Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

কাটা গোড়ালি জোড়া লাগল ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে

বোরো থানার জাগদা গ্রামের বাসিন্দা বছর চল্লিশের মাধুরী মাহাতো রবিবার সন্ধ্যায় একা বাড়িতে ছিলেন। তাঁর স্বামী বাইরে ছিলেন। মাধুরীদেবী জানাচ্ছেন, সেই সন্ধ্যায় অন্ধকারে ঘরের মধ্যে তিনি পা পিছলে পড়ে যান।

মর্মান্তিক: তখনও দুমড়ে যাওয়া গাড়িতে পড়ে দেহ। পুরুলিয়া-বাঁকুড়া ৬০এ জাতীয় সড়কে। ছবি: সুজিত মাহাতো।

মর্মান্তিক: তখনও দুমড়ে যাওয়া গাড়িতে পড়ে দেহ। পুরুলিয়া-বাঁকুড়া ৬০এ জাতীয় সড়কে। ছবি: সুজিত মাহাতো।

নিজস্ব সংবাদদাতা
মানবাজার শেষ আপডেট: ২৮ জুন ২০১৭ ১৪:০০
Share: Save:

ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্র মানেই পরিকাঠামোর অভাবের দোহাই দিয়ে জেলা হাসপাতালে রোগী ‘রেফার’ করে দেওয়াটাই অনেক জায়গার প্রায় চল হয়ে উঠেছে। সেখানে বঁটিতে গোড়ালি কেটে প্রচুর রক্তক্ষরণ হওয়া এক বধূর অস্ত্রোপচার করলেন বোরোর বারি ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের চিকিৎসক। ওই বধূর মনের জোরকেও কুর্নিস করছেন চিকিৎসকেরা।

বোরো থানার জাগদা গ্রামের বাসিন্দা বছর চল্লিশের মাধুরী মাহাতো রবিবার সন্ধ্যায় একা বাড়িতে ছিলেন। তাঁর স্বামী বাইরে ছিলেন। মাধুরীদেবী জানাচ্ছেন, সেই সন্ধ্যায় অন্ধকারে ঘরের মধ্যে তিনি পা পিছলে পড়ে যান। হঠাৎ সেখানে রাখা বঁটিতে তাঁর ডান পায়ের গোড়ালির অনেকটা কেটে ঝুলে যায়। সঙ্গে সঙ্গে রক্ত ঝরতে শুরু করে। কিন্তু ফোন না থাকায় স্বামীকে তিনি খবর দিতে পারেননি। বাড়িও গ্রামের একপ্রান্তে। কয়েকবার হাঁকডাক করেও পড়শিদের কারও সাড়া না পেয়ে তিনি রক্তাক্ত অবস্থায় ঘরেই পড়েছিলেন।

তবে কপাল ভাল। কিছুক্ষণ পরে সাইকেল নিয়ে তাঁদের বাড়িতে আসেন পাড়া সম্পর্কের আত্মীয় এক কিশোরী। মাধুরীর কথায়, ‘‘প্রচণ্ড কষ্ট হচ্ছিল। অন্য কাউকে ডেকে সময় নষ্ট করতে না বলে ওই ভাসুরঝিকে বলি কাছাকাছি কোনও হাসপাতালে নিয়ে যেতে।’’ সেই কিশোরীর সাইকেলে চেপে অন্ধকারের মধ্যে কোনওরকমে এক কিলোমিটার দূরের বারি স্বাস্থ্যকেন্দ্রে তিনি যান।

বারি ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের চিকিৎসক অচ্যুত পাল বলেন, ‘‘দীর্ঘক্ষণ রক্তপাতে মাধুরীদেবী নেতিয়ে পড়েছিলেন। পরীক্ষা করে দেখি খুবই গভীর ভাবে কেটেছে। হাড় বেরিয়ে গিয়েছিল। এই অস্ত্রোপচার অস্থিশল্য বিশেষজ্ঞের কাজ। তা ছাড়া প্লাস্টিক সার্জারিরও প্রয়োজন হতে পারে। এখানে ব্লাড ব্যাঙ্কও নেই।আমি তাঁকে এখানে ওই অস্ত্রোপচারের পরিকাঠামো নেই জানিয়ে বড় হাসপাতালে যেতে বলেছিলাম। কিন্তু আর্থিক জোর নেই, পুরুষেরাও সঙ্গে কেউ নেই জানিয়ে মাধুরীদেবী এখানেই যা করার করতে বলে জোর ধরেন।’’ শেষে তিনি ‘লোকাল অ্যানাস্থেশিয়া’ করে রাতেই অস্ত্রোপচার করেন। মঙ্গলবার স্বামী বুদ্ধেশ্বর মাহাতোর কাঁধে ভর দিয়ে কয়েক পা তিনি হেঁটেছেন। চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, পুরোপুরি সুস্থ হয়ে উঠতে আরও কিছুদিন সময় লাগবে।

মানবাজার (২) বিএমওএইচ কৌশিক ঢালি বলেন, ‘‘ওই মহিলার মানসিক জোর প্রচণ্ড। প্রচুর রক্তক্ষরণে নেতিয়ে পড়েও তিনি মনের জোর হারাননি। ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে এই ধরনের অস্ত্রোপচার যেমন বিরল, তেমনই মাধুরীদেবীর মতো মনের জোর থাকা মহিলাও সহজে দেখা যায় না।’’ মাধুরীদেবীর স্বামী বলেন, ‘‘ওই রাতে ডাক্তারবাবুরা আমার স্ত্রীর জন্যে যা করেছেন তাতে আজীবন ঋণী থাকব।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE