Advertisement
E-Paper

মশারি সেলাই করেও ৬৭৭

মুরারই ২ ব্লকের কাশিমনগরে টিনের ঘরে বসবাস। বাবা থাকেন বিহারের কিসানগঞ্জে। মা, ভাই-বোনকে নিয়ে ইয়াসমিন ছোট্ট দুটি ঘরে কোনও রকমে থাকে। তার মধ্যেই পড়াশোনা।

তন্ময় দত্ত

শেষ আপডেট: ১৭ মে ২০১৯ ০১:০৩
বিজয়িনী: সেলাইয়ে ব্যস্ত ইয়াসমিন। বৃহস্পতিবার। নিজস্ব চিত্র

বিজয়িনী: সেলাইয়ে ব্যস্ত ইয়াসমিন। বৃহস্পতিবার। নিজস্ব চিত্র

বাবা ফেরি করে মশারি বিক্রি করেন। মাসে এক বার বাড়ি ফেরেন। তাঁরই মেয়ে ইয়াসমিন সুলতানা হাই মাদ্রাসার পরীক্ষায় খুব ভাল ফল করল। ইয়াসমিন পাইকর হাই মাদ্রাসা থেকে তার প্রাপ্ত নম্বর ৬৭৭।

মুরারই ২ ব্লকের কাশিমনগরে টিনের ঘরে বসবাস। বাবা থাকেন বিহারের কিসানগঞ্জে। মা, ভাই-বোনকে নিয়ে ইয়াসমিন ছোট্ট দুটি ঘরে কোনও রকমে থাকে। তার মধ্যেই পড়াশোনা। বাবাকে সহযোগিতা করতে নিজেও মশারি সেলাই করে।

এমন পরিবারের মেয়ের ভাল ফলের খবর ছড়াতেই পরিবার, পড়শিরা আনন্দের জোয়ারে ভাসছেন। দুপুরে থেকে প্রতিবেশীদের বাড়িতে ভিড়। ইয়াসমিন এই সাফল্যের পুরো কৃতিত্ব দিয়েছে মাদ্রাসার শিক্ষকদের। কোনও বাঁধা-ধরা নিয়মে পড়াশোনা করেনি। রোদ-ঝড়-বৃষ্টি সব কিছু উপেক্ষা করে স্কুলে যেত। তার কথায়, ‘‘আমার এই সাফল্যের স্কুলের শিক্ষকদের বিশেষ ভূমিকা ছিল।’’

ইয়াসমিন জানায়, পরীক্ষার কয়েক মাস আগে থেকে রাত জেগে পড়াশোনা করেছে। সকালে ঘুম থেকে উঠে মশারি সেলাই করতে হত। দশটায় স্কুলে। ফিরে এসে সন্ধ্যা পর্যন্ত আবারও মশারি সেলাই। তার পরে পড়তে বসা। টিফিনে সময় নষ্ট না করে পরের দিনের পড়া করে নিত। তা হলে বাড়িতে ফিরে কম পড়লেও চলবে। অনেক সময় বই, খাতা কিনতে পারেনি। ইয়াসমিনের কথায়, ‘‘মামা ও আনোয়ার মাস্টার সাহায্য করেছেন। পড়াশোনা করে চাকরি করে বাবা-মাকে আনন্দে রাখতে চাই।’’

মেয়ের সাফল্যেও বাবার কপালে চিন্তার ভাঁজ। আবু বাক্কার শেখ বলেন, ‘‘সম্পত্তি বলতে বাড়ি ছাড়া কিছু নেই। মশারি বিক্রির আয়ে সংসার চলে না। দিন গুজরান করতে মেয়েকেও মশারি সেলাই করতে হয়। এর মধ্যেই পড়াশোনা করে এত ভাল ফল করবে ভাবতে পারছি না।’’

একই ব্লকের সেনারুল শেখ দাতুড়া হাই মাদ্রাসার ছাত্র। বীরভূম জেলায় সে সম্ভাব্য চতুর্থ। প্রাপ্ত নম্বর ৬২৭। সেনারুল বলছে, ‘‘পড়ার নির্দিষ্ট সময় ছিল না। বাবা বিড়ির ব্যবসা করে হাজার চারেক টাকা রোজগার করে। খুব কষ্ট করে পড়াশোনা করেছি। স্কুলের শিক্ষকরা খুব সহযোগিতা করেছেন। ওঁদের জন্যই এই ফল করতে পেরেছি।’’ বিজ্ঞান নিয়ে পড়তে চায় সেনারুল। ডাক্তার হওয়ার স্বপ্ন।

ছাত্রীদের মধ্যে এগিয়ে নলহাটি থানার আমাইপুর মিলনী হাইমাদ্রাসার বেনজির রহমান। প্রাপ্ত নম্বর ৬৮২। বেনজিরের বাবা স্থানীয় কৃষি উন্নয়ন সমবায় সমিতির সহকারী ম্যানেজার গোলাম মহিউদ্দিন। তিনি জানালেন, মেয়ে ছোট থেকেই পড়াশোনায় ভাল। আরও ভাল ফল আশা করেছিল। ডাক্তার হতে চায় বেনজির।

Student Education Madrasa Girl Mosquito net
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy