প্রতীকী ছবি
সৌদি আরব থেকে দেশে ফেরার পরেই সর্দি-কাশি ধরেছিল। শুক্রবার সিউড়ি শহরে ডাক্তার দেখাতে আসেন বীরভূমের ময়ূরেশ্বর থানা এলাকার বাসিন্দা, বছর ছাব্বিশের ওই যুবক। সিউড়ি জেলা হাসপাতালের এক চিকিৎসককে ব্যক্তিগত চেম্বারে ওই যুবককে পরীক্ষা করার পরে সন্দেহ করেন, লক্ষণ করোনার হতে পারে। তিনি বিষয়টি জেলা হাসপাতালের সুপারকে জানান। কিন্তু ওই পর্যন্তই। চিকিৎসকের চেম্বার থেকে মাস্ক পরে বাড়ি ফেরেন ওই যুবক।
এই ঘটনায় বীরভূম জেলা স্বাস্থ্য দফতরের বিরুদ্ধে ‘উদাসীনতা’র অভিযোগ উঠেছে। চিকিৎসক জানানোর পরেও কেন সঙ্গে সঙ্গে ওই অসুস্থ যুবককে জেলা হাসপাতালের ‘আইসোলেশন ওয়ার্ড’-এ ভর্তি না করিয়ে যেতে দেওয়া হল, সে প্রশ্ন তুলেছে বিভিন্ন মহল। অথচ করোনা-আক্রান্ত, এমন সন্দেহভাজন রোগীদের জন্যই জেলার হাসপাতালগুলিতে তৈরি করা হয়েছে বিশেষ ‘আইসোলেশন ওয়ার্ড’। জেলা স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, চিন-সহ বিদেশ থেকে জেলায় ফিরেছেন, এমন ২৪ জনকে টানা নজরদারিতে রাখা হয়েছে। কিন্তু ‘ইনকিউবেশন পিরিয়ড’ (বিদেশ থেকে ফেরার ১৪ দিন পর্যন্ত)-এর মধ্যে থাকা সত্ত্বেও এই যুবকের ক্ষেত্রে প্রথম থেকেই স্বাস্থ্য দফতরের তৎপরতা দেখানো উচিত ছিল বলে মনে করছে চিকিৎসক মহল।
শেষ পর্যন্ত সংবাদমাধ্যম এই ঘটনা নিয়ে প্রশ্ন করায় নড়েচড়ে বসে
স্বাস্থ্য দফতর। বীরভূম স্বাস্থ্য জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক (সিএমওএইচ) হিমাদ্রি আড়ি জানিয়েছেন, ঘটনাটি তিনি জানতেন না। খবর পাওয়া মাত্রই রোগীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে। জেলাশাসককেও জানানো হয়েছে। রামপুরহাট মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল থেকে একটি
দল যাচ্ছে। ওই যুবককে রামপুরহাট বা সিউড়ি জেলা হাসপাতালে অথবা বেলেঘাটা আইডি হাসপাতালে পাঠানো হবে। রাতে তাঁকে রামপুরহাট মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি করানো হয়।
সিউড়ির চিকিৎসক জানান, ওই যুবককে তিনি পরীক্ষার পরেই জেলা হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পরামর্শ দিয়েছিলেন। তিনি রাজি না হওয়ায় সঙ্গে সঙ্গে মাস্ক ব্যবহার করার এবং দ্রুত বেলেঘাটা আইডি হাসপাতালে দেখিয়ে নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। জেলা হাসপাতালের সুপার শোভন দে-ও জানান, ওই চিকিৎসক তথ্য দিয়েছিলেন ঠিকই। কিন্তু রোগী হাসপাতালে ভর্তি হননি।
ময়ূরেশ্বরের ওই যুবক জানিয়েছেন, তিনি ২০১৮ সাল থেকে সৌদি আরবে একটি কফি শপে কাজ করেন। গ্রামের বাড়িতে স্ত্রী ও শিশুকন্যা রয়েছে। গত ৩ মার্চ তিনি দেশে ফিরেছেন। ওই যুবকের কথায়, ‘‘এমনিতেই আমার ঠান্ডা লাগার ধাত রয়েছে। টানা সর্দি কাশিতে ভুগছিলাম বলেই বাড়ি থেকে অনেকটা দূরে সিউড়ি গিয়েছিলাম ডাক্তার দেখাতে। সিউড়ি হাসপাতালে ভর্তি না হলেও বেলেঘাটা হাসপাতালে যাব ভেবেছিলাম।’’ ওই যুবকের গ্রামেই থাকেন ময়ূরেশ্বর ১ পঞ্চায়েত সমিতির জনস্বাস্থ্য কর্মাধ্যক্ষ সাদিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘‘খবর পাওয়ার পরেই ওই যুবকের বাড়িতে গিয়েছিলাম। উনি যাতে হাসপাতালে ভর্তি হয়ে প্রয়োজনীয় পরীক্ষা করান, সেটা আমরাও দেখব।’’
রাজ্যের স্বাস্থ্য অধিকর্তা অজয় চক্রবর্তী বলেন, ‘‘ওই ব্যক্তি সৌদি আরব থেকে নিশ্চিত ভাবেই এ দেশের কোনও বিমানবন্দর হয়ে এলাকায় ফিরেছেন। ওই বিমানবন্দরেই তাঁর স্ক্রিনিং হওয়ার কথা। যদি সেই সময় লক্ষণ না থেকে থাকে, তা হলে আমাদের রাজ্যের পর্যবেক্ষণের তালিকায় ওই ব্যক্তির থাকার কথা।’’ তিনি জানান, পরে যদি
ওই ব্যক্তির সর্দি-কাশি-জ্বরের মতো উপসর্গ দেখা দেয়, সেই তথ্যও রাজ্যের কাছে আসা উচিত ওই নজরদারির সৌজন্যে। ‘‘এ ক্ষেত্রে ঠিক কী হয়েছে, তা আমি খোঁজ নিয়ে দেখব।’’—বলছেন অজয়বাবু।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy