Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

ক্ষতিপূরণের দাবিতে আন্দোলন চাষিদের

বন্যার জলে তাঁদের রোয়া ধান নষ্ট হয়ে গিয়েছে। বন্যার জল সরে যাওয়ার পর নতুন করে আবার বীজতলা তৈরি করে পুনরায় ওই জমিতে ধান রোপণ করার সামর্থ্য তাঁদের নেই। মাড়গ্রাম থানার দুনিগ্রাম অঞ্চলের কবিরাজপুর, মোতাইন, মধুপুর, বাবলাডাঙ্গা, গোপালপুর গ্রামের চাষিরা এই পরিস্থিতিতে প্রশাসনিক সাহায্যর দাবিতে বুধবার রামপুরহাট ২ ব্লকের বিডিও-র কাছে স্মারক লিপি জমা দিলেন।

রামপুহাট দু’নম্বর পঞ্চায়েত সমিতির অফিসের সামনে বন্যা দুর্গতদের ভিড়। —নিজস্ব চিত্র।

রামপুহাট দু’নম্বর পঞ্চায়েত সমিতির অফিসের সামনে বন্যা দুর্গতদের ভিড়। —নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
মাড়গ্রাম শেষ আপডেট: ০৬ অগস্ট ২০১৫ ০১:০৫
Share: Save:

বন্যার জলে তাঁদের রোয়া ধান নষ্ট হয়ে গিয়েছে। বন্যার জল সরে যাওয়ার পর নতুন করে আবার বীজতলা তৈরি করে পুনরায় ওই জমিতে ধান রোপণ করার সামর্থ্য তাঁদের নেই। মাড়গ্রাম থানার দুনিগ্রাম অঞ্চলের কবিরাজপুর, মোতাইন, মধুপুর, বাবলাডাঙ্গা, গোপালপুর গ্রামের চাষিরা এই পরিস্থিতিতে প্রশাসনিক সাহায্যর দাবিতে বুধবার রামপুরহাট ২ ব্লকের বিডিও-র কাছে স্মারক লিপি জমা দিলেন। পাশাপাশি বিডিও-র কাছে ব্রাহ্মনী নদী বাঁধের সুরক্ষার দাবি জানালেন।

কবিরাজপুর গ্রামের চাষি মোস্তাকিম সেখ জানালেন, কবিরাজপুরের মাঠে সাত বিঘে জমির মধ্যে পাঁচ বিঘে জমিতে ধান রোপন করা শেষ হয়ে গিয়েছিল। বাকি ২ বিঘে জমির জন্য বীজতলাতে বীজ রাখা ছিল। রবিবার রাত নটার পরে কুতুবপুর এবং গোপালপুরের মাঝামাঝি জায়গায় ব্রাহ্মণী নদী বাঁধের প্রায় ৭০ ফুট ভেঙে ধান জমি ডুবে যায়। এখনও জমিতে জল দাঁড়িয়ে আছে। এর ফলে ওই জমিগুলিতে নতুন করে ধান চাষ করা সম্ভব নয়।

মধুপুর গ্রামের চাষি মহম্মদ আলাউদ্দিন বলেন, ‘‘চার বিঘে জমিতে ধান লাগানো হয়েছিল। বন্যার জল ঢুকে মাঠ প্লাবিত হয়েছে। সব শেষ। আর নতুন করে ওই জমিতে খরচ করে ধান চাষ সম্ভব নয়।’’

ক্ষতিগ্রস্ত চাষিদের একজন বলেন, তিন দিনের টানা বৃষ্টির জল এবং ব্যারেজ ছাড়া জলে ব্রাহ্মনী নদীতে কানায় কানায় জল বয়ছিল। রবিবার রাত ন’টা পর্যন্ত নদী বাঁধ থেকে তিন ফুট নীচে জল বয়ছিল। ওই অবস্থায় ন’টার পরে গ্রামে গ্রামে ছড়িয়ে পরে নদী বাঁধ ভেঙে গিয়েছে। এলাকার মানুষ সচকিত হয়ে উঠে। অনেকেই গ্রাম থেকে নদী বাঁধে চলে আসেন। কুতুবপুর গ্রামের নুর আলম, কবিরাজ পুর গ্রামের গোলাম নবিদের দাবি যে জায়গায় বাঁধ ভেঙেছিল সেই জায়গায় ব্রাহ্মনী নদী অনেকটা চওড়া। এবং বাঁধের অবস্থাও ভালো ছিল।’’

রামপুরহাট ২ ব্লকের বিডিও-র কাছে স্মারক লিপি দিতে আসা শতাধিক চাষীদের মধ্যে প্রায় সকলের অভিযোগ, ‘‘রবিবার রাতে শাসক দলের কর্মীদের একাংশ ইচ্ছাকৃত ভাবে বাঁধ কেটে বন্যার সৃষ্টি করে পঞ্চায়েতে বন্যার ত্রানের নামে টাকা হরিলুট করতে চেয়েছিল। কিন্ত নদীতে জল বাঁধ থেকে তিন ফুট নীচে বয়ছিল বলে নদীর জলের চাপ খুব একটা ছিল না। এর ফলে এলাকার মাঠ প্লাবিত হলেও গ্রাম সংলগ্ন এলাকায় জল জমলেও গ্রামের ভিতরে জল ঢুকিনি।’’

ঘটনা হল, বাঁধের সুরক্ষা চাইছেন চাষিরা। তাঁরা অতীত অভিজ্ঞতা থেকে শঙ্কিত। বাঁধ রক্ষা করা তো দূরের কথা যারা নিজেদের স্বার্থ কায়েম করার জন্য বাঁধ কেটেছিল তাদের ব্যপারে উপযুক্ত তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হোক। এছাড়া বিঘে প্রতি তিন হাজার টাকা খরচ করে যে আর্থিক ক্ষতি চাষিরা সম্মুখীন হলেন তাদের জন্য প্রশাসন সাহায্যর হাত বাড়িয়ে দিক। চাষিদের অন্য চাষে উৎসাহিত এবং আর্থিক দিক থেকে সাহায্য করা হোক।

এ দিন চাষিদের স্মারকলিপি প্রদান পর্যন্ত রামপুরহাট ২ ব্লকের বিডিও সৌমণা বন্দ্যোপাধ্যায় অফিসে ছিলেন না। অফিসের কাজে বাইরে বেরিয়ে যাওয়ার পর পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতিকে স্মারকলিপি প্রদান করেন চাষিরা।

রামপুরহাট ২ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি তৃণমূলের দৌলুতন্নেসা নুরি বলেন, ‘‘বাঁধ ভাঙা হয়েছে কি কাটা হয়েছে সেটা তদন্ত সাপেক্ষ বিষয়। তবে বাঁধের যে অংশ ক্ষতিগ্রস্ত সেই অংশ মেরামতির জন্য ইতিমধ্যে সেচ দফতর থেকে পঞ্চায়েত সমিতি থেকে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।’’ ক্ষতিগ্রস্ত চাষিদের সরকারি নির্দেশ অনুযায়ী সাহায্য করা হবে বলে এ দিন আশ্বাস দেন এলাকার পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Farmer’s Margram Madhupur rampurhat
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE