E-Paper

বিদ্যুতের কুরিয়ার বিল ৪০ হাজার, বিতর্ক মঞ্জুর ঘিরে

বিশ্বভারতীর অন্দরে অনেকেরই প্রশ্ন, বিদ্যুতের আমলে অনৈতিক ভাবে শাস্তিপ্রাপ্ত কর্মী-শিক্ষকদের একাংশের বকেয়া বেতন আদালতের নির্দেশ সত্ত্বেও ফেরত দেওয়া হয়নি এখনও।

বাসুদেব ঘোষ 

শেষ আপডেট: ২৭ নভেম্বর ২০২৫ ০৮:৩৪
এই কুরিয়ার বিল মঞ্জুর করা নিয়েই বিশ্বভারতীতে বিতর্ক দানা বেঁধেছে।

এই কুরিয়ার বিল মঞ্জুর করা নিয়েই বিশ্বভারতীতে বিতর্ক দানা বেঁধেছে। ফাইল চিত্র।

একটি নামী কুরিয়ার সংস্থার রসিদ। সে রসিদে লেখা আছে জামাকাপড় এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় পাঠানো বাবদ ৪০ হাজার ৪০০ টাকা খরচ হয়েছে! সে জামাকাপড় অবশ্য বিশাল কোনও দূরত্ব অতিক্রম করেনি। করেছে মাত্র তিন কিলোমিটার। এই রসিদ যাঁর নামে, তিনি বিদ্যুৎ চক্রবর্তী। বিশ্বভারতীর প্রাক্তন স্থায়ী উপাচার্য।

রসিদ অনুযায়ী ওই জামাকাপড় স্থানান্তর হয়েছিল ২০২৩ সালের নভেম্বরে। বিদ্যুৎ চক্রবর্তীর অবসরের পরে। গন্তব্য ছিল বোলপুরেরই সুরুল এলাকা। মাত্র কয়েক কিলোমিটার জামাকাপড় বহনের কুরিয়ার বিল কী ভাবে ৪০ হাজার হল, সে প্রশ্নে বিশ্বভারতীর অন্দরে শুরু হয়েছে বিতর্ক। এই আকাশছোঁয়া বিল সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ মঞ্জুরও করেছেন বলে বিশ্বভারতী সূত্রের খবর। তা জানাজানি হওয়ার পরে বিতর্ক আরও বেড়েছে।

বিশ্বভারতীর অন্দরে অনেকেরই প্রশ্ন, বিদ্যুতের আমলে অনৈতিক ভাবে শাস্তিপ্রাপ্ত কর্মী-শিক্ষকদের একাংশের বকেয়া বেতন আদালতের নির্দেশ সত্ত্বেও ফেরত দেওয়া হয়নি এখনও। অথচ বিদ্যুতের কুরিয়ার বিলের টাকা মিটিয়ে দেওয়া হল কোন যুক্তিতে? কেন তদন্ত করে দেখা হল না, আদতে এত টাকা খরচ হয়েছে কি না? প্রশ্নের জবাবে কোনও মন্তব্য করেননি বিশ্বভারতীর ভারপ্রাপ্ত জনসংযোগ আধিকারিক অতিগ ঘোষ। ফোনে যোগাযোগ করা হলে বিদ্যুৎ বলেন, ‘‘এ বিষয়ে আমার কিছু জানা নেই। তাই মন্তব্য করব না।’’

বিশ্বভারতী সূত্রে জানা যাচ্ছে, ’২৩ সালে ৮ নভেম্বর বিদ্যুৎ অবসর নেন। অবসর নেওয়ার পরেও সরকারি বাসভবন পূর্বিতা দখল করে বেশি কিছুদিন থেকেছেন বলে সেই সময় অভিযোগ উঠে। কুরিয়ার সংস্থার যে রসিদ আনন্দবাজারের হাতে এসেছে, সেটিও নভেম্বরের শেষের দিকের। তা থেকে স্পষ্ট, প্রাক্তন উপাচার্য নিজের জিনিসপত্র অন্যত্র স্থানান্তরের জন্য ওই বেসরকারি কুরিয়ার সংস্থাকে দায়িত্ব দিয়েছিলেন। সংস্থার রসিদে দেখানো হয়েছে , শান্তিনিকেতন থেকে শ্রীনিকেতনের সুরুল, মেরেকেটে তিন কিলোমিটার দূরত্বের গন্তব্যে জামাকাপড় (রসিদ অনুযায়ী ৪০০ কেজির বেশি) বহনের ভাড়া বাবদ ৪০ হাজার ৪০০ টাকার বিল হয়েছে। যা অবাস্তব বলে দাবি বিশ্বভারতীর কর্মী ও শিক্ষকদের একাংশের।

যদিও বিদ্যুতের ঘনিষ্ঠ মহলের দাবি, তিনি এই ধরনের কোনও বিল জমা করেননি।উল্টে দু'বছর ধরে বকেয়া পাচ্ছেন না জানিয়ে গত অগস্টে বিশ্বভারতীর বর্তমান উপাচার্য প্রবীরকুমার ঘোষকে নিশানা করে চিঠি দিয়েছেন বিদ্যুৎ। চিঠিতে তিনি অভিযোগ করেন, বর্তমান উপাচার্য একটি বৈঠকে বলেছেন, যেহেতু বিদ্যুৎ চক্রবর্তী অনেকের পাওনা আটকেছিলেন, তাই তিনি নিজে এত তাড়াতাড়ি কী করে নিজের পাওনা আশা করেন। সেই চিঠিতেই বিদ্যুৎ লেখেন, ‘‘আমি প্রায় দু'বছর আবেদন নিবেদন (বকেয়া চেয়ে) করলাম। কোনও ফল হল না। অতএব, আমি আমার পাওনা দেওয়া থেকে বিশ্বভারতীকে রেহাই দিলাম।’’

বিদ্যুৎ রেহাই দেওয়ার কথা বলার কয়েক মাস পরেই সামনে এল ৪০ হাজার টাকার কুরিয়ার বিল। যা বিশ্বভারতী মঞ্জুর করার ঘটনায় নানা প্রশ্ন উঠেছে।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Visva Bharati University Bidyut Chakraborty

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy