E-Paper

হাল ফেরেনি ‘দিদির দূতের’ আশ্বাসেও, ক্লাস বারান্দাতেই

স্কুল সূত্রে জানা গিয়েছে, এখানে পড়ুয়ার সংখ্যা ২৭১। আছেন সাত জন শিক্ষক-শিক্ষিকা। মূল সমস্যা পরিকাঠামোতেই। পাঁচটি ক্লাস ও অফিস মিলিয়ে ৬টি ঘরের প্রয়োজন।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ০৯:১৩
কলুপাড়া প্রাথমিক স্কুলের ক্লাসঘরের এমনই হাল। ঝুঁকি এড়াতে বারান্দায় চলছে ক্লাস। নিজস্ব চিত্র

কলুপাড়া প্রাথমিক স্কুলের ক্লাসঘরের এমনই হাল। ঝুঁকি এড়াতে বারান্দায় চলছে ক্লাস। নিজস্ব চিত্র senguptadayal@gmail.com

আশিস বলেন, ‘‘সত্যিই স্কুলটির অবস্থা খারাপ ছিল। এখনও কেন ব্যবস্থা হল না, আমি প্রশাসনে খোঁজ নিচ্ছি।’’ শ্রেণিকক্ষগুলি জীর্ণ। ছোট ছোট পড়ুয়ারা গাদাগাদি করে ক্লাস করছে স্কুলের বারান্দায়। গত এপ্রিলে দুবরাজপুর পুর-শহরের সরকারি প্রাথমিক স্কুলে ঢুকে এই দৃশ্য দেখে অবাক হয়ে গিয়েছিলেন ‘দিদির দূত’ তথা বিধানসভার ডেপুটি স্পিকার আশিস বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি কথা দিয়েছিলেন সমস্যা মেটানোর।

কিন্তু, পাঁচ মাস পেরিয়েও দুবরাজপুরের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের কলুপাড়া প্রাথমিক স্কুলের ছবিটা বিন্দুমাত্র বদলায়নি। প্রশাসনের তরফে শ্রেণিকক্ষ গড়ার আশ্বাসও মেলেনি। ছাত্রছাত্রীরা যথারীতি বারান্দায় পাঠ নিচ্ছে। শিক্ষক- শিক্ষিকাদের আক্ষেপ, গত ১০ বছর ধরে প্রশাসনের সর্বস্তরে আবেদন নিবেদন করে কোনও সুরাহা হয়নি। তাঁদের ইচ্ছে থাকলেও পরিকাঠামোর অভাবে ছাত্রছাত্রীদের ঠিক ভাবে পাঠদান করানো যাচ্ছে না। এ কথা জেনে আশিস বলেন, ‘‘সত্যিই স্কুলটির অবস্থা খারাপ ছিল। এখনও কেন ব্যবস্থা হল না, আমি প্রশাসনে খোঁজ নিচ্ছি।’’

স্কুল সূত্রে জানা গিয়েছে, এখানে পড়ুয়ার সংখ্যা ২৭১। আছেন সাত জন শিক্ষক-শিক্ষিকা। মূল সমস্যা পরিকাঠামোতেই। পাঁচটি ক্লাস ও অফিস মিলিয়ে ৬টি ঘরের প্রয়োজন। সেখানে ব্যবহারযোগ্য ঘর রয়েছে তিনটি। তারই একটি ঘরে রয়েছে অফিস। কারণ, স্কুলের একটি শ্রেণিকক্ষ ও পুরনো অফিসঘরের ছাদের চাঙড় খসে পুরোপুরি অব্যবহার্য হয়ে পড়েছে। অন্য একটি শ্রেণিকক্ষের অবস্থাও শোচনীয়। দুর্ঘটনা এড়াতে বারান্দায় ক্লাস করাতে হয় অন্তত দু’টি শ্রেণির পড়ুয়াদের।

গত এপ্রিলে ‘দিদির সুরক্ষা কবচ’ কর্মসূচিতে ওই স্কুলে এসে বেহাল ছবি দেখেছিলেন আশিস বন্দ্যোপাধ্যায়। সেখান থেকেই ফোন করে অতিরিক্ত জেলাশাসককে (উন্নয়ন) জানান সমস্যার কথা। তিনি বলেছিলেন, ‘‘বাচ্চাগুলো খুব অসুবিধায় আছে। আপনি দেখুন।’’ রামপুরহাটের বিধায়কের উদ্যোগের পরে ক্লাসঘরের হাল ফিরবে, আবার ছোটরা সেকানে ক্লাস করতে পারবে বলে আশায় ছিলেন স্কুল কর্তৃপক্ষ।

কিন্তু, পাঁচ মাসেও কিছু হয়নি। স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষিকা মমতা গড়াই ভক্ত বলেন, ‘‘সমস্যা শুরু হয়েছে ২০১০ সাল থেকে। তার পরেই অতিরিক্ত শ্রেণিকক্ষের জন্য দুবরাজপুর পুরসভা, এলাকার স্কুল পরিদর্শক, জেলা স্কুল পরিদর্শক, সমগ্রশিক্ষা মিশন এবং মহকুমাশাসকের কাছে আবেদন করা হয়েছে একাধিক বার। অন্তত চারটি শ্রেণিকক্ষ ছাড়া সমস্যা মিটবে না।’’ ওই স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকারা বলছেন, ‘‘আশিস বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথা মতো অতিরিক্ত জেলাশাসকের সঙ্গে দেখা করি। তিনি জেলা সংখ্যালঘু দফতরে পাঠিয়েছিলেন। কারণ স্কুলের ২৭১ জন পড়ুয়ার মধ্যে ২১০ জনই সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের। সেখানেও আবেদন করা হয়েছে। এখনও ইতিবাচক সাড়া নেই।’’ তাঁরা জানান, গ্রীষ্ম-বর্ষায় চরম অসুবিধা হচ্ছে। মিড–ডে মিল খাওয়াও যেহেতু বারান্দায় হয়, তাই প্রাক-প্রাথমিক বাচ্চাদের ছুটি দিয়ে দিতে হয়।

জেলা সংখ্যালঘু দফতরের অধিকারিক পিয়ালী মণ্ডল বলেন, ‘‘স্কুল কর্তৃপক্ষ দাবি করেছিলেন, স্কুল ভবন ভেঙে নতুন ভবন গড়ে দিতে হবে। আমাদের দিক থেকে স্কুলকে জানানো হয়েছিল, ভবন সংস্কার সম্ভব নয়। স্কুল ভবন ভেঙে ফেলা তখনই সম্ভব, যখন এ ব্যাপারে উপযুক্ত কর্তৃপক্ষ রিপোর্ট দেন।’’ তিনিন জানান, স্কুলকে বলা হয়েছে, তারা ঠিক কী চাইছে, তা পরিষ্কার করে জানিয়ে নতুন করে আবেদন করতে। জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের সভাপতি প্রলয় নায়েক বলেন, ‘‘আমাদের কাছেও অতিরিক্ত শ্রেণিকক্ষ তৈরি করানোর মতো তহবিল নেই। তবে, আমরা তদ্বির করতে পারি। কী অবস্থায় রয়েছে স্কুল, খোঁজ নিচ্ছি।’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

dubrajpur

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy