Advertisement
১৭ মে ২০২৪

তৃণমূলের দ্বন্দ্বে ফের কাঁপল নানুর

আবারও বোমাবাজি, হামলা এবং পাল্টা হামলার অভিযোগ। গদাধর না কাজল— এলাকার নিয়ন্ত্রণ কার হাতে থাকবে, সেই ল়ড়াইয়ে আবারও তেতে উঠল নানুর।

ভাসামাঠ গ্রামে চলছে আগুন নেভানোর কাজ।— নিজস্ব চিত্র

ভাসামাঠ গ্রামে চলছে আগুন নেভানোর কাজ।— নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
নানুর শেষ আপডেট: ১৭ নভেম্বর ২০১৬ ০০:০০
Share: Save:

আবারও বোমাবাজি, হামলা এবং পাল্টা হামলার অভিযোগ। গদাধর না কাজল— এলাকার নিয়ন্ত্রণ কার হাতে থাকবে, সেই ল়ড়াইয়ে আবারও তেতে উঠল নানুর।

নানুরের কীর্ণাহার ২ পঞ্চায়েতের ভাষামাঠ গ্রামে বুধবার বোমাবাজি, একাধিক বাড়ি ও দোকানে লুটপাট ও খড়ের পালুইয়ে আগুন লাগানোর অভিযোগ উঠল জেলা যুব তৃণমূলের সভাপতি গদাধর হাজরার অনুগামীদের বিরুদ্ধে। আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে হামলা এবং ঘরে ঢুকে মহিলাকে মারধরের পাল্টা অভিযোগ উঠেছে এলাকার দাপুটে নেতা কাজল শেখের অনুগামীদের বিরুদ্ধেও। দু’জনেই কেউই অবশ্য অভিযোগ মানতে চাননি।

এ দিকে, সংঘর্ষের খবর পেয়ে বিশাল পুলিশ বাহিনী এলাকায় গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। বোলপুর থেকে দমকলের একটি ইঞ্জিন গিয়ে ঘণ্টাখানেকের চেষ্টায় বাড়ি, দোকান এবং খড়ের পালুইয়ের আগুন নেভায়। দিন দু’য়েক আগেই নানুরের পাপুড়িতে দীর্ঘ দিন ঘরছাড়া থাকা লোকজন গ্রামে ঢুকেছেন। স্বাভাবিক ভাবেই ওই এলাকাতেও গোলমালের আশঙ্কা করছে পুলিশ। পুলিশ জানিয়েছে, এ দিনের ঘটনায় রাত পর্যন্ত কোনও পক্ষের লিখিত অভিযোগ মেলেনি। আরও গোলমালের আশঙ্কায় এলাকায় পুলিশি নজরদারি এবং টহলদারি বাড়িয়েছে বীরভূম পুলিশ।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, এ দিন সকাল এগারোটা নাগাদ মুখে কাপড় বেঁধে, হাতে বোমা এবং আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে তেড়ে আসে জনা পঁচিশেক দুষ্কৃতী। কিছু বুঝে ওঠার আগেই বোমা মারতে মারতে গ্রামের পশ্চিমপাড়ার কাজল শেখের সমর্থকদের বাড়ি, দোকান ঘর, খড়ের পালুইতে আগুন লাগিয়ে দেয়। দেদার বোমাবাজিও করে। ঘণ্টাখানেক এলাকায় তাণ্ডব চালিয়ে গা ঢাকা দেয় দুষ্কৃতীরা।

দুপুরের পরে ওই এলাকায় পৌঁছে দেখা গেল, পশ্চিমপাড়ার বাসিন্দা শিশির পালের স্ত্রী বছর পঞ্চাশের মায়াদেবীর চোখে-মুখে আতঙ্কের ছাপ মোছেনি তখনও। মায়াদেবীর কথায়, ‘‘তখন স্নান করছিলাম। বাড়িতে স্বামী ছিলেন না। আচমকা বেশ কিছু লোক মুখে কাপড় বেঁধে রে রে করে বাড়িতে ঢুকে পড়ে। বোমাবাজি করে, লুটপাট চালায়।’’ বোমাবাজির মধ্যেই গাই, বাছুর-সহ দু’টি ছাগল এবং মোটরবাইক নিয়ে দুষ্কৃতীরা চম্পট দিয়েছে বলে তাঁর অভিযোগ।

ওই পাড়ারই বাসিন্দা নটকোনা দোকানি বাদল পাল জানান, বোমার শব্দে টেকা দায় হচ্ছিল! প্রাণ বাঁচাতে দূরে ছুটে পালিয়ে যান তিনি। দুষ্কৃতীরা তাঁর দোকানে লুটপাট চালিয়ে আগুন দিয়েছে বলে অভিযোগ বাদলের। গ্রামের সঞ্জিত মণ্ডল, নিখিল পালের বাড়িতে ঢুকতে না পেরে পালুইয়ে আগুন ধরিয়ে দেয় দুষ্কৃতীরা। এঁদের প্রত্যেকেরই অভিযোগ, ‘‘প্রাক্তন যুব তৃণমূল নেতা কাজলের অনুগামী হওয়ার কারণেই গ্রামের বাসিন্দা তথা প্রাক্তন বিধায়ক গদাধর হাজরার অনুগামীরা এই হামলা চালিয়েছে।’’

ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা গেল, পশ্চিমপাড়ার বাসিন্দা ৭৬ বছরের আদুরি পালের বাঁ দিকের হাঁটুর উপরে জখমের চিহ্ন। বোমার ঘায়ে ওই ক্ষত বলে দাবি আদুরিদেবীর। ওই পাড়ার বাসিন্দা নির্মল পাল এবং শুভেন্দু পালের বাড়িতে তাজা বোমা পড়ে থাকতে দেখা গিয়েছে। বাবলু পাল ও সৃষ্টিধর মণ্ডলের বাড়িতেও যথেচ্চ ভাঙচুর ও লুটপাটের স্পষ্ট চিহ্ন মিলেছে।

এ দিনের ঘটনায় অভিযুক্তদের অন্যতম প্রমোদ পালের সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি। তাঁর স্ত্রী তরুলতা পাল ও মেয়ে বৈশাখী পালেদের দাবি, ‘‘অভিযোগ ভিত্তিহীন।’’ বৈশাখীর পাল্টা অভিযোগ, ‘‘মাকে মঙ্গলবার বিকেলে মারধর, গালিগালাজ করা হয়েছে। সে সব ধামাচাপা দিতেই মিথ্যে অভিযোগ করা হচ্ছে।’’ নানুরের প্রাক্তন বিধায়ক তথা জেলা যুব সভাপতি গদাধর হাজরা অবশ্য তাঁর অনুগামীদের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। পাল্টা হামলার অভিযোগ মানতে চায়নি কাজল বা তাঁর অনুগামীরাও।

এলাকায় উত্তেজনা থাকায় পুলিশ মোতয়েন রয়েছে। চলছে লাগাতার টহলও। শুরু হয়েছে তদন্তও। তবে রাত পর্যন্ত কাউকে আটক কিংবা গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

TMC Conflict Fire incident
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE