Advertisement
E-Paper

লাফিয়ে বেরিয়ে গেল মাছগুলো

শুধু চাষ জমি বা ঘরবাড়ি ডুবিয়েই খান্ত হয়নি বন্যা। বানের জলে মাছের ডিমপোনা বানানোর একের পর হ্যাচারিও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ভেসে গিয়েছে বহু মাছ ও ডিম। বিড়াই নদীর বানের জেরে ডিমপোনা ব্যবসার গড় হিসেবে পরিচিত বাঁকুড়ার ওন্দা ব্লকের রামসাগরের ব্যবসায়ীরা বড় ধরনের আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছেন।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৪ অগস্ট ২০১৫ ০১:২২
অল্প কিছু মাছ বেঁচেছে। তাই দিয়েই ডিম বানানোর চেষ্টা ব্যবসায়ীদের। সোমবার শুভ্র মিত্রের তোলা ছবি।

অল্প কিছু মাছ বেঁচেছে। তাই দিয়েই ডিম বানানোর চেষ্টা ব্যবসায়ীদের। সোমবার শুভ্র মিত্রের তোলা ছবি।

শুধু চাষ জমি বা ঘরবাড়ি ডুবিয়েই খান্ত হয়নি বন্যা। বানের জলে মাছের ডিমপোনা বানানোর একের পর হ্যাচারিও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ভেসে গিয়েছে বহু মাছ ও ডিম। বিড়াই নদীর বানের জেরে ডিমপোনা ব্যবসার গড় হিসেবে পরিচিত বাঁকুড়ার ওন্দা ব্লকের রামসাগরের ব্যবসায়ীরা বড় ধরনের আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছেন। ডিমপোনা ব্যবসার মরসুমের একেবারে শেষ লগ্নে এসে এই ক্ষতির জেরে মাথায় হাত পড়েছে ব্যবসায়ীদের।

প্রশাসনিক রিপোর্ট অনুযায়ী, নিম্নচাপের জেরে সৃষ্টি হওয়া বন্যায় রামসাগরের ডিমপোনা ব্যবসায় প্রায় সাড়ে ৩৬ লক্ষ টাকার ক্ষতি হয়েছে। প্রায় দু’হাজার কেজি মাদি মাছ হ্যাচারির পুকুর থেকে নদীর জলে ভেসে গিয়েছে। যার বাজার মূল্য প্রায় ১০ লক্ষ টাকা। ৬ হাজার বাটি ডিমপোনাও নষ্ট হয়েছে। যার বাজার মুল্য প্রায় ২৪ লক্ষ টাকা। আড়াই লক্ষ টাকার বৈদ্যুতিন যন্ত্রপাতি নষ্ট হয়েছে। ওন্দার বিডিও শুভঙ্কর ভট্টাচার্য বলেন, “সব মিলিয়ে প্রায় সাড়ে ৩৬ লক্ষ টাকার ক্ষতি হয়েছে ডিমপোনা ব্যবসায়ীদের। এই ক্ষয়ক্ষতির রিপোর্ট জেলায় পাঠানো হয়েছে।’’ জেলার সহ মৎস্য অধিকর্তা অভিজিৎ কুমার সাহা বলেন, “সাড়ে ৩৬ লক্ষ টাকার ক্ষতির প্রাথমিক রিপোর্ট আমরা পেয়েছি। দফতরের আধিকারিকেরা গিয়ে এলাকা খতিয়ে দেখে চূড়ান্ত রিপোর্ট জমা দেবেন।’’

রামসাগরের মাছের ডিম থেকে উৎপাদিত পোনার বাজার দেশ জুড়েই। এখানে মাছের ডিম ফুটিয়ে বাচ্চা তৈরি করে সেই ছোট মাছ প্যাকেট বন্দি করে দেশের নানা প্রান্তে পাঠানো হয়। গোটা দেশের মাছের বাজারের প্রায় ৬০ শতাংশই এই রামসাগর নিয়ন্ত্রণ করে বলে জানাচ্ছেন প্রশাসনিক আধিকারিকেরা। এই এলাকায় ৩২২টি হ্যাচারি রয়েছে বলে মৎস্য দফতর সূত্রের খবর। গোটা রামসাগরের বাসিন্দাদের অর্থনীতির বেশির ভাগটাই এই ডিমপোনা ব্যবসার উপর নির্ভরশীল। মার্চ মাস থেকে আগস্ট মাসের মাঝামাঝি পর্যন্ত মাছের ডিম ফুটিয়ে পোনা তৈরি করার সময়। বছরের এই সময়ের জন্যই মুখিয়ে থাকেন ব্যবসায়ীরা। সামনের দু’সপ্তাহের মধ্যেই এই মরসুম শেষ হয়ে যাবে। ফলে শেষ পর্বে ব্যবসা আরও কিছুটা বাড়াতে দিন রাত এক করে খাটছেন এই কাজের সঙ্গে যুক্ত মানুষ। এরই মাঝে শনিবার জল উপচে এলাকা ভাসিয়ে দেয় বিড়াই নদী। বহু হ্যাচারি চলে গিয়েছিল জলের তলায়। জল একটু নামতেই যা কিছু মাছ বাঁচিয়ে রাখা গিয়েছে, তা দিয়েই ফের ডিম বানানোর কাজ শুরু করেছেন ব্যবসায়ীরা।

কী হয়েছিল শনিবার?

রামসাগরের ডিমপোনা ব্যবসায়ী শিবদাস নন্দী জানান, সে দিন সকাল ছ’টা নাগাদ তিনি ও আরও দু’জন কর্মী হ্যাচারিতেই ছিলেন। বৃষ্টি ক্রমশ বাড়ছিল। বন্যার আশঙ্কায় কী ভাবে হ্যাচারির বাঁধের মাদি মাছ ও চৌবাচ্চায় রাখা ডিমপোনাগুলিকে রক্ষা করা যাবে, তা নিয়েই আলোচনা করছিলেন তাঁরা। হঠাৎই বাইরে শব্দ শুনে বেরিয়ে এসে দেখেন বিড়াইয়ের জল নদী উপচে ঢুকে পড়ছে গ্রামে। বেশ জোরে জলস্রোত ধেয়ে আসছে তাঁর হ্যাচারির দিকে। শিবুনাথবাবুর কথায়, “দৃশ্য দেখে থতমত খেয়ে গিয়েছিলাম প্রথমে। পলকের মধ্যে নদীর জল ঢুকে পড়ল হ্যাচারির মধ্যে। চৌবাচ্চা ও বাঁধ যেন নদীর সঙ্গে মিশে গেল। ডিমপোনাগুলো চৌবাচ্চা থেকে ভেসে বানের তোড়ে মিশে গেল। বাঁধ থেকে লাফাতে লাফাতে বেরিয়ে গেল মাদি মাছগুলোও।’’ দৌড়ে একটি জাল নিয়ে তাঁরা তিন জন বাঁধের সামনে এসে আড়াল করলেন। তবে সাড়ে পাঁচ কুইন্টাল মাছের মধ্যে প্রায় পাঁচ কুইন্টাল মাছই ততক্ষণে বাঁধ থেকে বেরিয়ে গিয়েছে। বাকি মাছ আটকে যায় জালে। বানের জলে পাম্পসেট সহ হ্যাচারির যন্ত্রপাতি খারাপ হয়ে যায়।

শিবনাথবাবুর হ্যাচারির পাশেই নন্দ নন্দী ও মধুসূদন নন্দীর হ্যাচারি। ওই দু’টি হ্যাচারিও একই ভাবে প্লাবিত হয় বিড়াই নদীর জলে। মধুসূদনবাবুর হ্যাচারির এক কর্মী গৌতম দে বলেন, “তখন কাকে বাঁচাবো বুঝে উঠতে পারছি না। ডিমপোনা বাঁচাতে গেলে মাছগুলো বাঁধ থেকে বেরিয়ে যাচ্ছে, মাছ বাঁচাতে গেলে ডিমপোনা ভেসে পালাচ্ছে। সব কিছুই মুহূর্তের মধ্যে ওলটপালট হয়ে গিয়েছিল।’’ বাঁকুড়া জেলা মাছ ডিমপোনা উৎপাদক ওয়েলফেয়ার সমিতির সম্পাদক স্বপন লাহা বলেন, “কম বেশি প্রায় প্রতিটি হ্যাচারিই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বানের জলে। নদীর তীরবর্তী হ্যাচারি গুলি সবচেয়ে বেশি ক্ষতির মুখে পড়েছে। তবে অনেকেই বন্যা হবে বলে আগাম আঁচ পেয়ে কিছুটা গুছিয়ে রাখায় ক্ষতির পরিমাণ কিছুটা কমাতে পেরেছেন।’’

আর শিবনাথবাবু, মধুসূদনবাবুদের কথায়, “ব্যবসার মরসুমের আর বেশি দিন নেই। শেষ মুহূর্তে এই দুর্যোগের মধ্যে পড়ে ভাল করে ব্যবসাই শুরু করতে পারিনি এখনও। লাভ যতটা হবে আশা করেছিলাম, তা আর হবে না।’’

Farmers rain water ramsagar
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy