Advertisement
E-Paper

কুড়ি কিমি দূরে দেহ

নদী পার হতে গিয়ে ভেসে যাওয়া বৃদ্ধের দেহ উদ্ধার হল দু’দিন পরে । শনিবার ইন্দাস থানার মঙ্গলপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের কুঞ্জপুর গ্রাম লাগোয়া দ্বারকেশ্বর নদের ধারে নিখোঁজ বৃদ্ধ হাসেম আলি খানের (৬২) দেহ উদ্ধার হয়।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৯ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০১:০১

নদী পার হতে গিয়ে ভেসে যাওয়া বৃদ্ধের দেহ উদ্ধার হল দু’দিন পরে। শনিবার ইন্দাস থানার মঙ্গলপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের কুঞ্জপুর গ্রাম লাগোয়া দ্বারকেশ্বর নদের ধারে নিখোঁজ বৃদ্ধ হাসেম আলি খানের (৬২) দেহ উদ্ধার হয়। ইন্দাস থানার আধিকারিকেরা জানিয়েছেন, বিষ্ণুপুরের প্রকাশঘাট থেকে প্রায় ২০ কিলোমিটার দুরে কুঞ্জপুরের কাছে এ দিন ভোরে স্থানীয় বাসিন্দারা মাছ ধরতে গিয়ে দেহটি দেখতে পান। তাঁরাই ইন্দাস থানায় খবর দেন। পুলিশ কর্মীরা দেহটি থানায় নিয়ে যান। হাসেম আলি খানের পরিজনেরা দেহটি শনাক্ত করেন। বিষ্ণুপুর জেলা হাসপাতালের মর্গে দেহটি ময়না-তদন্তের জন্য পাঠানো হয়। ইন্দাস থানায় একটি অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা রুজু হয়েছে।

বৃহস্পতিবার দুপুরে কাজ শেষ করে নদী পার হচ্ছিলেন হাসেম। কিন্তু, সেই সময়ে নদীতে জল বেড়ে গিয়েছিল। জলের স্রোতে হঠাৎ ভেসে যান তিনি। দু’দিন ধরে গ্রামবাসী ও প্রশাসন দিনভর বিস্তর খোঁজাখুঁজিও করেন। শনিবার সকালে দুঃসংবাদ প্রকাশঘাট গ্রামের পাঠান পাড়ায় পৌঁছতেই ভেঙে পরেন তাঁর স্ত্রী গুলবাহার বিবি ও পরিজনেরা। বাসিন্দাদের এক কথা— এমন সজ্জন ও মিশুকে চরিত্রের মানুষ হাসেম যে এ ভাবে নদীর জলে ভেসে যাবেন, কেউ ভাবেননি। শোক নেমে আসে গোটা গ্রামেই। হাসেমের বাড়িতে ভিড় বাড়তে থাকে পরিজন ও গ্রামবাসীদের।

হাসেমের আত্মীয় রুস্তম আলি খান, নজরুল খানেরা বলেন, ‘‘ওই নদী পেরিয়েই এখানকার বাসিন্দাদের নানা কাজে যাতায়াত করতে হয়। ওই মৃত্যুর পরে নদী পারাপার বন্ধ করে দিলে লোকজনের রুজিতে টান পড়বে। তাই নদীর ভয়ে ঘরে বসে থাকার উপায় নেই।’’ তাঁদের প্রশ্ন— আর কত জনের মৃত্যু হলে প্রকাশঘাটের মানুষ সেতু পাবেন? ভোট আসে আর ভোট যায়, কিন্তু, প্রকাশঘাটের বাসিন্দারদের কাছে নেতাদের সেতু তৈরির প্রতিশ্রুতি আর পূরণ হয় না।

বিষ্ণুপুর ব্লকের দ্বারিকা-গোঁসাইপুর পঞ্চায়েতের গোপালপুর এবং উলিয়াড়া পঞ্চায়েতের প্রকাশঘাট গ্রামের মধ্যে দ্বারকেশ্বর নদের উপর সেতু তৈরির দাবি বহুদিনের। নদীর উত্তর পাড়ের প্রকাশঘাট, উলিয়াড়া, পানরডাঙর, বৈকুণ্ঠপুর, হিংজুড়ি, মুনিনগর, গুমুট, পাতলাপুর-সহ ২০টি গ্রামের বাসিন্দারা ছাড়াও ইন্দাস, পাত্রসায়র ব্লকের হাজার-হাজার মানুষকে ঘুরপথে ২০ কিলোমিটার পথ ঘুরে সারদা সেতু দিয়ে মহকুমা শহরের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে হয়।

বাসিন্দারা জানাচ্ছেন, বছরের অন্য সময়ে শুকনো নদের বুক চিরে অস্থায়ী রাস্তা দিয়ে কোনও রকমে যাতায়াত চলে। কিন্তু, বর্ষায় অগস্ট থেকে নভেম্বর পর্যন্ত জল থাকায় সমস্যায় পড়তে হয়। ফেরিঘাটের নৌকায় এত ভিড় হয় যে তিল ধরারও জায়গা থাকে না। অতিরিক্ত যাত্রী নিয়ে সেই নৌকাযাত্রাও কম ভয়াবহ নয়। কিন্তু, জীবনের ঝুঁকি নিয়েই নৌকায় পারাপার করতে হয় বাসিন্দাদের। রাতে ফেরি বন্ধ হয়ে গেলে রোগীদের নিয়ে যাতায়াতও করা সম্ভব হয় না। অভিযোগে, নদী পারাপার করতে না পারায় সাপে কাটা রোগীও পথেই মারা গিয়েছে।

প্রকাশঘাটের জাভেদ খান, মিলন পাত্র বলেন, ‘‘প্রশাসনের একটু সদিচ্ছা থাকলে সাধারণ মানুষগুলো সুস্থ ভাবে বাঁচতে পারে। যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি হলে এলাকার আর্থ-সামাজিক ছবিও বদলাবে।’’

সেতু হচ্ছে না কেন? বিষ্ণুপুরের বিধায়ক তুষারকান্তি ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘বারবার বিধানসভায় প্রকাশঘাটে সেতু তৈরির দাবি জানিয়েছি। জেলা সফরে আসা মুখ্যমন্ত্রীকেও কয়েকবার বলেছি। তবে প্রচুর টাকার ব্যাপার। আপাতত সেখানে একটি ভাসাপুল তৈরি করা যায় কি না, তা নিয়ে বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলব।’’ মহকুমাশাসক (বিষ্ণুপুর) মানস মণ্ডল বলেন, ‘‘গ্রামবাসীরা সেতু চেয়ে গণস্বাক্ষর করে জমা দিলে সংশ্লিষ্ট দফতরে পাঠাব। বিষ্ণুপুরের বিডিও-র সঙ্গে এ নিয়ে কথা বলব।’’

Death Dead Body Missing Elderly Man
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy