হাসপাতালে: মৃত সন্তান কোলে সলেমান। ছবি: শুভ্র মিত্র
হাসপাতালের লেবার রুমে এক অন্তঃসত্ত্বাকে নিগ্রহের অভিযোগ উঠল নার্সদের বিরুদ্ধে। পশ্চিম মেদিনীপুরের গড়বেতা থানার হরিণাশুলি গ্রামের বাসিন্দা, মোনালিসা চৌধুরী নামের ওই অন্তঃসত্ত্বা সোমবার ভোরে মৃত সন্তান প্রসব করেন বিষ্ণুপুর জেলা হাসপাতালে। তাঁর স্বামী, সলেমান চৌধুরী এ দিনই হাসপাতালের সুপার ও মহকুমাশাসক (বিষ্ণুপুর)-এর কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন।
ওই বধূর পরিজনেরা জানান, রবিবার রাত সা়ড়ে ৯টা নাগাদ প্রসব যন্ত্রণা নিয়ে তাঁকে বিষ্ণুপুর জেলা হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছিল। সেই সময়ে এক চিকিৎসক এসে দেখে যান। মোনালিসার মা সাবানারা মল্লিক জানান, ভোর সাড়ে ৩টে নাগাদ মোনালিসার প্রসব যন্ত্রণা প্রবল হয়। তখন তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয় লেবার রুমে। সাবানারার অভিযোগ, ‘‘মেয়েটা যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছিল। আর প্রথম থেকেই নার্সেরা গালিগালাজ করছিলেন। আমি দরজায় দাঁড়িয়েছিলাম। দেখি, গজ দিয়ে ওর হাত বেঁধে ফেলেছে। পেটে এলোপাথাড়ি চাপ দিচ্ছে।’’
সেই সময়ে মোনালিসার প্রসব হয়নি। সাবানারার দাবি, ভোর সাড়ে ৪টে নাগাদ মেয়ে আবার চিৎকার করে ওঠে। তিনি বলেন, ‘‘নার্সরা তখন ঝিমোচ্ছিলেন। আমরা গিয়ে হাতে পায়ে ধরি। তখন উঠে যান।’’ পরিজনদের দাবি, কিছুক্ষণ পরে এক চিকিৎসক এসে তাঁদের জানান, প্রসব হয়ে গিয়েছে। পুত্র সন্তান হয়েছে। তাঁদের অভিযোগ, সদ্যোজাত সুস্থ আছে বলে লিখে দেওয়ার জন্য চাপ দেওয়া হয় সেই সময়ে। কিন্তু সদ্যোজাতকে চোখে না দেখে তাঁরা কিছু লিখতে অস্বীকার করেন। কিছুক্ষণ পরে জানানো হয়, সদ্যোজাতের মৃত্যু হয়েছে।
এই ঘটনার পরে সুপারের কাছে গিয়ে মৌখিক অভিযোগ করেন মোনালিসার পরিজনেরা। সুপারের ঘরে বিক্ষোভ শুরু হয়। খবর পেয়ে পুলিশ হাসপাতালে যায়। ওয়ার্ড মাস্টারের কাছে মোনালিসার পরিজনেরা লিখিত অভিযোগ জমা করার সময়ে আবার একপ্রস্ত ঝামেলা হয়। সলেমানের অভিযোগ, সেখানে দায়িত্বে থাকা এক কর্মী অভিযোগপত্রের বয়ান বদলানোর জন্য চাপ দিচ্ছিলেন। বানানের ভুল ধরে তাঁদের বলা হয়, অভিযোগ নেওয়া হবে না। এই গোলমালের মধ্যেই হাসপাতালে পৌঁছন রোগী কল্যাণ সমিতির সদস্য তথা বিষ্ণুপুরের কাউন্সিলর দিব্যেন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়। শেষ পর্যন্ত অভিযোগ জমা পড়ে। পরে মহকুমাশাসকের অফিসে লিখিত অভিযোগ জমা করেন পেশায় দিনমজুর সলেমান।
এ দিন সকালে হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে মোনালিসা বলেন, ‘‘এখনও হাতে দাগ আছে। নার্সরা এমন কষে বেঁধেছিল, ব্যথাও করেছে। হাত তুলতে কষ্ট হচ্ছে।’’ চেষ্টা করেও কথা বলা যায়নি ওই হাসপাতালের নার্সিং সুপারের সঙ্গে। তাঁর মোবাইলও বন্ধ ছিল। তবে হাসপাতালের এক সিনিয়র নার্স বলেন, ‘‘প্রসবের সুবিধার জন্য অনেক সময়ে ফিতে দিয়ে পা বাঁধতে হয়। কিন্তু, হাত বাঁধার প্রশ্নই ওঠে না। এ ক্ষেত্রেও হয়নি।’’
মোনালিসাদের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন বিষ্ণুপুর জেলা হাসপাতালের সুপার পৃথ্বীশ আকুলিও। তাঁর দাবি, প্রসবের শেষ পর্যায়ে শ্বাসকষ্টজনিত রোগে শিশুটির মৃত্যু হয়েছে। বিষ্ণুপুর স্বাস্থ্য জেলার মু্খ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক রমেন্দ্রনাথ প্রামাণিক বলেন, ‘‘আমি এ দিন ওই হাসপাতালে গিয়েছিলাম। অভিযোগের কথা শুনেছি। সঠিক অভিযোগ হলে আমরা তদন্ত করে পদক্ষেপ করব।’’
তবে, সব কিছু ছাপিয়ে সলেমানের চিন্তা, স্ত্রীকে কী ভাবে খবরটা দেবেন। মৃত সন্তান কোলে দাঁড়িয়ে কাঁদতে কাঁদতে সলেমান বলছিলেন, ‘‘প্রথম সন্তান ভাল ভাবে যাতে হয়, তার জন্য জেলা হাসপাতালে ছুটে এসেছিলাম। বাচ্চাটা যে আর নেই, স্ত্রীকে বলিনি। শুনলে ও থাকতে পারবে না। কী করব বুঝে উঠতে পারছি না।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy