E-Paper

ধান কাটতে যন্ত্র ভরসা, কর্মহীন খেতমজুরেরা

যন্ত্রের ব্যবহারে ধান কাটার খরচ, সময়, পরিশ্রম— সবই কমেছে। তাই দিন দিন জনপ্রিয় হচ্ছে ‘কম্বাইন হারভেস্টার’-এ ধান কাটার চল।

অমিতকুমার মাহাতো

শেষ আপডেট: ০১ ডিসেম্বর ২০২৫ ০৮:৩৯
ধান কাটার কাজ নেই। বাড়িতে শালপাতা‌র থালা সেলাই করছেন বান্দোয়ানের জারা শবরপাড়ার মহিলারা। তাঁরা জানান, ধান কাটার কাজে প্রতিদিন মজুরি

ধান কাটার কাজ নেই। বাড়িতে শালপাতা‌র থালা সেলাই করছেন বান্দোয়ানের জারা শবরপাড়ার মহিলারা। তাঁরা জানান, ধান কাটার কাজে প্রতিদিন মজুরি মিলত প্রায় ২০০ টাকা। দৈনিক শালপাতার থালা সেলাই করে ও বিক্রি করে রোজগার হয় ১০০-১৩০ টাকা। নিজস্ব চিত্র।

চিত্র ১: ধান কাটার মরসুমে এক ঝাঁক কৃষি শ্রমিককে এক সঙ্গে জোগাড় করাটাই রীতিমতো ঝক্কির! প্রথমে খেতমজুরের কাস্তে দিয়ে ধান কেটে শুকোনোর জন্য জমিতে ক’দিন ফেলে রাখেন। তারপরে ধানগাছ বেঁধে মাথায় করে, গরুর গাড়িতে কিংবা ট্রাক্টরে জমি মালিকের বাড়ি বা খামারে পৌঁছে দেন। সেখানে আবার কয়েক জন মিলে ধান ঝেড়ে বস্তায় ভরে রাখেন। চাষিদের দাবি, এক বিঘা জমির ধানগাছ কাটা থেকে ঝাড়াই করতে অন্তত দু’-তিন দিন লাগে। সব মিলিয়ে খরচ পড়ে প্রায় তিন হাজার টাকা।

চিত্র ২: ‘কম্বাইন হারভেস্টার’ এক বিঘা জমির ধানগাছ কেটে, ঝাড়াই করে, ধান বস্তাবন্দি করে দিচ্ছে আধ ঘণ্টায়। ওই সময়ের জন্য এলাকা ভিত্তিক যন্ত্রের ভাড়া পড়ছে দু’হাজার টাকার কাছাকাছি।

যন্ত্রের ব্যবহারে ধান কাটার খরচ, সময়, পরিশ্রম— সবই কমেছে। তাই দিন দিন জনপ্রিয় হচ্ছে ‘কম্বাইন হারভেস্টার’-এ ধান কাটার চল। ছোট জমিতে এই যন্ত্রের ঘোরাঘুরির সমস্যা থাকায় সেখানে অবশ্য এখনও খেতমজুরেরাই ভরসা।

বান্দোয়ানের লেদাশালের বাসিন্দা বাপ্পাদিত্য টুডু জানান, কার্তিকের শেষ থেকে পৌষের গোড়া পর্যন্ত ধান কাটা থেকে ঝাড়াইয়ের কাজ পেতেন। দু’মাসে এক এক জন খেতমজুর ১০-১২ হাজার টাকা উপার্জন করতেন। পড়শি বধূ পানমণি মুর্মু বলেন, ‘‘যা আয় হত, তাতে মকর পরবে ছেলেমেয়েদের জামা-প্যান্ট কিনে দিতাম। গত বছরও কিছু জমিতে ধান কাটার কাজ পেয়েছিলাম। কিন্তু যন্ত্রে ধান কাটার হুজুগে এ বার বেকার হয়ে পড়েছি।’’ স্থানীয় কাড়রু গ্রামের জয়দেব মান্ডি, মুখী মান্ডিরাও বললেন, ‘‘ক’বছর ধরে একশো দিনের কাজ বন্ধ। এখন যন্ত্র এসে ধান কাটার কাজও কেড়ে নিয়েছে। ছোটখাটো চাষিরা দু’-এক দিন কাজ দিচ্ছেন। কিন্তু তাতে কি সংসার চলে?’’

অন্য দিকে, সোনামুখীর তেলরুই গ্রামের নিতাই গড়াই, নিত্যানন্দ দেবনাথ থেকে বোরোর ধানচাষি অমরেশ মাহাতোরা ‘কম্বাইন হারভেস্টার’-এর পক্ষে সায় দিচ্ছেন। তাঁদের কথায়, ‘‘এত দিন ধান কাটাতে খেতমজুরদের ধরে আনতে হত। তার উপরে ধান কাটা থেকে গোলায় ভরা পর্যন্ত কয়েক দিন লড়াই চলত। এখন গোটা কাজটাই নিমেষে যন্ত্রে হয়ে যাচ্ছে। খরচও কত কম!’’

পুরুলিয়া জেলা পরিষদের কৃষি কর্মধ্যক্ষ অজিত বাউরির দাবি, ‘‘ধান কাটার যন্ত্রের ব্যবহার আগের তুলনায় এ বার কিছুটা বেড়েছে ঠিকই। তবে ব্যাপক ভাবে ব্যবহার হচ্ছে এমনটা নয়। এখানে চাষিরাই নিজেদের জমিতে ধান কাটেন। তাছাড়া পুরুলিয়ার জমি ছোট ছোট ভাগে বিভক্ত। তাই ধান কাটার যন্ত্রে ওই জমিতে ধান কাটার অসুবিধা রয়েছে। যাঁদের এক লপ্তে ১০-১২ বিঘা জমি রয়েছে, তাঁরাই মূলত ধান কাটার যন্ত্র ব্যবহার করছেন।’’

তথ্য সহায়তা: শুভ্র মিত্র

(চলবে)

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Harvest Season

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy