সোনাঝুরির হাটে দোল খেলায় নিষেধাজ্ঞা নেই, বৃহস্পতিবারই জানিয়েছিলেন বনমন্ত্রী বিরবাহা হাঁসদা। বীরভূম জেলা পুলিশও সে কথা জানায়। শুক্রবার, দোলের দিন তাই ফের চেনা ছবি সোনাঝুরিতে। পরিবেশপ্রেমীদের আশঙ্কাকে সত্যি করে জঙ্গলে লঙ্ঘিত হল পরিবেশবিধি।
জঙ্গলের গাছে আবির লাগানো, সোনাঝুরির হাটের রাস্তার ধারে থাকা পলাশ গাছের প্রচুর ডাল ভাঙা হল এ দিন। জঙ্গলের চতুর্দিকে পর্যটকদের আনা প্লাস্টিকের ক্যারিব্যাগ, জলের খালি বোতল, খাবারের প্যাকেট পড়ে থাকল দিনের শেষে। এ ভাবে উৎসবের নামে প্রকৃতির ক্ষতি করা চললে, আগামী দিনে সোনাঝুরির জঙ্গল নষ্ট হয়ে যাবে বলেও আশঙ্কা স্থানীয় অনেকেরই।
গোটা পর্বে বন দফতরের কোনও ভূমিকা চোখে পড়েনি এ দিন। যেমন হাটে চোখে পড়েনি বন দফতরের তরফে প্রকৃতি বাঁচানো সম্পর্কিত একটিও পোস্টার বা ব্যানার। অথচ, দূষণের কারণেই এ বছর শীতে সোনাঝুরির হাট লাগোয়া বল্লভপুর অভয়ারণ্যের ঝিলগুলিতে পরিযায়ী পাখি অনেক কম এসেছে। জঙ্গলের পরিবেশ নিয়ে উদ্বেগের কারণেই বন দফতর এ বার জঙ্গলে বসন্ত উৎসব উদ্যাপন, আবির খেলা, ভিডিয়োগ্রাফি, যান চলাচল নিষিদ্ধ করেছিল। সে সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানান পরিবেশপ্রেমী মানুষজন।
দিন কয়েক আগে সোনাঝুরির জঙ্গলে দোল উৎসবে নিষেধাজ্ঞা জারি করে ব্যানার ও পোস্টার দিয়েছিল বন দফতর। পরিবেশে ক্ষতির আশঙ্কা মাথায় রেখেই এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। সে সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রশ্ন তোলে বিজেপি। তারা অভিযোগ তোলে, রাজ্য সরকার সোনাঝুরির হাটে দোল উৎসব পালনে বাধা দিচ্ছে। আরও নানা মহল থেকে সমাজমাধ্যমে প্রচার চলতে থাকে, দোল খেলার উপরে এমন নানা নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে বহু মানুষের আবেগকে আঘাত করা হয়েছে। এর পরেই বনমন্ত্রী বিরবাহা হাঁসদা বৃহস্পতিবার সংবাদমাধ্যমকে জানান, শান্তিনিকেতনে রং খেলায় কোনও নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়নি। যার যেখানে রং খেলার ইচ্ছা, খেলতে পারেন। তবে প্রকৃতি বাঁচানোর অনুরোধও রাখেন তিনি। সে অনুরোধ কতটা রাখা হয়েছে, তা নিয়ে প্রশ্ন আছে। বিশেষ করে এ দিন পর্যটকে ঠাসা সোনাঝুরির যে ছবি সামনে এসেছে, তাতে পরিবেশ বিধি প্রতিপদে লঙ্ঘিত হয়েছে বলে মনে করছেন পরিবেশকর্মীরা।
ঘটনাচক্রে, বনমন্ত্রী ওই মন্তব্য করার পরেই বৃহস্পতিবার বিকেলে সোনাঝুরি হাটে লাগানো বন দফতরের সমস্ত পোস্টার ‘উধাও’ হয়ে গিয়েছিল। এ প্রসঙ্গে পরিবেশকর্মী সুভাষ দত্তের বক্তব্য, “পরিবেশের জলাঞ্জলি দিয়ে এই ধরনের রং খেলার অনুমতি দেওয়াটা ঠিক হয়নি। এটা শুধু বেআইনি নয়, অনৈতিকও। এই ভাবে প্রকৃতির উপরে অত্যাচার চলতে থাকলে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে আমরা অপরাধী হয়ে থাকব।”
পর্যটকেরা অবশ্য খুশি সোনাঝুরিতে আগের মতোই রং খেলতে পারায়। দোল খেলার পাশাপাশি নাচ, গান, আড্ডায় উৎসবে শামিল হন সকলে। কলকাতার টালিগঞ্জ থেকে আসা দেবদত্তা দে, পূর্ব বর্ধমানের কালনার তিতলি ঘোষেরা বলেন, “ভাবতেই পারিনি, শেষ মুহূর্তে সোনাঝুরি হাট থেকে দোল খেলার নিষেধাজ্ঞা উঠবে। সে খবর শুনেই শান্তিনিকেতন যাব বলে ঠিক করি। এখানে এসে দোল খেলে খুব ভাল লাগছে।”
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)