Advertisement
E-Paper

মৃত্যুর পরও বেঁচে থাকতে চান এই দম্পতি, তাই...

গত ৪ ডিসেম্বর বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজের অ্যানাটমি বিভাগের ফর্মে দেহদানের অঙ্গীকারপত্রে সই করেন দু’জনেই। নিকট আত্মীয়দের মধ্যে সাক্ষী হিসেবে সই করেন চারুচন্দ্রবাবুর ছেলে অতনু রায় এবং শ্যালক কৃষ্ণদাস মুখোপাধ্যায়।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৮ ডিসেম্বর ২০১৮ ০২:৩৬
প্রত্যয়ী: স্ত্রী রেবতীদেবীর সঙ্গে চারুচন্দ্র রায়। ছবি: দেবস্মিতা চট্টোপাধ্যায়

প্রত্যয়ী: স্ত্রী রেবতীদেবীর সঙ্গে চারুচন্দ্র রায়। ছবি: দেবস্মিতা চট্টোপাধ্যায়

মৃত্যু মানেই কি জীবনের শেষ—প্রশ্নটা নিজেকে বারবার করতেন। বারবারই মনে হত, তা তো নয়। মৃত্যুর পরেও তো জীবন থাকতে পারে। সেই তাড়না থেকেই মরণোত্তর দেহদানের অঙ্গীকার করলেন শান্তিনিকেতনের সুরুলের এক দম্পতি।

চারুচন্দ্র রায় এবং তাঁর স্ত্রী রেবতী। এক জন ৬৪, অন্য জন ৬২। কিন্তু, মৃত্যু মানেই জীবনের অন্ত— এই ধারণা তাঁরা ভেঙে দিতে চেয়েছেন। মৃত্যুর পরেও আরও কিছু জনের মধ্যে বেঁচে থাকতে চান। দেহদান বা মৃত্যুর পরে অঙ্গদান নিয়ে আজও আমাদের সমাজে অনেক অস্বস্তি আছে। তাই রায় দম্পতির উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছেন সকলেই। অবসরপ্রাপ্ত ব্যাঙ্ককর্মী চারুচন্দ্রবাবু জানান, একটা সময় তিনি অনেক বার মৃতদেহ দাহ করার জন্য শ্মশানে গিয়েছেন। দেহ পুড়ে যাওয়ার সঙ্গেই তাঁর মনে হত, মৃত ব্যক্তির সম্পূর্ণ অস্তিত্ব নষ্ট হয়ে গেল। কিন্তু, দেহদান যদি করা হয়, সে ক্ষেত্রে মৃত্যুর পরেও কিছুজনের মধ্যে বেঁচে থাকা যাবে। এই উপলব্ধি থেকেই দেহদানের ইচ্ছে ছিল তাঁর। সে কথা জানান তাঁর স্ত্রীকেও। তিনিও এক মত হন।

গত ৪ ডিসেম্বর বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজের অ্যানাটমি বিভাগের ফর্মে দেহদানের অঙ্গীকারপত্রে সই করেন দু’জনেই। নিকট আত্মীয়দের মধ্যে সাক্ষী হিসেবে সই করেন চারুচন্দ্রবাবুর ছেলে অতনু রায় এবং শ্যালক কৃষ্ণদাস মুখোপাধ্যায়। শেষ পর্যন্ত শুক্রবার অঙ্গীকারপত্রে শান্তিনিকেতন থানার ওসি সই করার পর বিষয়টি সম্পন্ন হয়। চারুচন্দ্রবাবুর কথায়, ‘‘খালি মনে হত, অঙ্গদানের মধ্যে দিয়ে যদি ফিরিয়ে দেওয়া যায় কিছু জনের প্রাণ! তাই দেহদানের অঙ্গীকার করেই ফেললাম।’’ অ্যানাটমি বিভাগের বিশেষজ্ঞেরা জানিয়েছেন, মৃতদেহ মূলত দু’টি কাজে ব্যবহৃত হয়। প্রথমত, ডাক্তারি ছাত্রছাত্রীদের শব ব্যবচ্ছেদে। দ্বিতীয়ত, অঙ্গ প্রতিস্থাপন। জীবিত অবস্থায় চামড়া, অস্থিমজ্জা বা দুই কিডনির একটি অন্যকে দান করা যায়। কিন্তু হৃৎপিণ্ড কিংবা ফুসফুসের ক্ষেত্রে তা সম্ভব নয়। তবে একটি মৃতদেহ থেকে লিভার, চোখের কর্নিয়া, হৃৎপিণ্ড, ফুসফুস ও কিডনি— মূলত এই পাঁচটি প্রত্যঙ্গ এবং চোদ্দোটি কলা সংগ্রহ করে অন্য শরীরে প্রতিস্থাপন করা যায়। অত্যন্ত দ্রুততার সঙ্গে তা করতে হয়।

আরও পড়ুন: ওপার থেকে উড়ে এল পদ্মার ইলিশ

দেহদানের সঙ্গে যুক্ত থাকা মানুষজন জানাচ্ছেন, যে কোনও প্রাপ্তবয়স্ক নাগরিক এক নিকটাত্মীয়-সহ দুই সাক্ষীর সামনে লিখিত ভাবে মরণোত্তর দেহদানের অঙ্গীকার করতে পারেন। অঙ্গীকারপত্রটি সব সময় সঙ্গে রাখাই বাঞ্ছনীয়। নিকটজনদেরও বিষয়টি কাছে জানিয়ে রাখা চাই। কেননা, মৃত্যুর পরে অঙ্গীকার রক্ষার দায়িত্ব যে তাঁদেরই! এক জন মরণোত্তর দেহদানের অঙ্গীকার করে যাওয়া মানুষের মৃত্যুর পরে মরদেহ এবং অঙ্গীকারপত্র সঙ্গে নিয়ে যে কোনও মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের অ্যানাটমি বিভাগে যেতে হবে। অবশ্য অঙ্গীকার করা না থাকলেও কারও মৃত্যুর পরে নিকটাত্মীয়েরা ইচ্ছে করলে দেহদান করতে পারেন। মরণোত্তর চক্ষুদানের ক্ষেত্রে এমন প্রায়ই হয়ে থাকে।

আরও পড়ুন:ভরা বাসে ‘অসভ্যতা’, যুবককে টেনেহিঁচড়ে নামিয়ে পুলিশের হাতে দিলেন বধূ

চারুচন্দ্রবাবু এবং রেবতীদেবী বলেন, ‘‘আমরা চাই আমাদের মৃত্যুর পরে মৃতপ্রায় কারও মধ্যে আমাদের অঙ্গ প্রতিস্থাপনের পরে আমরা যেন আরও কয়েক বছর বেঁচে থাকতে পারি। আরও মানুষ এগিয়ে আসুক সেটাও চাই। আমাদের পরিবারের সবাইকে এ কথা বলেছি।’’ কয়েক বছর আগে সংবাদ শিরোনামে এসেছিল বসিরহাটের মৈত্রবাগানের দাস পরিবারের কথা। মৃত্যুর পরে দেহদানই ওই পরিবারের রেওয়াজ। স্বামী-স্ত্রী দু’জনেই শিক্ষক ছিলেন, দু’জনেই দেহদান করেছিলেন। তাঁদের চার ছেলেও শিক্ষকতার সঙ্গে যুক্ত। তাঁরা প্রত্যেকেই দেহ এবং চোখ দানের অঙ্গীকার করেছিলেন।

তাঁদের অঙ্গীকার দেহদান নিয়ে আরও মানুষকে সচেতন করুক, এগিয়ে আসুন আরও অনেকে—এটাই চান সুরুলের রায় দম্পতি।

Couple Organ Donation Shantiniketan
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy