E-Paper

ভোটের আগে শিল্পে জোর, চিন্তা স্থানীয় দাবিদাওয়া

এই পরিস্থিতিতে ‘রশ্মি গোষ্ঠী’ এখানে ইস্পাত কারখানা গড়ার ঘোষণা করেছে।

শুভ্রপ্রকাশ মণ্ডল

শেষ আপডেট: ০৬ নভেম্বর ২০২৫ ০৮:২৫
নতুনডি পঞ্চায়েতের এই জমিতে কারখানা গড়ার সম্ভাবনা রশ্মি গোষ্ঠীর।

নতুনডি পঞ্চায়েতের এই জমিতে কারখানা গড়ার সম্ভাবনা রশ্মি গোষ্ঠীর। নিজস্ব চিত্র।

বিধানসভা ভোটের আগে রাজ্য সরকার রঘুনাথপুরের জঙ্গলসুন্দরী কর্মনগরীতে একের পর এক শিল্প সংস্থাকে আনতে উদ্যোগী হলেও স্থানীয়দের একাংশের নানা দাবিতে পরিস্থিতি জটিল হয়ে উঠেছে। সেই দাবির মধ্যে রয়েছে, দূষণ নিয়ন্ত্রণে উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ ও জমিদাতাদের কর্মসংস্থান। এ সব বিষয়ে শিল্প সংস্থা নিশ্চয়তা না দিলে কারখানা গড়তে বাধা দেওয়ার হুঁশিয়ারিও রয়েছে। ইতিমধ্যে একটি সংস্থাকে ভিত পুজো করতে বাধা দেওয়াও হয়েছে।

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ইতিপূর্বে ঘোষণা করেছেন, জঙ্গলসুন্দরী কর্মনগরীতে নতুন করে পাঁচটি সংস্থাকে শিল্পের জন্য জমি চিহ্নিত করে দেওয়া হয়েছে। মাসখানেক আগে একটি সংস্থা স্থানীয়দের বাধা সত্ত্বেও কোনও রকমে ভিত পুজো করেছে। তবে তাদের কাজের অগ্রগতি প্রকাশ্যে দেখা যায়নি বলে স্থানীয় সূত্রের দাবি।

এই পরিস্থিতিতে ‘রশ্মি গোষ্ঠী’ এখানে ইস্পাত কারখানা গড়ার ঘোষণা করেছে। সংস্থাটির তরফে জানানো হয়েছে, রঘুনাথপুরের প্রকল্পে পণ্য তৈরির পাশাপাশি প্রয়োজনীয় কাঁচামালও উৎপাদন করা হবে। কারখানা চালাতে তারা এখানে বিদ্যুৎ প্রকল্পও গড়বে। সংস্থার দাবি, রঘুনাথপুরের প্রকল্পে ১০ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করা হবে। বছরে ২৮ লক্ষ টন ইস্পাত ও ইস্পাতজাত সামগ্রী, বিলেট, পেলেট, টিএমটি বার, ওয়্যার রডের মতো কাঁচামাল তৈরি হবে। প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ কর্মসংস্থান হবে প্রায় ১৮ হাজার।

সূত্রের খবর, বাম আমলে রঘুনাথপুরের ১ ব্লকের নতুনডি পঞ্চায়েত এলাকায় জমি অধিগ্রহণ করে জয়বালাজি শিল্প গোষ্ঠীকে দিয়েছিল সরকার। পরে তারা প্রকল্প বাতিল করে জমি রাজ্য শিল্প উন্নয়ন নিগমকে ফিরিয়ে দেয়। সেই জমির মধ্যে ৯৮৩ একর জমি রশ্মিকে বিক্রির প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। রাজ্যের আর একটি ইস্পাত প্রস্তুতকারক সংস্থাকেও এই এলাকায় জমি দেওয়ার কাজ চলছে। তবে চেষ্টা করেও রশ্মি গোষ্ঠীর সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি।

এ দিকে, ২০০৭-’০৮ সালে জমি দিলেও এত দিনে শিল্প না হওয়ায় জমি ফেরত চেয়ে আন্দোলনে নেমেছে ‘নতুনডি কৃষি কমিটি’। তারা জানাচ্ছে, রশ্মি গোষ্ঠী শিল্প করলে তারা সহায়তা করবে। তবে আগে ওই সংস্থা ও প্রশাসনকে তাদের সঙ্গে ত্রিপাক্ষিক আলোচনায় বসতে হবে। কমিটির দাবি, প্রতিশ্রুতি সত্ত্বেও ডিভিসির রঘুনাথপুর তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রে জমিদাতাদের একাংশ এখনও চাকরি পাননি। সেই অভিজ্ঞতা থেকে তাঁরা এখানেও জমিদাতাদের কর্মসংস্থানের বিষয়টি আগে সংস্থার কাছে স্পষ্ট করে নিতে চান। পাশাপাশি দূষণ নিয়ন্ত্রণের বিষয়েও শিল্প সংস্থার কাছে লিখিত আশ্বাস চাইছে কমিটি।

কমিটির দাবি, ওই দুই দাবিতে আগেই জেলা প্রশাসনকে একাধিক বার স্মারকলিপি দিয়েছে তারা। জেলা প্রশাসনও বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানোর আশ্বাস দিয়েছিল। কয়েক মাস আগে একটি সংস্থা ভিত পুজো করতে এলে ওই কমিটির লোকেরা বাধা দেন। দাবি করেন, আগে তাঁদের সঙ্গে দূষণ ও কর্মসংস্থান নিয়ে বৈঠক করতে হবে। না হলে কাজ করতে দেওয়া হবে না।দুরমুট গ্রাম সর্বষোলো আনা কমিটিও একই দাবিতে প্রশাসনকে স্মারকলিপি দিয়েছে।

নতুনডি কৃষি কমিটির সম্পাদক বাণেশ্বর গঙ্গোপাধ্যায় জানান, প্রস্তাবিত ইস্পাত কারখানার এক কিলোমিটারের মধ্যে রয়েছে দুরমুট, নতুনডি, হুড়রা, কাঁচকেয়ারী, বাথান-সহ আট-দশটি গ্রাম।তাই উৎপাদন শুরু হলে দূষণে ওই সব গ্রামের বাসিন্দারা জেরবার হবেন। বাণেশ্বরের দাবি, ‘‘জমিদাতাদের কর্মসংস্থান ও দূষণ প্রতিরোধে শিল্প সংস্থা ঠিক কী পদক্ষেপ করবে, তা আগে এলাকাবাসীকে ত্রিপাক্ষিক বৈঠক করে জানাতে হবে। প্রয়োজনে চুক্তি করতে হবে সংস্থাকে। না হলে কারখানা গড়তে সক্রিয় বাধা দেবেন জমিদাতারা।”

সূত্রের খবর, বিধানসভা নির্বাচনের আগে জঙ্গলসুন্দরী কর্মনগরীতে কয়েকটি সংস্থাকে জমি দেওয়ার প্রক্রিয়া সেরে ফেলতে চাইছে রাজ্যের শীর্ষ মহল। এতে রঘুনাথপুরে শিল্পায়নের ইতিবাচক দিক প্রচারে তুলে ধরতে পারবে শাসকদল। তৃণমূলের রাজ্য সম্পাদক সৌমেন বেলথরিয়া বলেন, ‘‘কর্মসংস্থান ও দূষণ বিষয়ে প্রশাসনের উপস্থিতিতে স্থানীয়দের সঙ্গে যাতে শিল্প সংস্থাগুলি আলোচনায় বসে, এ নিয়ে রাজ্যের কাছে আর্জি জানানো হবে।”

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Raghunathpur Industrialization

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy