Advertisement
E-Paper

গাছের যত্ন করারও বার্তা বৃদ্ধার

হুজুগে গাছ লাগালেই হবে না, যত্ন করে বাড়িয়ে তুলতেও সমান নজর দেওয়া দরকার। এই বার্তা ছড়িয়ে দিতে বাঁকুড়ার জয়পুরের এক বৃদ্ধা পুজো থেকে পঙ্‌ক্তিভোজের আয়োজন করে ফেললেন বৃহস্পতিবার। জ্ঞাতি থেকে পড়শি— সকলেই তাতে সামিল হলেন।

শুভ্র মিত্র

শেষ আপডেট: ২৯ জুন ২০১৮ ০২:২২
গাছ প্রতিষ্ঠা করছেন গীতাদেবী। নিজস্ব চিত্র

গাছ প্রতিষ্ঠা করছেন গীতাদেবী। নিজস্ব চিত্র

হুজুগে গাছ লাগালেই হবে না, যত্ন করে বাড়িয়ে তুলতেও সমান নজর দেওয়া দরকার। এই বার্তা ছড়িয়ে দিতে বাঁকুড়ার জয়পুরের এক বৃদ্ধা পুজো থেকে পঙ্‌ক্তিভোজের আয়োজন করে ফেললেন বৃহস্পতিবার। জ্ঞাতি থেকে পড়শি— সকলেই তাতে সামিল হলেন।

জয়পুরের সলদা গ্রাম থেকে ১২ বছর বয়সে গীতাদেবী আসেন সুখজোড়া গ্রামের মণ্ডল পরিবারে। তারপর সংসার সামলাতে সামলাতে ৬০টা বছর পেরিয়ে গিয়েছে। তাঁর স্বামী হরভূষণ মণ্ডল স্থানীয় বৃন্দাবনপুর প্রাথমিক স্কুলে শিক্ষকতা করতেন। গৃহস্থালী কাজকর্মের ফাঁকেই শ্বশুরবাড়িতে গাছ লাগানোর নেশা চেপে বসে গীতাদেবীর। তাঁর এক ছেলে খড়গপুর আইআইটি থেকে পাশ করে এখন অধ্যাপনা করেন। তিন মেয়েকেও কলেজের পাঠ দিয়েছেন। কিন্তু, পারিবারিক দায়দায়িত্ব সামলানোর মধ্যেই সন্তানস্নেহে একের পরে এক গাছ লাগিয়েছেন।

তিনি জানান, এখনও সময় পেলে শরীর সায় দিলে বর্ষা এলেই গাছ লাগাতে ছোটেন। বকা খান ছেলেমেয়ের কাছে। তবুও দমে যান না। ডেকে নেন পাড়ার বিশু, ভোম্বল, টুকাইদের। তাদের মধ্যেও গাছ লাগানোর নেশার বীজ রোপনের চেষ্টা করেন তিনি।

তাঁর আক্ষেপ, ‘‘ইদানীং বৃক্ষরোপন নিয়ে চারপাশে খুব হুজুগ চলছে। কিন্তু, গাছের চারা লাগালেই তো হবে না, রক্ষণাবেক্ষণও দরকার। তা আর ক’টা জায়গায় হচ্ছে?’’ তাঁর মতে, শুধু হুজুগে গাছ লাগালে হবে না। সন্তান স্নেহে গাছের যত্ন নিতে হবে। তাহলেই প্রকৃতি খুশি হবে। ঠিক সময়ে বৃষ্টি হবে। চাষির গোলা ভরবে।’’ গাছ চুরি নিয়েও তাঁর মন ভারাক্রান্ত। তিনি বলেন, ‘‘দুষ্টু লোকেরা নির্বিচারে ছোট-বড় গাছ কেটে সাফ করে দিচ্ছে। প্রকৃতি যে এতে ক্ষিপ্ত, তা বৃষ্টির খামখেয়ালিপনাতেই বোঝা যায়।’’

বছরখানেক আগে একটা দুর্বল অশ্বত্থ গাছ নিয়ে তিনি খুব দুর্ভাবনায় ছিলেন। সেই গাছ এ দিন তিনি পুজোপাঠের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠা করেন। তাঁর কথায়, ‘‘আমাদের সমাজে রীতি আছে প্রতিষ্ঠা করা গাছ কাটা যায় না। সেই সুযোগটাকে কাজে লাগালাম। আমি থাকব না, গাছটা থাকবে। সন্তান, নাতিনাতনি ও পড়শিদের বললাম, বর্ষা নেমেছে, তোমরা গাছ লাগাও।’’

পড়শি রঞ্জিত মণ্ডল, সুকুমার দে, অশোক মণ্ডলরা বলেন, ‘‘গীতাদেবী গাছঅন্ত প্রাণ। ছোটদেরও গাছ লাগাতে উৎসাহ দেন।’’ আত্মীয় কৃষ্ণেন্দু মাহাতো জানান, তাঁর গাছের প্রতি ভালবাসাকে সম্মান জানাতেই অনেক আত্মীয় দূরদূরান্ত থেকে এসেছেন।

জয়পুরের রেঞ্জ অফিসার শম্ভুনাথ চক্রবর্তী বলেন, ‘‘গীতাদেবীর এই উদ্যোগ শিক্ষণীয়। সবুজ বাঁচাতে এ ভাবে সবই এগিয়ে আসুন।’’ তিনি জানান, বর্ষায় তাঁরা ‌১৩৫ হেক্টর জায়গায় পুরোদমে গাছ লাগানোর তোড়জোড় শুরু করেছেন।

Save Trees Elderly Lady
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy