মন্ত্রীর বিজয় মিছিল শেষ হতেই অশান্তি ছ়ড়াল মানবাজারে।
সোমবার মানবাজার থানার লাগদাগোড়া গ্রামের ঘটনা। নির্বাচনের ফল ঘোষণার পরে দলনেত্রীর নির্দেশ ছিল, বিজয় মিছিল করা যাবে না। এলাকায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান করা যেতে পারে। কিন্তু নেত্রীর সেই নির্দেশে দলের কর্মীদের একাংশ কান দেননি। বিজয় মিছিল তো হয়েইছে, তার থেকে বিরোধীদের উপর আক্রমণেরও অভিযোগ উঠে এসেছে বারেবারে। সেই অভিযোগই আরও এক বার উঠে এল মানবাজারের গ্রামটি থেকে।
সোমবার দুপুরে মানবাজার থানার ধানাড়া অঞ্চলের লাগদাগোড়া গ্রামে অনগ্রসর শ্রেণি কল্যাণ দফতরের প্রতিমন্ত্রী সন্ধ্যারাণি টুডুর বিজয় মিছিল ছিল। সিপিএমের অভিযোগ, মিছিলের পরে মন্ত্রী এবং পুলিশ কর্মীরা গ্রাম ছাড়তেই রাজেশ মণ্ডল নামে এক সিপিএম কর্মীর বাড়িতে চড়াও হন সমীর মণ্ডল-সহ কিছু তৃণমূল সমর্থক। বাড়ি লক্ষ করে ইট-পাটকেল ছোঁড়া হয়। পটকায় আগুন দিয়ে বাড়ির ভিতরে ছুড়ে দেওয়া হয়। বাড়ির ভিতরে এক দল তৃণমূল কর্মী সমর্থক ঢুকে পড়ে পরিবারের লোকজনকে জোর করে আবির মাখিয়ে দেন বলে অভিযোগ। রাজেশবাবু থানায় ফোন করে অভিযোগ জানালে পুলিশকর্মীরা ফের লাগদাগোড়া গ্রামে যান।
যদিও, সমীরবাবুরা পাল্টা দাবি করেন, রাজেশবাবুর বাড়ির পাশে হরিমন্দিরের আটচালায় বিশিষ্ট ব্যক্তিদের বসার জন্য চেয়ার পাতা হয়েছিল। রাজেশবাবু তার মধ্যে কয়েকটি চেয়ার ভেঙে দেন। পুলিশ গ্রামে গেলে ভাঙা চেয়ারগুলি দেখান তৃণমূল নেতারা। পরিস্থিতি সামাল দিতে রাতভর গ্রামে পুলিশি টহল চলে।
মঙ্গলবার রাজেশবাবুর পরিবারের লোকজনেরা দাবি করেন, ঘটনার পর থেকে রাজেশবাবু নিখোঁজ। রাজেশবাবুর মা বিমলাদেবী জানান, রাজেশবাবু এবং তাঁর ভাই বিদেশবাবু কলকাতায় অস্থায়ী কর্মীর কাজ করেন। ছুটি নিয়ে সম্প্রতি তাঁরা বাড়ি এসেছিলেন। বিদেশবাবু বলেন, ‘‘সোমবার দুপুরে স্থানীয় তৃণমূল কর্মী সমীর মণ্ডলের নেতৃত্বে এক দল লোক উন্মত্ত অবস্থায় আমাদের বাড়িতে চড়াও হয়। দাদা প্রতিবাদ করতে বেরিয়ে এলে ওকে ধাক্কা মেরে ফেলে দেওয়া হয়। ভয়ে দাদা ছুটে পালিয়ে যায়। তার পর থেকে ওর আর কোনও খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। আমরা পুলিশকে সব জানিয়েছি।’’
মানবাজার পঞ্চায়েত সমিতির বিরোধী দলনেতা সিপিএমের প্রবীর মণ্ডল ধানাড়া অঞ্চলেরই বাসিন্দা। তিনি বলেন, ‘‘রাজেশ আগে এলাকায় তৃণমূল কর্মী হিসাবে পরিচিত ছিলেন। দলের সঙ্গে বনিবনা না হওয়ায় সিপিএমে যোগ দেন। তার পর থেকেই একাংশের তৃণমূল কর্মীর চক্ষুশূল হয়ে ওঠেন।’’ তাঁর দাবি, বিধানসভা নির্বাচনে ধানাড়া অঞ্চলে তৃণমূল ৭৫০ ভোটে পিছিয়ে আছে। সেই খারাপ ফলের জন্যই খেপে রয়েছে শাসকদলের নেতা কর্মীরা। তিনি বলেন, ‘‘সোমবারের ঘটনা প্রতিহিংসা ছাড়া আর কিছুই নয়।’’
যাঁর বিরুদ্ধে হামলায় নেতৃত্ব দেওয়ার অভিযোগ, সেই লাগদাগোড়া সংসদের তৃণমূল সদস্য সমীরবাবু হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, অবিলম্বে রাজেশবাবুকে গ্রেফতার করা না হলে পরিস্থিতি অন্য দিকে গড়াতে পারে। তিনি বলেন, ‘‘পুলিশকে জানিয়েছি, রাজেশ মণ্ডলকে গ্রেফতার করতে হবে। না হলে আমরা কর্মীদের সংযত রাখতে পারব না।’’ সমীরবাবু হুঁশিয়ারি দিলেও তৃণমূলের মানবাজার ব্লক কার্যকারী সভাপতি দিলীপ পাত্র বলেন, ‘‘আমি আগে জানলে মন্ত্রীকে ওই এলাকায় বিজয় মিছিল না করার পরামর্শ দিতাম। নীতিগত ভাবে আমার মনে হয়, যে অঞ্চলে আমরা পিছিয়ে আছি সেই অঞ্চলে বিজয় মিছিল না করাই ভাল। বরং ওই অঞ্চলে কেন আমাদের এই ফল হয়েছে তার পর্যালোচনা হওয়া দরকার। যারা আমাদের সমর্থন করেননি তাঁদের বোঝাতে হবে। ধানাড়া অঞ্চলের ঘটনা দলের পক্ষে আখেরে ক্ষতিকর হবে।’’
পুলিশের এক কর্তা বলেন, ‘‘আমরা পরিস্থিতির দিকে নজর রাখছি।’’ এ দিন চেষ্টা করেও যোগাযোগ করা যায়নি মন্ত্রী সন্ধ্যারানি টুডুর সঙ্গে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy