E-Paper

চাকরি পায়নি একুশের পথে মৃত কিশোরের পরিবার

আমার বড় ছেলেকে একটি কাজ দেওয়ার কথা বলেছিলেন। ওঁদের কথা মতো বিভিন্ন অফিসে নথিপত্র জমা দিয়েছি। ছ’বছর ধরে স্বামী দোরে দোরে ঘুরেছেন।

সমীরণ পাণ্ডে

শেষ আপডেট: ২১ জুলাই ২০২৫ ০৬:০২
আহিরের মৃত্যু ক্ষতি পূরনের দাবিতে শহরে পোস্টের।

আহিরের মৃত্যু ক্ষতি পূরনের দাবিতে শহরে পোস্টের। ছবি: সুজিত মাহাতো।

ফের এল একুশে জুলাই। এই দিনটা এলেই মন খারাপ হয়ে যায় পুরুলিয়া শহরের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের রানিবাঁধ পাড়ার রেশমা বিবির। ২০১৯ সালে একুশে জুলাইয়ের শহিদ সমাবেশে কলকাতা গিয়ে সেখান থেকে বাড়ি ফেরার পথে বাঁকুড়ার ওন্দায় ট্রেন থেকে পড়ে মারা যায় তার ছেলে মহম্মদ আহি (১৬)। সেই শোকের সঙ্গে এখন জড়িয়েছে হতাশাও।

মৃত কিশোরের পরিবার জানায়, দুর্ঘটনার পরে তাদের বাড়িতে এসেছিলেন তৎকালীন রাজ্যের মন্ত্রী শান্তিরাম মাহাতো থেকে বর্ষীয়ান নেতা সুজয় বন্দ্যোপাধ্যায়, সুশান্ত মাহাতো প্রমুখ। পরিবারটিকে আর্থিক সাহায্য করার পাশাপাশি প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, মৃতের দাদার কর্মসংস্থান করে দেওয়া হবে।

তারপরে ছ’বছর অতিক্রান্ত। এখনও মৃত কিশোরের দাদার কর্মসংস্থান দল করেনি। পুরুলিয়া শহরে পাতিলেবু বিক্রি করে, মুটে মজুরের কাজ করে আহি পরিবারকে আর্থিক ভাবে সাহায্য করত। এখন তার বৃদ্ধ বাবা মহম্মদ জাকির টোটো চালিয়ে সংসার নির্বাহ করেন।

মৃত কিশোরের মা রেশমা বিবি বলেন, ‘‘তখন শান্তিরাম মাহাতো-সহ অনেকেই বাড়িতে এসেছিলেন। আমার বড় ছেলেকে একটি কাজ দেওয়ার কথা বলেছিলেন। ওঁদের কথা মতো বিভিন্ন অফিসে নথিপত্র জমা দিয়েছি। ছ’বছর ধরে স্বামী দোরে দোরে ঘুরেছেন। শুধুই বলেছে, কাজ হবে। কিন্তু এতদিনেও কাজ দেয়নি কেউ। বড় ছেলে পথ দুর্ঘটনায় আহত হয়েছিল। সে এখন গ্যারাজে কাজ শিখছে। বৃদ্ধ স্বামীর আয়ে আমাদের দিন কাটে। একুশে জুলাই এলেই মন খারাপ হয়ে যায়। কিন্তু কাকে বলব সে কথা?’’

এই ঘটনার বিচার চেয়ে এবং পরিবারটিকে ক্ষতিপূরণ হিসেবে চাকরি দেওয়ার দাবিতে রবিবার পুরুলিয়া শহরের কসাইডাঙা, তালডাঙা ও জে কে কলেজ রোডে পোস্টার দিয়েছে কংগ্রেস। জেলা কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক সোহেল দাদ খান বলেন, ‘‘তখন অসহায় পরিবারটির পাশে দাঁড়িয়ে কর্মসংস্থানের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন শান্তিরাম মাহাতো। অথচ এখনও পর্যন্ত কেন ওই পরিবারটিকে চাকরি দেওয়া হল না? সংখ্যালঘু বলেই কি এই বৈষম্য করা হচ্ছে? সংখ্যালঘুদের ভোট তো ঠিকই নেওয়া হচ্ছে। ওই পরিবারকে চাকরি দেওয়া না হলে আমরা আন্দোলন চালিয়ে যাব।’’

যদিও তৃণমূল নেতা শান্তিরাম মাহাতোর দাবি, ‘‘সে সময় সাহায্যের আশ্বাস দেওয়া হয়েছিল সত্য। নথিপত্রও পাঠানো হয়েছিল। কোনও কারণে কাজ হয়ে ওঠেনি। সরকারি কাজে অনেক বিধি নিষেধ থাকে। রাজ্য নেতৃত্বকে বিষয়টি জানানো হবে। একুশে জুলাই অনেক সময় দুর্ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু সব ক্ষেত্রে এখনও কর্মসংস্থান হয়ে ওঠেনি।’’

তবে বিষয়টি নিয়ে কটাক্ষ করতে ছাড়েনি বিজেপি। বিজেপির প্রাক্তন জেলা সভাপতি বিবেক রঙ্গা বলেন, ‘‘তৃণমূলের নেতারা চাকরি বিক্রি করতে অভ্যস্ত। দলের লোককে চাকরি দিলে তো ক্ষতির সম্মুখীন হবেন! এমনও হতে পারে, ওই পরিবারের চাকরি হয়তো বিক্রি হয়ে গিয়েছে।’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Dharmatala Mamata Banerjee

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy