Advertisement
E-Paper

প্রার্থী করবে না বুঝেই কি দলবদল? সৌমিত্রকে নিয়ে গুঞ্জন

এসডিপিও-র পাল্টা দাবি, ‘‘সোমবার বিষ্ণুপুরের গাবডোবার বাসিন্দা কাদের খানকে অস্ত্র-আইনে ধরা হয়। তাকে জেরা করেই গোপীর নাম পাওয়া গিয়েছে

নিজস্ব সংবাদদাতা 

শেষ আপডেট: ১০ জানুয়ারি ২০১৯ ০১:০১
সাংসদের আপ্ত সহায়ককে তোলা হচ্ছে আদালতে। নিজস্ব চিত্র

সাংসদের আপ্ত সহায়ককে তোলা হচ্ছে আদালতে। নিজস্ব চিত্র

লোকসভা ভোটে তৃণমূল তাঁকে টিকিট দেবে না বুঝেই সৌমিত্র খান বিজেপিতে যোগ দিলেন। বুধবার দিল্লিতে সাংসদ সৌমিত্র খানের দলবদলের পরে এমনটাই দাবি করছেন রাজনীতি-সচেতন বাঁকুড়ার বাসিন্দাদের একাংশ। তৃণমূল কর্মীদের একাংশের দাবি, ব্যক্তি স্বার্থেই বারবার দলবদল করেছেন সৌমিত্র। সৌমিত্র যে বিজেপির টিকিটে ভোটে নামতে আগ্রহী, এ দিনই তা জানিয়ে দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘‘বিজেপি যদি আমাকে যোগ্য মনে করে, তাহলে তৃণমূলের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক ভাবে লড়াই করে দেখিয়ে দেব।”

গঙ্গাজলঘাটির দুর্লভপুরের বাসিন্দা সৌমিত্র গোড়ায় যুব কংগ্রেস করতেন। ২০১১ সালে বিধানসভা নির্বাচনে তৃণমূলের সঙ্গে জোট গড়ে কংগ্রেস। কংগ্রেসের টিকিটে কোতুলপুর কেন্দ্র থেকে জিতে সৌমিত্র মুকুল রায়ের হাত ধরে তৃণমূলে যোগ দেন। ২০১৪ সালে বিষ্ণুপুর কেন্দ্র থেকে তৃণমূলের সাংসদ নির্বাচিত হন। অল্প সময়ের জন্য যুব তৃণমূলের রাজ্য সভাপতিও করা হয় তাঁকে।

জেলা তৃণমূল নেতাদের দাবি, ‘‘তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নামেই এত দিন সৌমিত্র ভোট পেয়েছেন। এখন তিনি যদি মনে করেন, নিজের জোরেই জিতেছেন, তাহলে মিথ্যার স্বর্গে বাস করছেন। বিজেপি তাঁকে প্রার্থী করলে হাড়ে হাড়ে টের পাবে।’’ তবে, সৌমিত্রর ঘনিষ্ঠেরা দাবি করছেন, নির্দল প্রার্থী হলেও কয়েক লক্ষ ভোটের দাবিদার তিনি।

তৃণমূল কর্মীরা তা মানতে নারাজ। তাঁদের অভিযোগ, সৌমিত্রর বিরুদ্ধে গত কয়েক বছর ধরে বিভিন্ন এলাকা থেকে উঠে আসা বেনিয়মের অভিযোগে তাঁদের কান পাতা দায় হয়ে উঠেছিল। কিন্তু, তিনি নিজেকে সংযত করেননি। সে সব উড়িয়ে সৌমিত্র দাবি করেন, ‘‘পুলিশের কাছে কিন্তু, এত দিন কোনও অভিযোগ নেই।’’

তৃণমূলের জেলা নেতাদের একাংশও স্বীকার করছেন, সৌমিত্রর ‘বেফাঁস’ মন্তব্য মাঝে মধ্যেই দলকে বিড়ম্বনায় ফেলেছে। কয়েক মাস আগে পুলিশের এক অনুষ্ঠানে দলের কিছু নেতা ‘অহঙ্কারী’ বলে মন্তব্য করেন সৌমিত্র। দলের বাঁকুড়া জেলা সভাপতি অরূপ খানের সঙ্গেও তাঁর সম্পর্ক তলানিতে গিয়ে ঠেকেছিল। কয়েক সপ্তাহ আগে বাঁকুড়ায় যুব তৃণমূল সভাপতি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় সভার পরে ফেসবুকে সৌমিত্র পোস্ট করেন— ‘তৈলমর্দনই দলের অস্তিত্ব রক্ষার বড় পন্থা’। যা নিয়ে বিতর্ক দানা বাঁধে রাজনৈতিক মহলে।

মঙ্গলবার ফের তিনি বিতর্কিত মন্তব্য ফেসবুকে পোস্ট করেন। এসডিপিও (বিষ্ণুপুর) সুকোমলকান্তি দাসের বিরুদ্ধে তাঁকে খুনের চক্রান্ত করার অভিযোগ তোলেন সৌমিত্র। তাঁর দলীয় আপ্তসহায়ক গোপী ওরফে সুশান্ত দাঁকে গুমের চেষ্টা করা হচ্ছে বলেও অভিযোগ করেন। পুলিশ সুপার কোটেশ্বর রাও অভিযোগ মানতে চাননি।

বুধবার পুলিশ দাবি করে, গোপীকে অস্ত্র-আইনে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাঁর কাছ থেকে পাইপগান ও একটি কার্তুজ মিলেছে বলে দাবি। আদালতে তাঁকে তিন দিন পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ দেয়। গোপীর স্ত্রী টিয়া দাঁ অবশ্য দাবি করেন, “মঙ্গলবার বিকেলে এসডিপিও আমাদের বাড়িতে এসে চা-খাওয়ানোর নাম করে আমার স্বামীকে নিয়ে যান। তারপর তাঁকে মিথ্যা মামলায় ফাঁসিয়ে দেওয়া হল!’’

এসডিপিও-র পাল্টা দাবি, ‘‘সোমবার বিষ্ণুপুরের গাবডোবার বাসিন্দা কাদের খানকে অস্ত্র-আইনে ধরা হয়। তাকে জেরা করেই গোপীর নাম পাওয়া গিয়েছে।’’ সৌমিত্রর দাবি, “আমার ঘনিষ্ঠ বলেই গোপীকে ফাঁসানো হয়েছে। এ বার পুলিশ আমার বিরুদ্ধেও মিথ্যা মামলা সাজাতে চাইছে।’’ এসডিপিও মন্তব্য করতে চাননি।

বিজেপির রাজ্য নেতা সুভাষ সরকারের দাবি, ‘‘সৌমিত্র স্বচ্ছ ভাবমূর্তির ছেলে। তাঁর মতো ভাল মানুষেরা তৃণমূলে টিকতে পারবেন না।’’ বাঁকুড়ার জেলা তৃণমূল চেয়ারম্যান শ্যাম মুখোপাধ্যায় অবশ্য বলেন, ‘‘বিজেপিতে অনেক অস্বচ্ছ লোক রয়েছেন। আগে তাঁরা নিজেদের শোধরান, পরে তৃণমূলের দিকে আঙুল তুলবেন।’’

Politics TMC BJP Soumitra Khan
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy