ওজন বেড়ে যাচ্ছে, হাঁপিয়ে যাচ্ছেন, হাঁটতে-চলতে কষ্ট হচ্ছে, সবটাই বুঝতে পারছেন। কিন্তু মেদ ঝরাতে গেলে যে স্যালাড বা সেদ্ধ খেয়ে থাকতে হবে, সে কথা ভাবলেই ইচ্ছায় ভাটা পড়ছে?
মেদ গলাতে গেলে খাওয়া-দাওয়া করতে হবে মেপেজুপে, লাগাম পরাতে হবে স্বাদে, খাওয়া যাবে না পছন্দের খাবার— এমনটাই জানেন এবং মানেন অনেকে। কেউ কেউ ভাবেন, ওজন ঝরাতে গেলে পেটটি ভরেও খাওয়া চলবে না। তবে এই সবই যে ভুল কথা, বলছেন নেটপ্রভাবী পুষ্টিবিদ নুপূর পটেল। বলিউড তারকাদের কেউ কেউও তাঁর পরামর্শ মানেন। সমাজমাধ্যমে নুপূর এমন এক ডায়েটের কথা বলেছেন, যেখানে পেট ভরে খেয়েও ৩০ কেজি পর্যন্ত ওজন কমানো সম্ভব।
প্রোটিনে ভরা প্রাতরাশ: সকালটা শুরু করতে হবে প্রোটিন দিয়ে। নুপূরের পরামর্শ কোনও দিন ইয়োগার্ট বা টক দই খাওয়ার, কোনও দিন টোস্ট, ডিমের পোচ বা ডিম ভুজিয়া। ২০০ গ্রাম ইয়োগার্ট বা ঘরে পাতা টক দইয়ের সঙ্গে পছন্দের ১০ গ্রাম বীজ বা বাদাম মিশিয়ে নিতে হবে। সঙ্গে পছন্দের কোনও একটি ফল। এমন খাবারে এক বারে ৩০ গ্রাম প্রোটিন মিলবে।
আমিষ খেলে মাল্টি গ্রেন ব্রেড ২টি সেঁকে নিন। সঙ্গে রাখুন কুসুম ছাড়া বা কুসুম সহ ২টি ডিম সেদ্ধ বা পোচ। চাইলে ডিমের ভুজিয়া খাওয়া যেতে পারে। পছন্দের সব্জি ভাপিয়ে অল্প তেলে সাঁতলেও খাওয়া যাবে পাউরুটির বদলে। এই ধরনের খাবারেও ২৮ গ্রাম পর্যন্ত প্রোটিন পাওয়া যেতে পারে। তবে ডিম ভাজা হচ্ছে না সেদ্ধ, তার উপর পুষ্টির মাত্রা নির্ভর করবে। সেদ্ধ বা কম তেল কম আঁচে করা রান্নায় পুষ্টিগুণ বেশি মেলে।
আরও পড়ুন:
মধ্যাহ্নভোজ: ভাত-প্রেমী আপনি? মোটেই ভাত খাওয়া ছাড়তে হবে না। তবে চাইলে ভাতের বদলে মিলেট সেদ্ধ বা মিলেট উপমাও খেতে পারেন। সঙ্গে ১২০ গ্রাম মাংস অথবা মাছ, লেবুর রস দেওয়া একবাটি স্যালাড। পছন্দের কোনও চাটনি (মিষ্টি ছাড়া)। এই খাবারেও যথেষ্ট প্রোটিন মিলবে। তার সঙ্গে স্যালাড ফাইবারের জোগান দেবে। মিলবে ভিটামিন এবং খনিজও।
রোজ এক খাবার খেতে না চাইলে রুটি, ডাল পছন্দের কোনও সব্জি দিয়েও দুপুরের খাওয়া সারতে পারেন। অবশ্য মরসুমের টাটকা সব্জি পাতে থাকতে পারে। তেল-মশলার ব্যবহার খানিক কমালে হজমেও সুবিধা হবে, পুষ্টিগুণও বজায় থাকবে। এই খাবারে অবশ্য প্রোটিনের মাত্রা কিছুটা কমবে, যদি না তরকারিতে পনির, টোফু, সয়াবিন, রাজমা জাতীয় কিছু থাকে।
নৈশ আহার : শুধু স্যুপ খেয়ে শুয়ে পড়ে রাতে খিদের জ্বালায় উঠতে হবে না। বরং পনির, মাছ অথবা মাংস রাখতে পারেন পাতে। সঙ্গে নানা রকম সব্জি। সব্জি সেদ্ধ বা স্যতে করে নেওয়াও চলে। স্বাদের দিকে থেকে তা যেন ভাল হয়। তবে বেশি তেল এবং মশলা নয়, বরং পেঁয়াজ, একটু ঘি বা মাখন, নুন, গোলমরিচ দিয়ে সব্জি ভাপিয়ে হালকা নাড়িয়ে-চাড়িয়ে নিলেও খেতে ভাল লাগবে। এতে চাইলে চাট মশলা, লেবুর রস যোগ করতে পারেন।
চাইলে গ্রিল করা মাছ, ডিম, পনির ভুজিয়ার মধ্যেও যে কোনও একটি ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে খেতে পারেন।
শেষপাতের মিষ্টিমুখ: খাবার শেষে মিষ্টি জাতীয় কিছু খেতে ইচ্ছা করে। সেই ইচ্ছাও পুরোপুরি বাদ দিতে বলছেন না পুষ্টিবিদ। বরং তাঁর পরার্শ, ডিমের সাদা অংশ, কোকো, প্রোটিন পাউডার, দুধ দিয়ে মগ কেক বানিয়ে নেওয়ার।
তা ছাড়া ফ্রিজের ঠান্ডায় জমাট বাঁধা কলা, দুধ এবং প্রোটিন পাউডার মিশিয়ে শেক বানানো যেতে পারে। এতেও প্রোটিন মিলবে।
নুপূরের পরামর্শ, না খেয়ে নয়, বরং প্রোটিনের মাত্রা বজায় রেখে, পছন্দের খাবার স্বাস্থ্যসম্মত উপায়ে পরিমিত খেলেই ধীরে ধীরে ওজন কমানো সহজ হবে।