ফের বেআব্রু হয়ে পড়ল নানুরের তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব। যুব নেতা কাজল শেখের অনুগামী হিসাবে পরিচিত এক পঞ্চায়েতের উপপ্রধান, গ্রাম কমিটির সভাপতি-সহ পাঁচ জনকে মারধরের অভিযোগ উঠল গদাধর হাজরার অনুগামীদের বিরুদ্ধে। অভিযুক্তদের মধ্য সূচপুর গণহত্যায় বিচারাধীন এক জনেরও নাম রয়েছে।
রবিবার বিকাল সাড়ে ৪টে নাগাদ ঘটনাটি ঘটেছে স্থানীয় নতুনগ্রাম বাসস্ট্যান্ড লাগোয়া তৃণমূলের দলীয় কার্যালয়ে। সেখানেই নওয়ানগর-কড্ডা পঞ্চায়েতের উপপ্রধান হাসিবুল হোসেন এবং তৃণমূলের নতুনগ্রাম গ্রাম কমিটির সভাপতি ফরোজ খানকে মারধর করা হয় বলে অভিযোগ। রবিবার রাতেই ২০ জনের বিরুদ্ধে নানুর থানায় অভিযোগ দায়ের করেন উপপ্রধান। অভিযুক্তদের মধ্যে রয়েছেন সূচপূর গণহত্যা মামলায় অভিযুক্ত রেজাউল করিমের নামও। ২০১০ সালে সূচপুর গণহত্যা মামলায় চার জনকে ফেরার রেখে ৪৪ জন সিপিএম নেতা-কর্মীকে যাবজ্জীবন সাজা দেয় নিম্ন আদালত। সেই ফেরারদেরই অন্যতম ছিলেন রেজাউল। পরে অবশ্য ২০১১ সালে তাকে গ্রেফতার করে পুলিশ। বর্তমানে রেজাউল জামিনে রয়েছেন। তিনি অবশ্য রবিবারের ঘটনায় যুক্ত থাকার অভিযোগ অস্বীকার করে দাবি করেছেন, মিথ্যা অভিযোগে তাঁকে ফাঁসানোর চেষ্টা হচ্ছে।
ঘটনা হল, নানুরে গত পঞ্চায়েত নির্বাচনের পর থেকেই রাজনৈতিক কর্তৃত্ব কায়েমকে কেন্দ্র করে কাজল-গদাধরের গোষ্ঠী সংঘাত লেগেই রয়েছে। তারই জেরে বিধানসভা নির্বাচনে গদাধরকে হারাতে গোপনে সিপিএমের সঙ্গে হাত মেলানোর অভিযোগ ওঠে কাজলের বিরুদ্ধে। শেষমেশ ২৬ হাজারেরও বেশি ভোটে হারতে হয় গদাধরকে। তার পরেই কাজলকে কোণঠাসা করতে গদাধরকে জেলা যুব সভাপতি করে দল। তাঁর অনুগামীদের নানা ভাবে ডানার ছাঁটার প্রক্রিয়া শুরু হয় বলে দলীয় সূত্রেরই খবর।
সোমবার উপপ্রধান দাবি করেন, বাসাপাড়ায় ২৭ জুলাইয়ের শহিদ দিবসের প্রস্তুতি উপলক্ষে তাঁরা কার্যালয়ে বসে বৈঠক করছিলেন। ‘‘সেই সময় রেজাউলের নেতৃত্বে ৪০-৫০ জন দুষ্কৃতী অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে আমাদের উপর চড়াও হয়। বেধড়ক মারধর করে। লাঠির ঘায়ে ফরোজ খানের হাত ভেঙে দেয়,’’—দাবি হাসিবুলের। ফরোজকে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে।
উপপ্রধানের অভিযোগ, ‘‘আমরা কাজলের অনুগামী বলেই গদাধর হাজরা সিপিএমের লোকদের দলে ঢুকিয়ে আমাদের উপর হামলা চালিয়েছে।’’ এ প্রসঙ্গে কাজলের কোনও প্রতিক্রিয়া মেলেনি। তবে, তাঁর এক ঘনিষ্ঠ অনুগামীর প্রতিক্রিয়া, ‘‘ভাবতে অবাক লাগে সূচপুর গণহত্যার অভিযুক্তেরাও এখন দলে জায়গা পাচ্ছে। আর তাদের হাতেই মার খেতে হচ্ছে দলের পুরনো লোকেদের।’’ অন্য দিকে, সিপিএমের স্থানীয় দায়িত্বপ্রাপ্ত জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য আনন্দ ভট্টাচার্য দাবি করেন, ওই ঘটনার সঙ্গে দলের কোনও সম্পর্ক নেই। রেজাউল বহু দিন আগেই দল ছেড়ে দিয়েছে। রবিবারের ঘটনাটি শাসকদলেরই গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের ফল বলে তাঁর দাবি।
এ ব্যাপারে বারবার চেষ্টা করা হলেও গদাধর ফোন ধরেননি। তবে তৃণমূলের নানুর ব্লক সভাপতি সুব্রত ভট্টাচার্য পাল্টা দাবি করেছেন, ‘‘ওই ঘটনার সঙ্গে গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের কোনও সম্পর্ক নেই। রেজাউল বা সিপিএমের কোনও দুষ্কৃতীকে দলে জায়গা দেওয়ার অভিযোগও ভিত্তিহীন। আসলে ওই উপপ্রধান দীর্ঘ দিন এলাকার মজুরদের জবকার্ড ও পাসবই আটকে রেখে টাকা আত্মসাত করেছিলেন। সেই ক্ষোভেই এলাকার মজুরেরা তাঁকে মারধর করেছে বলে শুনেছি।’’
পুলিশ জানায়, রবিবার রাতে ওই ঘটনায় ২০ জনের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দায়ের হয়েছে। অভিযুক্তদের মধ্যে তিন জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বাকিদেরও ধরার চেষ্টা চলছে। সোমবার ধৃতদের ১৪ দিনের জেল হাজতে রাখার নির্দেশ দিয়েছে বোলপুর আদালত।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy