Advertisement
E-Paper

পাকা ধানে মই নিম্নচাপের

সেচের সমস্যা থাকা পুরুলিয়ার চাষিরা দেরিতে বৃষ্টি পেয়ে পরে ধান রোপণ করেছিলেন। সেই সব এলাকায় এখন ধান সবে পাকতে শুরু করেছে। কোথাও আবার ধান সবুজ।

নিজস্ব  প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ২৪ অক্টোবর ২০১৯ ২৩:৫৪
অসহায়: জমি ডুবেছে বৃষ্টির জলে। বান্দোয়ানে বৃহস্পতিবার। ছবি: রথীন্দ্রনাথ মাহাতো

অসহায়: জমি ডুবেছে বৃষ্টির জলে। বান্দোয়ানে বৃহস্পতিবার। ছবি: রথীন্দ্রনাথ মাহাতো

কার্তিকের গোড়ার এই বৃষ্টিতে কারও পৌষ মাস, কারও সর্বনাশ। বাঁকুড়া জেলার সেচ-সেবিত এলাকায় সময় মতো আমন ধানের চাষ শুরু করায় এখন মাঠ ভরা পাকা ধান। কিন্তু বুধবার থেকে নামা নিম্নচাপের বৃষ্টিতে পাকা ধান ভরা জমি জলমগ্ন হয়ে পড়েছে। সেই ধানের কতটা বাঁচিয়ে গোলায় ভরতে পারবেন, তা নিয়ে চিন্তায় পড়ে গিয়েছেন বিষ্ণুপুর মহকুমা এলাকার চাষিরা। অসময়ের বৃষ্টিতে বিষ্ণুপুরে আনাজ চাষেও ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে। আবহাওয়া দফতর জানিয়েছে, আজ, শুক্রবারও বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে।

আবার সেচের সমস্যা থাকা পুরুলিয়ার চাষিরা দেরিতে বৃষ্টি পেয়ে পরে ধান রোপণ করেছিলেন। সেই সব এলাকায় এখন ধান সবে পাকতে শুরু করেছে। কোথাও আবার ধান সবুজ। তাই এই সময়ে বৃষ্টি ধানের পুষ্টিতে কাজে দেবে বলে মনে করছেন পুরুলিয়ার কৃষি বিশেষজ্ঞেরা।

নিম্নচাপের জেরে বুধবার বিকেল থেকে শুরু হয়েছে নাগাড়ে বৃষ্টি। বিষ্ণুপুরের জনতা, লায়ের, বনকাটি প্রভৃতি দ্বারকেশ্বরের তীরবর্তী গ্রামের চাষিরা জানাচ্ছেন, বেশির ভাগ ধানগাছ জমিতে নুয়ে পড়েছে। বাঁকুড়া জেলা কৃষি দফতর জানাচ্ছে, বৃহস্পতিবার সকাল পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টায় জেলায় গড় বৃষ্টিপাত ৩৬.৮ মিলিমিটার। তাদের হিসেবে, সব থেকে বেশি বৃষ্টিপাত হয়েছে ছাতনা ও শুশুনিয়া এলাকায় (৬০ মিলিমিটার) এবং সর্বনিম্ন ইন্দাসে (১৬.৮ মিলিমিটার)। বিষ্ণুপুর মহকুমায় গড় বৃষ্টিপাত ৩৯.২ মিলিমিটার। আজ, শুক্রবারও বৃষ্টি হলে মাঠের ধান বাঁচানো যাবে কি না, সংশয়ে চাষিরা।

বাঁকুড়া জেলা কৃষি অধিকর্তা সুশান্ত মহাপাত্র মনে করছেন, এখনই বড় ক্ষতির আশঙ্কা না থাকলেও, ফলন কমার ভয় যথেষ্ট। তবে ঝোড়ো হাওয়া চললে ধানগাছ কাদা-জমিতে শুয়ে পড়লে ক্ষতির সম্ভাবনা প্রবল।’’

পাত্রসায়রের বেলুটের চাষি বিকাশ কুণ্ডু জানান, ‘‘বৃষ্টির অভাবে জল কিনতে অনেক টাকা খরচ হয়েছে। এখন ধানে সবে বৃদ্ধি শুরু হয়েছে। এই সময়ে বৃষ্টি মানে সর্বনাশ।’’ বিষ্ণুপুরের বিদ্যাসাগর গ্রামের গৌর সীট, কার্তিক কুণ্ডু ধান কেটে জমিতে বোঝা করে রেখেছিলেন। তাঁদের দাবি, বেশির ভাগই জলের তলায়।

দ্বারকেশ্বর নদের তীরবর্তী বিষ্ণুপুরের লয়ের, জনতা, বনকাটি, দমদমা, সুভাষপল্লি এবং ষাঁড়েশ্বর এলাকায় আনাজ চাষ হয়। স্বপন বাউল, শঙ্কর হাইত, রঞ্জিত কুণ্ডু, বাসুদেব খাঁ, সনাতন হাইত, দিলীপ দানার মতো জনতার চাষিরা জানাচ্ছেন, আনাজ চাষের উপযুক্ত পরিবেশও তৈরি হয়েছিল। কিন্তু সব নষ্ট করে দিল অসময়ের বৃষ্টি। স্বপনবাবুর বক্তব্য, ‘‘নিম্নচাপের জেরে জমিতে জল জমেছে। ফুলকপির ফুল এক দিনেই কালো। এ বার বাজারে কপি বিক্রি করা মুশকিল। এক নাগাড়ে বৃষ্টিতে বাঁধাকপিও নষ্ট হয়ে গিয়েছে।’’

বিষ্ণুপুর মহকুমা সহ কৃষি অধিকর্তা (প্রশাসন) হেমন্তকুমার নায়েক বলেন, “আনাজ খেত থেকে জল বার করার উপায় না থাকলে চাষে ক্ষতি হতে পারে। চাষের ক্ষতির পরিমাণ এখনই বলা যাচ্ছে না। তবে আনাজের ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে।”

কপির পাশাপাশি, মুলো, বরবটি, বেগুন ও পালং শাকেরও ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে, দাবি চাষিদের। এ বার তিন বিঘা জমিতে আদা চাষ করেছিলেন জনতা এলাকার চাষি ভাস্কর দে। তাঁর আক্ষেপ, ‘‘মাঠ থেকে জল বার করার উপায় নেই। জমিতে জল দাঁড়িয়ে থাকলে গাছের গোড়া পচে যাবে।”

পুরুলিয়া জেলা কৃষি দফতর জানাচ্ছে, বৃহস্পতিবার সকাল পর্যন্ত বৃষ্টি হয়েছে গড়ে ৪৮ মিমি। এই জেলায় এ বার বৃষ্টির অভাবে সেপ্টেম্বর মাসের গোড়াতেও অনেক জমিতেই চারা রোপন করা হয়। জেলার উপ কৃষি অধিকর্তা আশিস বন্দ্যোপাধ্যায়র বলছেন, “নিচু জমিতে কিছু ধান পাকতে শুরু করলেও উঁচু জমির ধান পাকেনি। এই অবস্থায় বৃষ্টি উঁচু জমির ধানের ক্ষেত্রে সহায়ক হয়েছে।”

চাষিদেরও কেউ কেউ এই বৃষ্টি নিয়ে আশাবাদী। রঘুনাথপুর ১ ব্লকের শিমূলকুঁদির চাষি রঞ্জিত বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, এলাকায় জমিতে জল দাঁড়ায় না। টানা বৃষ্টির জন্য জল জমে ধানের ক্ষতি করতে পারবে না। বরং বৃষ্টিতে পুকুর ও কুয়োর জল বাড়ায় পরে সেচের কাজে লাগবে।’’ তবে আরও ক’দিন এমন বৃষ্টি চললে ক্ষতির আশঙ্কা করছেন মানবাজার ২ ব্লকের চাষি গোপাল মাহাতো ও শ্রীদাম মাহাতোরা।

Depression Rain Paddy Cultivation
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy