এক ধাক্কায় কলেজের প্রায় সব হস্টেলেই বৃদ্ধি করা হয়েছে বার্ষিক ফি। ছাত্রাবাসে থাকার খরচ ‘অস্বাভাবিক হারে’ বাড়ানো হয়েছে বলে অভিযোগ তুলে প্রতিবাদ দেখালেন বাঁকুড়া খ্রিস্টান কলেজের পড়ুয়াদের একাংশ। কলেজের মূল ভবনের দরজায় তালা লাগিয়ে বৃহস্পতিবার বিক্ষোভে শামিল হন আবাসিক পড়ুয়ারা। অবিলম্বে কলেজ কর্তৃপক্ষ বর্ধিত ফি নেওয়ার সিদ্ধান্ত বাতিল না করলে আগামী দিনে বৃহত্তর আন্দোলনের হুঁশিয়ারিও দিয়েছেন তাঁরা।
বাঁকুড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে থাকা কলেজগুলির মধ্যে অন্যতম নামী কলেজ খ্রিস্টান কলেজ। পরিকাঠামো থেকে শুরু করে পঠনপাঠনের মানের নিরিখে রাজ্যের কলেজগুলির তালিকায় এই কলেজ একেবারে প্রথম সারিতেই রয়েছে। কলেজ সূত্রে জানা গিয়েছে, এই কলেজে মোট পাঁচটি হস্টেল রয়েছে। এর মধ্যে দু’টি হস্টেল ছাত্রীদের জন্য বরাদ্দ। পাঁচটি হোস্টেল মিলিয়ে আবাসিকের সংখ্যা অন্তত ৪০০। হোস্টেলগুলিতে আবাসিকদের মাসিক খাওয়া খরচ বাবদ টাকা নেওয়া ছাড়াও প্রতি বছর ভর্তি ফি, বৈদ্যুতিক সামগ্রীর রক্ষণাবেক্ষণ, পরিকাঠামো রক্ষণাবেক্ষণ ও সংস্কার বাবদ নির্দিষ্ট হারে টাকা নেওয়া হয়। হস্টেল আবাসিকদের দাবি, এত দিন পর্যন্ত বাঁকুড়া খ্রিষ্টান কলেজের ব্রাউন হোস্টেলের জন্য আবাসিকদের মাথাপিছু বার্ষিক ফি-র পরিমাণ ছিল ৭,৩০০ টাকা। মিচেল, মাদার টেরেজ়া ও সিস্টার নিবেদিতা হোস্টেলের জন্য তা ছিল ৬,৯০০ টাকা। সদ্য শুরু হওয়া শিক্ষাবর্ষে প্রতিটি হোস্টেলের ক্ষেত্রেই সেই ফি বৃদ্ধি করেছে কলেজ কর্তৃপক্ষ। আবাসিক পড়ুয়াদের দাবি, ব্রাউন হোস্টেলে থাকতে গেলে এখন থেকে খাওয়া খরচ বাদে আবাসিকদের মাথাপিছু প্রতি বছর গুনতে হবে ৯,২০০ টাকার এককালীন ফি। মিচেল, মাদার টেরেজা ও সিস্টার নিবেদিতা হোস্টেলের জন্য দিতে হবে এককালীন ৮,২০০ টাকা। বিএম হোস্টেলের আবাসিকদের জন্য এ বার মাথাপিছু এককালীন বার্ষিক ফি ধার্য করা হয়েছে ৫,১০০ টাকা। অর্থাৎ বিএম হোস্টেল বাদ দিলে মাথাপিছু এই বার্ষিক ফি-র পরিমাণ প্রায় সব হোস্টেলেই বেড়েছে ১ হাজার ২০০ টাকার বেশি। বিক্ষোভকারী আবাসিক পড়ুয়াদের দাবি, অস্বাভাবিক হারে ফি বৃদ্ধির ফলে বহু পড়ুয়া হোস্টেলে থেকে পড়াশোনা করতে পারবেন না।
বাঁকুড়া খ্রিস্টান কলেজের ব্রাউন হোস্টেলের আবাসিক পড়ুয়া সৃজন কোনারের বক্তব্য, ‘‘মূল্যবৃদ্ধির কারণ দেখিয়ে কলেজ কর্তৃপক্ষ প্রতি বছর হোস্টেলের বাৎসরিক ফি যুক্তিহীন ভাবে বাড়িয়ে চলেছে। আমরা এই ফি বৃদ্ধি কোনও ভাবেই মানছি না।’’ হোস্টেলের আবাসিক দীপাঞ্জনা গরাই বলেন, ‘‘হোস্টেলের এই এককালীন ফি বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত অবিলম্বে বাতিল করতে হবে। কারণ এই বর্ধিত ফি দেওয়ার ক্ষমতা বহু আবাসিক পড়ুয়ারই নেই।’’ খ্রিস্টান কলেজের অধ্যক্ষ ফটিকবরণ মণ্ডল বলেন, ‘‘ছাত্রছাত্রীদের সুবিধার জন্যেই হোস্টেল। কোনও আর্থিক লাভজনক সংস্থা নয়। বর্তমানে যে ভাবে সমস্ত জিনিসের দাম বাড়ছে, তাতে এই ফি কিছুটা বৃদ্ধি করতে আমরা বাধ্য হয়েছি। পড়ুয়াদের সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতেই তা বৃদ্ধি করা হয়েছে। ছাত্রছাত্রীরা চাইলে ফের আলোচনায় বসা যেতে পারে। জুন থেকে হোস্টেলগুলিতে এই বর্ধিত ফি চালু হলেও আবাসিক পড়ুয়াদের কেন এত দিনে ঘুম ভাঙল, তা বুঝতে পারছি না।’’