বিষ্ণুপুরের জয়রামপুরে বাস থামিয়ে চাঁদা আদায়। নিজস্ব চিত্র
কালীপুজোর খরচ তুলতে কম বয়েসি ছেলেরা রাস্তা আটকানো থেকে বাজারে ঢুকে চাঁদা আদায় করছে। কিন্তু এ বার পুজোর বিল-বই হাতে নিয়ে বাজারে চাঁদা ঢোকার অভিযোগ উঠল পুলিশের বিরুদ্ধে।
মঙ্গলবার ভর সন্ধ্যায় বিষ্ণুপুর শহরের পুরভবনের কাছে, মটুকগঞ্জ এলাকায় প্রধান রাস্তার দু’পাশের দোকানদারদের অভিজ্ঞতা মোটেই ভাল ছিল না।
তাঁদের অনেকের অভিযোগ, জেলখানার পুলিশের পরিচয় দিয়ে কয়েকজন এসে কালীপুজো করার জন্য চাঁদা চান। এমনতি এ ক্লাব, ও ক্লাবের পুজোর চাঁদা দিতে দিতে ওষ্ঠাগত অবস্থা ব্যবসায়ীদের। আর এঁদের পরিচয় শুনে ঢোঁক গিলে অনেক ব্যবসায়ী সটান ১০০ টাকার নোট ধরিয়ে দেন। কেউ কেউ অবশ্য ৫০ টাকাতেও সামাল দিয়েছেন।
আদায়কারীর এক জনের নাম জানতে চাওয়ায় তিনি বলে ওঠেন, ‘‘আহ্, বিরক্ত করছেন কেন? মায়ের পুজো করতে সাহায্য চাইতে বেরিয়েছি।’’ কিন্তু পুলিশ পরিচয় দিয়ে এ ভাবে রাতে খোলা বাজারে চাঁদা তোলা যায়? তাঁর পাল্টা দাবি, ‘‘ছাড়ুন না মশাই।’’ দ্রুত হাতে টাকা গুছিয়ে দুদ্দাড় দৌড়।
ব্যবসায়ীদের কথায়, ‘‘আর পারছি না। এতদিন ছেলে ছোকরার উপদ্রব ছিল, এখন দেখছি পুলিশ পরিচয় দিয়ে লোক আসছে।’’
স্থানীয় সুত্রে খবর নিয়ে জানা যায়, বিষ্ণুপুর মহকুমা সংশোধনাগারের এক জন সরকরি গাড়ির চালক, বাকি তিন জন বিষ্ণুপুর মহকুমা সংশোধনাগারেরই কর্মী।
বিষ্ণুপুর মহকুমা সংশোধনাগারের কন্ট্রোলার তথা নিয়ামক গোঁরাচাদ মুখোপাধ্যায় দাবি করেন, ‘‘আমাদের সংশোধনাগারে পুজো হয়। তবে চাঁদা তোলা হয় না। এ ধরনের অভিযোগ কাম্য নয়। তবু আমি খোঁজ নিয়ে দেখছি। সত্যি হলে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’
এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে বিষ্ণুপুর আদালতের বার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি রবিদুলাল ঘোষ বলেন, ‘‘এই ধরনের আচরণ পুলিশ যদি করে, সমাজে খুব ভুল বার্তা যাবে। অভিযুক্ত হলে শাস্তি দেওয়া উচিত।’’ বাসিন্দাদের অনেকের প্রশ্ন, চাঁদা নিয়ে জোরজুলুম হলে তা দেখার দায়িত্ব পুলিশের। সেই পুলিশই যদি চাঁদা তোলে, তা বন্ধ করবে কে?
পথে-ঘাটে গাড়ি থামিয়ে চাঁদা আদয়ও থেমে নেই। বিষ্ণুপুর-সোনামুখী রাস্তায় জয়রামপুর গ্রামের কাছে রাস্তার উপরে যাত্রিবাহী বাস আটকে এক দল ছেলেকে বুধবার সকালেও দেখা গেল রীতিমতো জোরাজুরি করে চাঁদা আদায় করতে।
ক্ষুব্ধ বাস চালকেরা বলেন, ‘‘আর পারা যাচ্ছে না। এমন চললে বাস বন্ধ রাখতে হবে। রোজগারের থেকে চাঁদা বেশি দিতে হচ্ছে।’’ তাঁদের আশঙ্কা, সামনে কার্তিক পুজো। চাঁদাবাজদের দাপটে সোনামুখী থানার বিভিন্ন রাস্তায় বাস চালানোই দায় হবে।’’
বিষ্ণুপুরের এসডিপিও সুকোমলকান্তি দাস দাবি করেন, ‘‘জোর করে চাঁদা আদায় হচ্ছে শুনলেই পুলিশ কর্মীরা যাচ্ছেন।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy