E-Paper

শাড়ির আঁচল, লণ্ঠনে বেঁচে দশাবতার তাস

বিষ্ণুপুরের একেবারে নিজস্ব শিল্পকলা হল দশাবতার তাস। বিষ্ণুর দশ অবতার— মৎস্য, কূর্ম, বরাহ, নৃসিংহ, বামন, রাম, বলরাম, পরশুরাম, বুদ্ধ ও কল্কি নামাঙ্কিত কার্ড।

অভিজিৎ অধিকারী

শেষ আপডেট: ১০ জুলাই ২০২৫ ০৮:৪৭
নতুন রূপে: দশাবতার তাসের চাহিদা কমেছে। তাই বিষ্ণুপুরের বিখ্যাত লন্ঠন ও কাপড়ে আঁকা হচ্ছে দশাবতার।

নতুন রূপে: দশাবতার তাসের চাহিদা কমেছে। তাই বিষ্ণুপুরের বিখ্যাত লন্ঠন ও কাপড়ে আঁকা হচ্ছে দশাবতার। নিজস্ব চিত্র।

ইতিহাস মানেই সময়ের বিবর্তন। মল্লরাজাদের বিনোদনের মাধ্যম দশাবতার তাস এখন গৃহস্থের বাড়ির দেওয়াল ছুঁয়ে ছড়িয়ে পড়ছে শাড়ির আঁচলেও।

আনুমানিক ৭০০ খ্রিস্টাব্দ থেকে মল্লরাজাদের পৃষ্ঠপোষকতায় বিষ্ণুপুরে শিল্প ও সংস্কৃতির এক গৌরবময় অধ্যায় শুরু হয়। মহারাজ বীরহাম্বীরের রাজত্বকালে ১৫৬৫-১৬২০ এই সমৃদ্ধি চরম শিখরে ওঠে। বৈষ্ণব ধর্মে দীক্ষিত হওয়ার পর বীরহাম্বীর শ্রীনিবাস আচার্যের প্রভাবে বিষ্ণুপুর মল্লভূমে একটি স্বতন্ত্র্য শিল্প শৈলী নির্মাণ করেন।

বিষ্ণুপুরের একেবারে নিজস্ব শিল্পকলা হল দশাবতার তাস। বিষ্ণুর দশ অবতার— মৎস্য, কূর্ম, বরাহ, নৃসিংহ, বামন, রাম, বলরাম, পরশুরাম, বুদ্ধ ও কল্কি নামাঙ্কিত কার্ড।

এটি মল্লরাজাদের ঘরোয়া খেলা বলে পরিচিত ছিল। ১২টি করে ১০ জন অবতারের মোট ১২০টি কার্ড হয়। পাঁচ জন তাস খেলতে পারেন। বিষ্ণুপুরের ফৌজদার পরিবার পুরুষানুক্রমে দশাবতার তাস তৈরি করে আসছে।

এই তাস তৈরির পদ্ধতিও একটু অন্যরকম। তেঁতুল বীজের আঠা, খড়ি, সিঁদুর, ভেষেজ রং, লাক্ষা, ভাতের মাড় ইত্যাদির মিশ্রণ কয়েকবার প্রলেপ দেওয়া হয় সুতির কাপড়ে। শুকিয়ে যাওয়ার পর নির্দিষ্ট আকারে সেগুলি কাটা হয়।

ঊনিশ শতকে মুদ্রিত তাসের ব্যবহারের সঙ্গে সঙ্গে মূল্যবান ও জটিল দশাবতার তাসের খেলা অবলুপ্ত হতে শুরু করে। বিষ্ণুপুরের ফৌজদার পরিবারের কেউ কেউ এখনও ধরে রেখেছেন এই শিল্পকে। খেলার উপকরণ হিসেবে দশাবতার তাসের চাহিদা কমেছে। কারিগরেরা বিকল্প শিল্পের দিকে ঝোঁক দেন। এখন দশাবতার তাস শুধুই বাড়ি সাজানোর কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে।

সরকারি উদ্যোগেও দশাবতার তাস শিল্পের প্রসারে নানা কাজের ভাবনা নেওয়া হচ্ছে। সম্প্রতি শিল্পীদের নিয়ে কর্মশালা হল বিষ্ণুপুর জেলা সংগ্রহশালায়। প্রশিক্ষক ছিলেন শীতল ফৌজদার।

অন্য দিকে, দশাবতার তাসকে বাঁচিয়ে রাখতে শাড়ির আঁচলে নকশা করতে শুরু করেছেন প্রশান্ত ফৌজদার নামে এক দশাবতার তাস শিল্পী। তিনি বলেন, “দশাবতার তাস খেলা তো উঠেই গেছে আগে। এই প্রাচীন লোকশিল্পকে বাঁচিয়ে রাখতে লণ্ঠনের কাচে এবং শাড়ির আঁচলে দশাবতার তাস আঁকতে শুরু করেছি। এতে চাহিদাও বাড়ছে।’’

ইদানীং মহকুমা প্রশাসনের উদ্যোগে প্রশাসনিক ভবনের দেওয়ালেও প্রদর্শিত হচ্ছে এই দশাবতার তাসের ছবি। শাড়ির উপরে দশাবতার তাসের ছবি অটুট রাখা গেলে চাহিদা ভাল হবে বলে আশাবাদী মহকুমাশাসক (বিষ্ণুপুর) প্রসেনজিৎ ঘোষ। (চলবে)

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Bishnupur

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy