পাসের পেপার বলা হত) জেনারিক হিসাবে সে যা পেতে চাইবে সেটা সংশ্লিষ্ট কলেজ তাঁকে দিতে পারবে কি না। ইউজিসি-র প্রস্তাব, কেউ রাষ্ট্রবিজ্ঞানে অনার্স নিয়ে পড়তে এসে নিউট্রিশন কিংবা এডুকেশনের মতো বিষয় পড়তেই পারেন। আবার কেউ ফিজিক্সে অনার্স নিলেও জেনেরিক বিষয় হিসেবে ইংরেজি কিংবা সংস্কৃত রাখতেই পারেন। অর্থাৎ, কোনও বাঁধা গতে আটকে যাবেন না শিক্ষার্থী। কিন্তু জেলার কলেজগুলির পরিকাঠামো কোথায়। এত যে বিষয়, তার শিক্ষক, ক্লাসরুম কই।
অধ্যক্ষদের একাংশের দাবি, কলেজে ভর্তি হতে এসে পড়ুয়াদের প্রথম লক্ষ্য থাকে পছন্দের বিষয়ে অনার্স পাওয়া। সেই অনার্সে-র সঙ্গে কোন বিষয় জেনেরিক হিসেবে তাঁকে দেওয়া যায়, সেটা না ঠিক হলে ভর্তির বিজ্ঞপ্তি দেওয়াটা সমস্যার। এই সমস্যা দ্রুত মিটবে আশা দুবরাজপুরের হেতমপুর কৃষ্ণচন্দ্র কলেজের অধ্যক্ষ গৌতম চট্টোপাধ্যায়, সিউড়ি বিদ্যাসাগর কলেজের অধ্যক্ষ তপনকুমার পরিচ্ছারা। তাঁরা বলছেন, ‘‘কলেজে পড়ানো হয় এমন বিষয়ের মধ্যে থেকে বেছে নিতে বলা হবে।’’
লাভপুর কলেজের অধ্যক্ষ নিশিথনাথ চক্রবর্তী বলছেন, ‘‘প্রতি ছ’মাস অন্তর পরীক্ষা থাকায় পড়ুয়া এবং শিক্ষক উভয়কেই আরও যত্নবান হতে হবে। ’’ বীরভূম মাহবিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ পার্থসারথি মুখোপাধ্যায় বলছেন, ‘‘সেমিস্টার পদ্ধতি চালু হচ্ছে এটাই নতুন। আর বদল ঘটেছে নামে। পাস কোর্সের সাবজেক্টগুলিকে কোর ও অনার্সের সঙ্গে সাবজেক্টগুলিকে জেনেরিক সাবজেক্ট বলা হচ্ছে।’’ রামপুরহাট কলেজের অধ্যক্ষ তপন ভট্টাচার্য বলছেন, ‘‘পড়ুয়াদের কোনও সমস্যা হবে না। এই একটা কথাই জোর দিয়ে বলতে পারি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy