স্কুলের শৌচাগারে নবম শ্রেণির এক ছাত্রীর উপরে নির্যাতন চালানোর অভিযোগ উঠল উঁচু ক্লাসের কিছু ছাত্রীর বিরুদ্ধে। শুক্রবার ঘটনাটি ঘটেছে বোলপুর থানা এলাকায়। অত্যাচারে মেয়েটি স্কুলের মধ্যেই শারীরিক ভাবে অসুস্থ হয়ে পড়ে। আতঙ্কিত হয়ে যায়। স্কুল থেকে অভিভাবকেরা খবর পেয়ে মেয়েকে হাসপাতালে ভর্তি করান। রাত পর্যন্ত পুলিশে অভিযোগ হয়নি। যদিও মৌখিক ভাবে খবর পেয়ে হাসপাতালে গিয়েছিল পুলিশ। আজ, শনিবার পরিবার অভিযোগ দায়ের করতে পারে।
স্কুল সূত্রে জানা গিয়েছে, বোলপুর শহরের বাসিন্দা ওই ছাত্রী। স্কুলের পিছনে দিকে শৌচাগার। অভিযোগ, এ দিন বেলা ৩টের কিছু পরে নবম শ্রেণির ওই ছাত্রী শৌচাগারে গেলে উঁচু ক্লাসের কয়েক জন ছাত্রী পিছন থেকে তার চোখ, মুখ, চেপে ধরে তাকে মারধর করতে থাকে। শুধু তাই নয়, ব্লেড বা ওই জাতীয় ধারালো কোনও কিছু দিয়ে মেয়েটির হাত কেটে দেওয়া হয় বলেও অভিযোগ। নির্যাতিতার চোখে ও মাথায় আঘাত করা হয়েছে বলেও বিভিন্ন সূত্রে জানা যাচ্ছে। স্কুল সূত্রের খবর, সেই সময় কোনও ছাত্রী ঘটনাটি দেখে ফেললে সব জানাজানি হয়। অভিযুক্তেরা পালানোর চেষ্টা করে। তবে, পরে তাদের চিহ্নিত করা গিয়েছে বলেই জানা যাচ্ছে।
নির্যাতিতা সংবাদমাধ্যমের সামনে কথা বলতে পারেনি। তার বাবা বলেন, ‘‘স্কুল থেকে আমাকে ফোন করে জানানো হয়, মেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েছে। স্কুলে এসে দেখি, মেয়ের এই অবস্থা। তখন স্কুল জানায়, সিনিয়রেরা তাকে হয়তো মারধর করেছে। এটা র্যাগিং ছাড়া আর কী! মেয়ে আতঙ্কের মধ্যে রয়েছে। আমরাও রয়েছি। এর পরে মেয়েকে স্কুল পাঠাব কি না, আমরা ভাবছি।’’
অভিভাবকদের একাংশের অভিযোগ, ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে স্কুল কর্তৃপক্ষের তরফে। এমনকি ঘটনার পরে স্কুলের ওয়টস্যাপ গ্রুপে কর্তৃপক্ষের তরফে লেখা হয়, ‘আজকের ঘটনার বিষয়ে যেখানে প্রয়োজন সেখানে প্রয়োজনীয় বিবৃতি দেওয়া হবে। এ বিষয়ে গণমাধ্যমে কোনও বক্তব্য না দেওয়ার জন্য আপনাদের অনুরোধ করা হচ্ছে।’
গোটা ঘটনায় স্কুলের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। স্কুলের প্রধান শিক্ষিকাকে বার বার ফোন করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি। তবে, রাতে প্রধান শিক্ষিকা এবং আর একজন শিক্ষিকা হাসপাতালে মেয়েটিকে দেখতে যান। ওই স্কুলের পরিচালন সমিতির সভাপতি তথা সিউড়ির বিধায়ক বিকাশ রায়চৌধুরী বলেন, “এ রকম একটি ঘটনা শুনেছি। সমস্ত দিক খতিয়ে দেখে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” জেলা শিশু সুরক্ষা আধিকারিক নিরুপম সিংহ বলেন, “বিষয়টি স্কুল কর্তৃপক্ষের দেখে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। আমরাও তদন্ত করে দেখব।”
এ দিন হাসপাতালে যান মানবাধিকার নিয়ে কাজ করা একটি সংগঠনের সভাপতি রূপা চৌধুরী। তাঁর বক্তব্য, “আমাদেরও মনে হচ্ছে স্কুল কর্তৃপক্ষ বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করছেন। কারণ, এখনও পর্যন্ত কোনও অভিযোগ দায়ের হল না বা পুলিশকে জানানো হল না কেন। শিশু ও নারীদের সুরক্ষার জন্য আমরা লড়াই করছি। এ ক্ষেত্রেও আমরা তদন্ত করব।’’
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)